এনজিওতে চাকরি: ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেবেন কেন?

ডা. দিবালোক সিংহ
ডা. দিবালোক সিংহ  © টিডিসি ফটো

অনেকের ইচ্ছে থাকে মানুষের জন্য কিছু করতে, অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে। আর এ কাজটাই যদি হয় ক্যারিয়ার, তবে তো কথাই নেই। এক্ষেত্রে চাকরির ক্ষেত্র হতে পারে দেশি-বিদেশি এনজিও। কেননা, সবার পক্ষে সরকার চাকরি পাওয়া সম্ভব হয় না। কারও কারও-বা ইচ্ছে থাকে মানুষের পাশে থাকতে, অসহায়দের সাহায্য করে মানব উন্নয়নে ভূমিকা রেখে জীবন অতিবাহিত করতে। সেসব মানুষদের জন্য এনজিওতে চাকরিই যথোপযুক্ত। যেখানে চাকরি করে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশির দু:স্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়,কাজ করা যায়। এনজিওতে চাকরি ও ক্যারিয়ার নিয়ে কথা হয় দেশের সুনামধন্য এনজিওগুলোর একটি ‘দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র ডিএসকে’ এর নির্বাহী পরিচালক ডা. দিবালোক সিংহের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শাহ বিলিয়া জুলফিকার-

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এনজিও মূলত কী? 
দিবালোক সিংহ: এনজিও মানে নন-গভর্নমেন্টাল অর্গানাইজেশন। বেসরকারি অলাভজনক সংগঠনই হলো এনজিও। যারা সমাজ ও মানুষের উন্নয়নে নানামুখী কাজ করে। সংগঠনগুলো বিভিন্ন দাতাদের অর্থায়নের ভিত্তিতে সরকারকে উন্নয়নে সহযোগিতা করা ও উন্নয়নে সক্রিয় অবদান রাখে। তাই কাজটাও বহুমুখী। ক্ষেত্রও ব্যাপক। মাঠ পর্যায়ে ছোট-বড় বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মেশা, তাদের সমস্যার কথা সরকার ও সমাজের প্রতিষ্ঠিত মহলকে জানানো, তাদের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়াসহ এনজিওতে অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে। বাংলাদেশের এনজিওগুলো শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, কর্মসংস্থান ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে কাজ করছে। এই এনজিওতে কাজের ধরনকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হচ্ছে প্রকল্পভিত্তিক, অন্যটি স্থায়ী।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এনজিওতে চাকরির জন্য কী কী যোগ্যতা  প্রয়োজন হয়? 
দিবালোক সিংহ: এনজিওতে ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। অফিস সহকারী থেকে শুরু করে কান্ট্রি ডিরেক্টর পর্যন্ত পদে আছে নানা বৈচিত্র্য ও নানা যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মী। যেকোনো পেশার লোকই এখানে আসতে পারেন সহজে। উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট সাবজেক্টে পড়লে বাড়তি সুবিধা পাওয়া গেলেও অভিজ্ঞদের ক্ষেত্রে সেটাও মুখ্য নয়। বিজ্ঞান, কলা, বাণিজ্য যেকোনো বিভাগ থেকেই এনজিওতে আসা যায়। সামাজিক বিজ্ঞান নিয়ে পড়লে চাকরি পাওয়া কিছুটা অপেক্ষাকৃত সহজ। বিশেষ করে যারা ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিষয়ে পড়ছেন। আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোতে এন্ট্রি লেভেলে ২-৩ বছরের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। তবে শুরুর পদে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিজ্ঞতা চাওয়া হয় না। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এনজিওতে ক্যারিয়ারটা কেমন? 
দিবালোক সিংহ: এনজিও সেক্টর এখন অনেক বড়। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের ধারণাও বদলেছে অনেক। এখন এনজিও মানেই ঋণদাতা সংগঠন বা মাঠকর্মী মনে করেন না অনেকে। এখানে আছে কাজের ভিন্নতা ও নানা ধরনের ক্যারিয়ার। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও শিল্পীরাও এখন এনজিওতে কাজ করতে পারেন।শুরুর ৩-৬ মাস প্রবেশনারি পিরিয়ড থাকে। এজন্য সাধারণত সহকারী অফিসার, সহকারী প্রোগ্রাম অফিসার, সহকারী মনিটরিং অফিসার বা সহযোগী অফিসার পদে নিয়োগ করা হয়। এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে যারা কাজ শুরু করতে চান, তাদের জন্য আছে ফ্যাসিলিটেটর, কমিউনিটি ফ্যাসিলিটেটর, কমিউনিটি টিচার, কমিউনিটি মবিলাইজার ইত্যাদি পদ। এ পদের কাজের মধ্যে রয়েছে— স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ, সভার আয়োজন, জরিপ, এলাকায় ব্যবহারযোগ্য সম্পদ যা জনগণ কাজে লাগাতে পারে সেগুলোর প্রতিবেদন তৈরি, নির্দিষ্ট সময় পরপর প্রকল্পের কর্মকর্তাদের নানাভাবে সাপোর্ট করা।

গ্র্যাজুয়েশন বা স্নাতকোত্তরের পর পরই সাধারণ অফিসার পদমর্যাদায় নিয়োগ হয়। এক্ষেত্রে বিদেশি এনজিওতে এখন ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পাওয়া যায়। পদগুলোর শেষে অফিসার বা অ্যাসোসিয়েট থাকে। পরবর্তী ধাপের পদটি হলো সিনিয়র অফিসার। প্রকল্পভিত্তিক চাকরিতে এর চেয়ে বড় পদটি হলো ম্যানেজার বা প্রজেক্ট ম্যানেজার। এ পদের জন্য সিনিয়র কোনো পদে কমপক্ষে ৫-১০ বছরের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। সদর দফতরে অনেক সময় ডেপুটি বা পরিচালক পদেও আবেদন চাওয়া হয়। তবে পদগুলো আরও বেশি অভিজ্ঞতা সম্পন্নদের জন্য। 
 
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আবেদনের আগে কী প্রয়োজন? 
দিবালোক সিংহ: জব ডেসক্রিপশন ভালোমতো পড়ে দেখুন। এই বর্ণনা অনুযায়ী আপনার অভিজ্ঞতা বা দক্ষতা আছে কিনা দেখুন। সেই অনুযায়ী তৈরি করুন আবেদনপত্র। কী কী কাজে পারদর্শিতা চাওয়া হচ্ছে, ক্রমানুসারে সেভাবে নিজের দক্ষতা তুলে ধরুন আবেদনপত্রে। সিভিতে আপনার ক্যারিয়ার বা শিক্ষাগত যোগ্যতার সংক্ষিপ্ত বিবরণী থাকলেও এক্ষেত্রে আবেদনপত্রেই (কাভার লেটার) জোর দিন। কারণ চাকরিদাতা সবার আগেই দেখতে চাইবেন পদ অনুযায়ী আপনার দক্ষতা আছে কিনা বা বিশেষ কোনো অর্জন আছে কিনা। 

অনেক এনজিও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বেতন উল্লেখ করে দেয়। না করে থাকলে খোঁজখবর নিতে পারেন। আর যদি আবেদনের সঙ্গে প্রত্যাশিত বেতন উল্লেখ করতে বলা হয় তবে তা ভেবেচিন্তে দিন। কারও প্রত্যাশা অনেক বড় হতেই পারে, কিন্তু তা যদি প্রতিষ্ঠানের কাঠামোকে অনেকটা ছাড়িয়ে যায়, সেক্ষেত্রে শিকে না-ও ছিঁড়তে পারে।

এনজিওগুলো সাধারণত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংকের মতো বড় করে পরীক্ষা নেয় না। এখানে সিভি বাছাই করে আগে প্রাথমিকভাবে একটি শর্ট লিস্ট বা সংক্ষিপ্ত তালিকা করে নেওয়া হয়। আবেদনের সময়সীমা পার হওয়ার মাসখানেকের মধ্যে শর্ট লিস্টেড হয়েছে কিনা তা জানতে পারবেন। ক্ষেত্র বিশেষে তা তিন-চার মাসও গড়াতে পারে। এরপর দিতে হতে পারে লিখিত পরীক্ষা। তাতে উত্তীর্ণ হলে ডাক পড়বে মৌখিকের জন্য। এক্ষেত্রে কাজ সংশ্লিষ্ট বিষয়েই নিয়োগকর্তারা জানতে চাইবেন। এ ধরনের ভাইভাকে বলা হয় কমপিট্যান্সি বেইজড ভাইভা। অর্থাৎ সরাসরি কাজ বা কাজ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের বিষয়েই হবে আলাপ। এনজিওর ধারণা কত সালে আবিষ্কার হয়, এ ধরনের প্রশ্নের মুখে আপনাকে পড়তে হবে না। আবার এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর না জানলেও ক্ষতি নেই।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বেতন কাঠামো কেমন? 
দিবালোক সিংহ: বেতন কাঠামো নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা ও দাতার ওপর। আন্তর্জাতিক এনজিওগুলো দেশি এনজিওগুলোর তুলনায় বেশি বেতন দিয়ে থাকে। এমনকি অফিসের সাপোর্ট স্টাফ পদে ৩৫ হাজার টাকাও দেয় কোনো প্রতিষ্ঠান। তবে সহকারী পদগুলোতে কাজ করার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নিজেকে উন্নত করার সুযোগ থাকে। সিনিয়র পদে বিদেশি এনজিওগুলোতে লাখ টাকার মতো বেতন পাওয়া যায়। প্রকল্প ম্যানেজারদের বেতন দেড় লাখ টাকার বেশিও হতে পারে। কাজের ব্যাপ্তি, ভাষার দক্ষতা ও দাতাসংস্থার ওপরও অনেক সময় দেশি এনজিওতেও মোটা অঙ্কের বেতন পাওয়া যায়। এনজিওতে পদোন্নতি ‘সময় ভিত্তিক’ না হয়ে ‘পারফর্মেন্স ভিত্তিক’ হয়ে থাকে। তাই শুরু থেকে নিজের পারফরম্যান্সের প্যারামিটারগুলো (শর্ত) জেনে নিন। সেই অনুযায়ী কাজ, অর্জনগুলো টুকে রাখতে ডায়রি রাখুন। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সুযোগ-সুবিধা কেমন?  
দিবালোক সিংহ: ভালো বেতনের পাশাপাশি এনজিওতে চিকিৎসা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ছুটি ও বিদেশ ভ্রমণের সুযোগও রয়েছে। মাঠপর্যায়ে কাজের জন্য রয়েছে বিশেষ ভাতা। বেশির ভাগ এনজিওতে এখন সপ্তাহে দুদিন ছুটি পাওয়া যায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি বাইরে প্রশিক্ষণের সুযোগও পাওয়া যায়। এনজিওতে নারীদের জন্যও বিশেষ সুযোগ-সুবিধা ও কিছু পদে অগ্রাধিকার রয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence