৩৮ বছরেও কোনো নজরুল গবেষণা প্রতিষ্ঠান পায়নি ‘নজরুল পুরস্কার’

কবি নজরুল ইনস্টিটিউট ও নজরুল পুরস্কার
কবি নজরুল ইনস্টিটিউট ও নজরুল পুরস্কার  © ফাইল ফটো

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্য, সংগীত ও অন্যান্য ক্ষেত্রে গবেষণা, প্রকাশনা, প্রচারণা, সংকলন, সংরক্ষণ, স্বীকৃতিসহ নানাবিধ কাজের জন্য ঢাকার ধানমন্ডির দপ্তর কবি ভবনে ১৯৮৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘কবি নজরুল ইনস্টিটিউট’। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নজরুল-সংগীত, সাহিত্য ও অন্যান্য ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পদক ও পুরস্কার প্রদান করে আসছে। ১৯৮৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৫১ জন গুণী ব্যক্তিত্বকে এ পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছে। শুরুতে এর নাম ছিলো নজরুল-স্মৃতি পুরস্কার, ১৯৯৮ সাল থেকে নজরুল পদক ও  ২০০৭ সাল থেকে ‘নজরুল পুরস্কার’ নামে এ পদক প্রদান করা হয়ে আসছে।

সর্বশেষ গত ৩০ মে প্রদান করা হয় ২০২১ ও ২০২২ সালের পুরস্কার। ২০২১ সালে নজরুল গবেষণায় ড. কাজী মোজাম্মেল হোসেন, নজরুল সংগীতে শিল্পী ইয়াসমিন মুশতারী এবং ২০২২ সালে নজরুল গবেষণায় মো. ইদরিস আলী এবং নজরুল সংগীতে শিল্পী সালাউদ্দিন আহমেদকে নজরুল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

নজরুল সাহিত্য ও নজরুল সংগীত নিয়ে নজরুল একাডেমি, বাংলা একাডেমি কিংবা ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব নজরুল স্টাডিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরুল গবেষণা কেন্দ্র ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরুল গবেষণা কেন্দ্র কাজ করে যাচ্ছে। এমনকি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শতভাগ শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বাধ্যতামূলক নজরুলের ওপর একটি কোর্স।

সর্বশেষ নীতিমালায় পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যক্তির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানও সংযুক্ত করা হয়েছে। নজরুল সাহিত্য ও নজরুল সংগীতের ক্ষেত্রে অনন্যসাধারণ অবদানের জন্য বছরে একবার পৃথক দুই ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে প্রতি বছর নজরুল জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে 'নজরুল পুরস্কার' প্রদান করার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে পুরস্কারের নীতিমালায়।

নজরুলকে নিয়ে গবেষণা কার্যক্রমে পরিচালনা করে এমন প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত না করে শুধুমাত্র ব্যক্তিদের পুরস্কৃত করার অভিযোগ রয়েছে ইনস্টিটিউটটির বিরুদ্ধে। এক্ষেত্রে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এএফএম হায়াতুল্লাহ প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতার উল্লেখ করেন। তিনি বলেছেন, প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনেকেই কাজ করছেন, এটা সত্য। তবে তাদের প্রস্তাবনাগুলো আসতে হবে। আপনি নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন, কিন্তু অ্যাপ্লাই না করলে পাবেন না।

প্রবীণ শিক্ষাবিদ যতীন সরকার বলেন, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার। এরকমটি কোনোভাবেই হওয়া উচিত নয়।

তথ্যমতে, ২০০৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ‘কবি নজরুল ইনস্টিটিউট আইন ২০১৮’ নামে একটি বিল সংসদে পাশ হয়। আদালতের নির্দেশ এবং ওই অধ্যাদেশটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ আইনে রূপান্তরের লক্ষ্যে নতুন করে বিলটি এনে পাস করা হয়। এর আগে এটি ১৯৮৪ সালের সামরিক শাসক এরশাদের আমলে একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে পরিচালিত হতো।

১৯৮৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৫১ জন গুণী ব্যক্তিত্বকে এ পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছে। শুরুতে এর নাম ছিলো নজরুল-স্মৃতি পুরস্কার, ১৯৯৮ সাল থেকে নজরুল পদক ও  ২০০৭ সাল থেকে ‘নজরুল পুরস্কার’ নামে এ পদক প্রদান করা হয়ে আসছে।

২০০৮ সালে পাস হওয়া আইনে বাছাই কমিটির সুপারিশ ও বোর্ডের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রতিবছর ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠানকে নজরুল পুরস্কার প্রদানের বিধান রাখা হয়েছে। নজরুল সংগীত, সাহিত্য ও অন্যান্য ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ এ পুরস্কার দেওয়া হবে। এছাড়া নজরুল গবেষণাকে উৎসাহিত করতে পদক্ষেপের বিধান রয়েছে।

জানা যায়, নজরুল সাহিত্য ও নজরুল সংগীত নিয়ে নজরুল একাডেমি, বাংলা একাডেমি কিংবা ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব নজরুল স্টাডিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরুল গবেষণা কেন্দ্র ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরুল গবেষণা কেন্দ্র কাজ করে যাচ্ছে। এমনকি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শতভাগ শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বাধ্যতামূলক নজরুলের ওপর একটি কোর্স। আর ২০১৪ সালে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা হওয়া ইনস্টিটিউটটি নজরুলের স্মৃতি রক্ষা, তাঁর জীবন, সাহিত্য, সংগীত এবং সামগ্রিক অবদান সম্পর্কে পাঠদান, গবেষণা পরিচালনা, রচনাবলি সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রকাশনা ও প্রচারে কাজ করে যাচ্ছে। যেখানে সর্বশেষ তিন অর্থবছরে গবেষণা প্রকল্পের জন্য অনুদান প্রদান করেছে ৮২টি। ইতিমধ্যে দশটি গ্রন্থ ও জার্নাল প্রকাশ করেছে। 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আনোয়ার সাঈদ জানান, ব্যক্তির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানকেও স্বীকৃতি প্রদান করলে, সেক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যে নজরুল চর্চা হচ্ছে, সে সম্পর্কে দেশের মানুষ বিশদভাবে জানতে পারবে। আমাদের যে সমস্ত রাষ্ট্রীয় পদক রয়েছে, একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, সেগুলোতেও প্রতিষ্ঠানকে বিবেচনাধীন ধরা হয়। আমি মনে করি ব্যক্তি পর্যায়ের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক নজরুল চর্চা প্রকাশ্যে আনা উচিত।

নতুন নীতিমালায় প্রতিষ্ঠান সংযুক্ত হলেও প্রতিষ্ঠান না পাওয়ার বিষয়ে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমেদ জানান, এটাতো সম্পূর্ণ ট্রাস্টি বোর্ডের কাজ। নীতিমালা অনুসারে ট্রাস্টি বোর্ডই যাবতীয় কার্যাদি করে, এখানে আমাদের মন্ত্রণালয়ের ইনভলমেন্ট নাই, আমাদের শুধু জানিয়ে দেয়।

প্রতিষ্ঠানের পুরস্কার প্রাপ্তি গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, অবশ্যই প্রতিষ্ঠানেরও নজরুল পুরস্কার পাওয়া উচিত, ব্যক্তিও পাওয়া উচিত। প্রতিষ্ঠান পেলে পদকের গুরুত্বও বাড়ে।


সর্বশেষ সংবাদ