পরের দিনের সিরিয়াল পেতে আগের রাতে লোকজন কাঁথা-বালিশ নিয়ে আসেন: বিএমইউ ভিসি

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহিনুল আলম আজ সোমবার এক অনুষ্ঠানে এই চিত্র তুলে ধরেছেন।
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহিনুল আলম আজ সোমবার এক অনুষ্ঠানে এই চিত্র তুলে ধরেছেন।   © সংগৃহীত

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) ভিসি অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহিনুল আলম তার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেছেন, এক শুক্রবার রাত ১০টায় এসে (সাবেক বিএসএমএমইউ হাসপাতালে) দেখলাম, নিচে লোকজন কাঁথা-বালিশ নিয়ে ঘুমাচ্ছে। পরে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম, তারা পরদিনের রেডিওলজির সিরিয়াল পাওয়ার জন্য আগে থেকে এসে ঘুমাচ্ছে। চাহিদা কোথায় গেছে বোঝেন!

আজ সোমবার (২১ এপ্রিল) রাজধানীর শাহবাগস্থ বিশ্ববিদ্যালয়টির মিলন হলে ‘ফ্রম দ্য ক্যাথ ল্যাব টু দ্য মেমো স্যুট: এমপাওয়ারিং সেইফার, স্মার্টার পেশেন্ট কেয়ার’ শিরোনামে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এই অনুষ্ঠানে আয়োজন করে বাংলাদেশ সোসাইটি অব রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং (বিএসআরআই)। অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা রেডিয়েশনের ঝুঁকি, স্তন ক্যানসারসহ নানাবিধ জটিলতা ও টিউমার শনাক্তকরণ বিষয়ক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের আওতায় এক্স–রে, সিটি স্ক্যান, আলট্রাসনোগ্রাম, এমআরআইসহ বিভিন্ন পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা হয়।

ভিসি শাহিনুল আলম আরও বলেন, এই সিরিয়াল ব্যবস্থার অপসারণ করতে হবে। ওয়ার্ক লোড (কাজের চাপ) কমাতে হবে ও কাজে পারফেকশন (কাজ নিখুঁত) থাকতে হবে। জনগণের পক্ষে কাজ করার জন্য সুপারিশ তৈরি করা হবে।

ভিসি আরও বলেন, ইমেজিং ও রেডিওলজিতে এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) সংযুক্ত করার সময় এসেছে। এর জন্য আপনাদের প্রস্তত থাকতে হবে। এ কাজে আপনাদের নেতৃত্ব দিতে হবে। এখন জেনারালাইজ (সাধারণ) পরীক্ষা করা যাবে না, সুপার সিলেকটিভ (বাছাই করা সুনির্দিষ্ট) পরীক্ষা করতে হবে। এখনকার প্রশাসনের অবস্থা ভালো। রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের জন্য সবচেয়ে ভালো জিনিস কেনা হবে।

অনুষ্ঠানে এভারকেয়ার হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) সৈয়দ জহেরুল আলম অনুষ্ঠানে টিউমার, লিভার ক্যানসার, লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট এবং ট্রান্সআর্টেরিয়াল কেমোইম্বোলাইজেশন (টিএসিই) চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি জানান, এখন এ চিকিৎসা বাংলাদেশে সফলভাবে হচ্ছে।

রেডিয়েশনের সম্ভাব্য ঝুঁকি ও এর প্রতিকার নিয়ে বক্তব্য দেন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ), ঢাকার রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের বিশেষজ্ঞ লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মামুন-উর-রশীদ। তিনি জানান, দেশে পরীক্ষা করার জন্য রোগী ও রেডিওলজিস্ট–রেডিওগ্রাফারদের যে ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন তা মানা হয় না। এমনকি পরীক্ষা কক্ষের যে উচ্চতা ও প্রশস্ততা থাকা প্রয়োজন, যন্ত্র থেকে যত দূরে থাকা প্রয়োজন তাও মানা হয় না।

তিনি আরও বলেন, অনেক সময় রোগীর সঙ্গে তাঁর স্বজনকেও এক্স–রে কক্ষে রাখা হয়। এভাবে রোগী ও তাঁর স্বজনেরা যেভাবে রেডিয়েশনের ঝুঁকিতে পড়ছেন, সেভাবে যিনি পরীক্ষা করেন তিনিও ঝুঁকিতে পড়ছেন। টিএলডি (বিকিরণের শক্তি শুষে নেয়) ব্যাজ পরার মতো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় অনেক রেডিওলজিস্ট ও রেডিওগ্রাফার ক্যানসার আক্রান্ত হচ্ছেন, মারাও যাচ্ছেন। ৮ থেকে ১৫ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভধারণ অবস্থায় এক্স–রে কোনো অবস্থাতেই করা উচিত নয় বলে তিনি জানান।

স্তন ক্যানসারসহ স্তনের বিভিন্ন রোগ শনাক্তকরণ বিষয়ে আলোচনা করেন পপুলার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শারমিন আখতার রূপা। তিনি বলেন, স্তন ক্যানসার শনাক্তে যুক্তরাষ্ট্রে ৪০ বছর বয়স থেকে মেমোগ্রাফি করা হয়। তবে আমাদের দেশের গবেষণা তথ্যে দেখা গেছে, এখানে ৩৬ থেকে ৪০ বছর বয়সী নারীদের স্তন ক্যানসারে আক্রান্তের হার বেশি। তাই দেশে ৩০ বছর বয়স থেকে মেমোগ্রাফি শুরু করা উচিত। আগেভাগে শনাক্ত হলে ক্যানসার থেকে সুস্থ হওয়ার হার বাড়ে। তিনি মেমোগ্রাফি, টমোগ্রাফি ও আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ শনাক্ত করার সুবিধা–অসুবিধা দুটোই তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এম এ বি সিদ্দিক। আরও উপস্থিত ছিলেন আয়োজক সংগঠন বিএসআরআইয়ের সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) সৈয়দ আওসাফ আলী, মহাসচিব অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান ও সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক খলিলুর রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিএসআরআইয়ের সদস্য অধ্যাপক সাহারা হক জেরিন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এম এ বি সিদ্দিক। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সোসাইটি অব রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং (বিএসআরআই)-এর সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সৈয়দ আওসাফ আলী, মহাসচিব অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান এবং সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক খলিলুর রহমান। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন বিএসআরআই সদস্য অধ্যাপক সাহারা হক জেরিন।


সর্বশেষ সংবাদ