হলুদের বিজ্ঞানভিত্তিক গুণাগুণ: হলুদ শুধু মসলা নয়, একটি সম্ভাবনাময় ঔষধ
- শেরপুর প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৫, ০৯:৫৫ AM , আপডেট: ১৩ জুন ২০২৫, ০৮:২৯ PM

হলুদ—আমাদের রান্নাঘরের এক অতি পরিচিত উপাদান। কিন্তু শুধু রান্নার মসলা হিসেবে নয়, হাজার বছর ধরে এটি ভেষজ চিকিৎসাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। আয়ুর্বেদ, ইউনানি ও প্রাচীন চীনা চিকিৎসাব্যবস্থায় হলুদের ব্যবহার ইতিহাসে সুপ্রতিষ্ঠিত। আধুনিক বিজ্ঞানেও পিছিয়ে নেই। বহু গবেষণায় উঠে এসেছে এর অসাধারণ স্বাস্থ্য উপকারিতা, যার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি শক্তিশালী যৌগ—কারকিউমিন।
কারকিউমিন: হলুদের প্রাণ
কারকিউমিন হলুদের সেই সক্রিয় উপাদান, যা শুধু হলুদের রঙ নয়, এর ভেষজ শক্তির প্রধান উৎস। এটি একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি (প্রদাহ প্রতিরোধী) উপাদান। গবেষণা বলছে, কারকিউমিন শরীরের কোষ ক্ষয় রোধ করে, প্রদাহ কমায় এবং নানা রোগের বিরুদ্ধে শরীরকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
গবেষণায় কী বলছে?
প্রদাহ কমাতে সহায়ক
২০১৭ সালে জার্নাল অব মেডিকেল ফুড-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, কারকিউমিন শরীরের প্রদাহজনিত সংকেতপ্রবাহ (inflammatory signaling pathways) কমাতে সক্ষম। এটি আর্থরাইটিস বা অন্যান্য প্রদাহজনিত সমস্যার উপশমে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কার্যকর
কারকিউমিন শরীর থেকে মুক্ত র্যাডিক্যাল দূর করে, যা কোষের বার্ধক্য ও ক্ষয় রোধে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি আলঝেইমার ও অন্যান্য স্নায়ুবিক রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
ক্যানসার প্রতিরোধে সম্ভাবনা
২০১৮ সালে ক্যান্সার লেটারস জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, কারকিউমিন ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে পারে এবং কোষ-মৃত্যু (apoptosis) ঘটাতেও সাহায্য করতে পারে। এটি স্তন, কোলন, প্রোস্টেট ও ফুসফুসের ক্যানসার প্রতিরোধে বিশেষভাবে কার্যকর হতে পারে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন জার্নালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত কারকিউমিন সেবনে বাইপাস সার্জারির পর হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতা উন্নত হয়। এটি হৃদরোগ প্রতিরোধেও সহায়ক হতে পারে।
হজম ও লিভারের যত্নে
হলুদ হজমে সহায়তা করে এবং লিভার এনজাইম সক্রিয় করে, যা চর্বি হজম ও শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ নির্গমনে সাহায্য করে। জার্মান কমিশন ই হলুদকে প্রাকৃতিক হজম সহায়ক ভেষজ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
ব্যবহারবিধি ও সতর্কতা:
সাধারণত হলুদ বা কারকিউমিন নিরাপদ, তবে অতিরিক্ত সেবনে পেটে গ্যাস, ডায়রিয়া কিংবা হালকা মাথাব্যথা হতে পারে। বিশেষ করে গর্ভবতী নারী, রক্তপাতজনিত সমস্যা থাকা ব্যক্তি বা রক্ত পাতলা করার ওষুধ সেবনকারীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
হলুদ কেবল একটি রান্নার উপাদান নয়—এটি প্রকৃতির একটি অসাধারণ উপহার। গবেষণা বলছে, এর ভেতরে রয়েছে এমন কিছু গুণ যা একে ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় ওষুধে পরিণত করতে পারে। যদিও আরও গবেষণা প্রয়োজন এর চিকিৎসাক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার নিশ্চিত করতে, তবুও এখনই বলা যায়—প্রতিদিনের জীবনে পরিমিত হলুদের ব্যবহার শরীর ও মনের সুস্থতার জন্য এক বড় আশীর্বাদ হতে পারে।
লেখক
আতিকুর রহমান
প্রভাষক (উদ্ভিদবিদ্যা)
শেরপুর সরকারি কলেজ।