বাজার চাহিদা সত্ত্বেও গুরুত্বহীন সরকারি কলেজগুলো, তাই কমছে শিক্ষার্থী

টিডিসি সম্পাদিত
টিডিসি সম্পাদিত

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) অধিভুক্ত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোয় এবারের ভর্তি পরীক্ষাকে সামনে রেখে কলেজগুলোর শিক্ষার মান, শিক্ষক সংকট এবং তা নিরসনে সরকারের মনোযোগের অভাবের মতো বিষয়গুলো আবারও সামনে উঠে এসেছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রয়োজনীয় শিক্ষক এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে কলেজগুলো আশানুরূপ শিক্ষার্থী আকর্ষণ করতে পারছে না।

নোয়াখালী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘আমরা যৌক্তিক ৫ দফা দাবি জানালেও বস্ত্র অধিদপ্তর তা বাস্তবায়ন করেনি। আমাদের নিয়োগ বিধি নিয়ে প্রশ্ন তোলার কথা না, কিন্তু যখন দেখলাম, গত প্রায় ১০ বছর ধরে শিক্ষক আর শিক্ষার মান তলানিতে, তখন সবাই গোড়ায় গলদ খুঁজে পেলাম। আমরা উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন থাকতে এ নিয়ে অনেক দূর কাজ করেছিলাম। কিন্তু বর্তমান উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন দায়িত্ব গ্রহণের পর আমাদের সমস্যাগুলো দেখেননি এবং কাজও করেননি।’

কিবরিয়া আক্ষেপ করে বলেন, ‘বর্তমান কলেজগুলোয় ব্যাপক শিক্ষক সংকট থাকা সত্ত্বেও শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে উল্টো মাদারীপুর এবং সিলেটে নতুন কলেজ খোলা হয়েছে। বস্ত্র অধিদপ্তর শুধু আশ্বাস দিয়ে যায়। তারা যেহেতু সমস্যা সমাধান করতে পারছে না, সে ক্ষেত্রে সরকারি টেক্সটাইল কলেজগুলোকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন করা হোক। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থেকে আমাদের শিক্ষার মান আজ তলানিতে।’

বস্ত্র অধিদপ্তর হতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি আবেদন করেছে ৪ হাজার ৭০০ জন। বিগত ২০২৩-২৪ ও ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে যা ছিল যথাক্রমে ৪ হাজার ৬৬৬ জন ও ৯ হাজার ৩ জন।

রংপুর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থী মাহমুদ আল হাসান শিশির বলেন, ‘ভুলে ভরা ২০১৪ সালের নিয়োগ বিধির কারণে নতুন কলেজ, বিশেষ করে রংপুর, গোপালগঞ্জ, জামালপুরে একজন করেও স্থায়ী শিক্ষক নেই। এভাবে চলছে বছরের পর বছর। আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করেও কোনো ফলাফল দেখতে পাইনি। উপদেষ্টা স্যারের সঙ্গে সাক্ষাতের পরও তিনি সমস্যার সমাধান করেননি। তাই চরম শিক্ষক সংকটে নামমাত্র শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। ফলে এই কলেজগুলোতে পড়া হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।’

সংকট সত্ত্বেও নতুন দুটি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বস্ত্র অধিদপ্তরের শিক্ষা পরিচালক (উপসচিব) হোসনে আরা বেগম বলেন, ‘নতুন দুই কলেজ করার বিষয়ে ওপর থেকে নির্দেশ আছে। আর আমাদের নতুন শিক্ষক আসছেন। আজকেও তিনজন সহকারী অধ্যাপক যোগ দিয়েছেন। আরও ১১ জন শিক্ষক যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় আছেন। এটা একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা পিএসসিতে রিকুইজিশন দিলে, তারা শিক্ষক নিয়োগ দেয়।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের এক শিক্ষকের কাছে শিক্ষক সংকট নিরসনে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন কলেজগুলোতে বর্তমানে কোনো শিক্ষক নেই। পুরোনো কলেজগুলো থেকে ধার করে কিছু শিক্ষক নিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। আর অনেক শিক্ষক যারা চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন, তাদের পরিবর্তে নতুন করে দু-একজন শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে। এতে বর্তমান পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না।

এ বছরের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে এই বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের এবং অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করছে বলে ধারণা অনেকের। শিক্ষার্থীরা মনে করেন, টেক্সটাইল শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই শিল্পের জন্য দক্ষ প্রকৌশলী তৈরি করতে হলে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোর দিকে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত। শিক্ষক সংকট সমাধান এবং মান উন্নয়নে সরকারের যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে এই কলেজগুলোকে শিক্ষার্থীদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা সম্ভব।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence