জুলাই গণঅভূত্থান কেন হয়েছিল, মাধ্যমিকের বইয়ে ১১ কারণ

২০২৬ শিক্ষাবর্ষের অষ্টম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় পাঠ্যবই
২০২৬ শিক্ষাবর্ষের অষ্টম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় পাঠ্যবই  © টিডিসি

জানুয়ারি মাসের শুরুতেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের নতুন বই পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। নতুন বছরের আগেই বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তকের সফটকপি অনলাইন সংস্করণ পড়তে পারবেন শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে অষ্টম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে যুক্ত করা হয়েছে নব্বইয়ের গণঅভ্যূত্থান ও জুলাই গণঅভ্যূত্থানের ইতিহাস।

জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর ব্যাপক পরিবর্তন-পরিমার্জন করা হয়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়ে। ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিকের বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়ের পাঠ্যবইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ে ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক’ শিরোনামে একটি অধ্যায় যুক্ত করা হয়েছে। তৃতীয় অধ্যায়ের পাঠ-১২তে বাংলাদেশে ‘গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় গণঅভ্যূত্থান’ নামের পাঠে জুলাই গণঅভ্যূত্থানের ইতিহাস তুলে ধরা হয়। পাঠটিতে বর্তমান সময়ে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থাকাকালীন সময়ে নানা বৈষম্য তুলে ধরা হয়। জুলাই গণঅভ্যূত্থানের কেন হয়েছিল, সেই কারণগুলো পাঠটিতে লিখা হয়েছে। 

জুলাই গণঅভ্যূত্থানের প্রধান কারণগুলো হচ্ছে—

ক) সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটাপ্রথা;

খ) দীর্ঘমেয়াদি ফ্যাসিবাদী শাসন ও নিপীড়ন;

গ) আন্দোলনে নির্বিচার হত্যাকাণ্ড ও গণহত্যা;

ঘ) বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অকার্যকারিতা;

ঙ) সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য;

চ) জনগণের ভোটাধিকার হরণ;

ছ) সুশাসন ও গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি;

জ) বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড;

ঝ) সরকারি বাহিনী কর্তৃক গুম-খুন-নিপীড়ন;

ঞ) ব্যাপক লুটপাট ও অর্থপাচার এবং

ট) দুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা।

আরও পড়ুন : নিম্নমানের বই ছাপিয়ে ১৯ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দুই ভাইয়ের প্রেস কর্ণফুলী-অগ্রণী

বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ের পাঠ ১২-এর ‘গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় গণঅভ্যূত্থান’ শিরোনামে ‘জুলাই গণঅভ্যূত্থান’ ইতিহাসে বলা হয়েছে,  ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত অভ্যুত্থান ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ নামে পরিচিত। সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে ৫ জুন ২০২৪ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের ছাত্র-ছাত্রীরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন শুরু করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ১৫ জুলাই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করে। ছাত্রলীগের হামলায় নারী শিক্ষার্থীসহ অনেকে আহত হয়।

নারী শিক্ষার্থীদের ওপর এমন পাশবিক হামলা সারাদেশের মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে। পরদিন ১৬ জুলাই সারাদেশে আন্দোলনকারীদের ওপর আবারো ছাত্রলীগ-যুবলীগের সশস্ত্র কর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হামলা চালায়। এদিন রংপুরে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ, চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের হামলায় ওয়াসিম আকরামসহ সারাদেশে ছয়জন শহিদ হন। এরপর আন্দোলন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে; বদলে যায় আন্দোলনের গতিপথ। সারাদেশে শিক্ষার্থী, তরুণ-তরুণী, নারী-পুরুষ ও সাধারণ মানুষ একত্র হয়ে নয় দফা দাবিতে রাজপথে নামে। সরকার-বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহ আন্দোলনে যোগ দেয়।

আরও পড়ুন : নতুন পাঠ্যবই থেকে বাদ ‘বঙ্গবন্ধু’, যুক্ত শেখ মুজিবুর রহমান

শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীগণও আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। ছাত্র-জনতার অহিংস এই আন্দোলন দমাতে প্রহসনের ভোটে নির্বাচিত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহিংস পথ অবলম্বন করেন। ফলে নয় দফা পরিণত হয় একদফার আন্দোলনে। এরপর ৩ আগস্ট ২০২৪ তারিখে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সারাদেশের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে ছড়িয়ে পড়া এই আন্দোলনের বিশেষ দিক ছিল ব্যাপকহারে নারী শিক্ষার্থী, মাদ্রাসা ছাত্র, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও সাধারণ শ্রমজীবী জনতার অংশগ্রহণ। এ গণআন্দোলন দমনে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান।

এ অধ্যায়টির সর্বশেষ অংশে ‘শেখ হাসিনার পতন ও ফ্যাসিবাদের অবসান’ শিরোনামে আলাদা একটি প্যারা যুক্ত করা হয়।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!