সিলেটের তিন কলেজ

সিনিয়র অধ্যাপকের এসিআর লিখবেন জুনিয়র অধ্যাপক

শিক্ষা মন্ত্রণালয়
শিক্ষা মন্ত্রণালয়  © লোগো

সরকারি কলেজের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদায়ন নিয়ে তুঘলকি এক কাণ্ড ঘটিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে তিন ব্যাচের কর্মকর্তাদের টপকিয়ে একজন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাকে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজের উপাধ্যক্ষ পদে পদায়ন দেয়া হয়েছে। ফলে সিনিয়র অধ্যাপকদের এসিআরে জুনিয়র ওই অধ্যাপক মন্তব্য লিখবেন—এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি উপাধ্যক্ষ পদে পদায়ন পাওয়া ওই কর্মকর্তা নীতিমালা অনুযায়ী আবেদন না করেই পদায়ন পেয়েছেন বলে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। এ নিয়ে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে সিলেট অঞ্চলে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে। 

শিক্ষা ক্যাডারের সিনিয়র অধ্যাপকরা বলছেন, অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে ওই কর্মকর্তাকে বিতর্কিত এ পদায়ন দেয়ার পেছনে তার রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রাধান্য পেয়েছে। 

এদিকে মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ ও মৌলভীবাজার সরকারি মহিলা কলেজেও একইভাবে সিনিয়র কর্মকর্তাদের বহাল রেখে জুনিয়র কর্মকর্তাকে অধ্যক্ষ পদে পদায়ন দেয়া হয়েছে। যদিও এসব পদায়নের মধ্য দিয়ে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের মাঝে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তি অনেকটাই নষ্ট হয়েছে। 

জানা গেছে, গত ৮ অক্টোবর সিলেটের এমসি কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন পেয়েছেন অধ্যাপক মো. আকমল হোসেন। তিনি বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ১৮তম ব্যাচের একজন কর্মকর্তা। গত ৫ আগস্ট সরকারের পটপরিবর্তনের পর গত ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছিলেন। অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাওয়ার ১৫ দিনের মাথায় তিনি উপাধ্যক্ষ পদে পদায়ন পেয়েছিলেন। যেটিকে বিতর্কিত বলে আখ্যায়িত করেছেন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা। 

দুই ধাপের ক্ষেত্রেই শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা আকমল হোসেনের যোগ্যতা ছিল না। কারণ ১৮ ব্যাচের এ কর্মকর্তা গত ২৩ সেপ্টেম্বর অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছিলেন। সরকারি কলেজের শিক্ষক বদলি ও পদায়ন নীতিমালা-২০২০ অনুসারে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদায়নে অনলাইন ছাড়া অন্য কোন মাধ্যমে পাঠানো বদলি বা পদায়নের আদেশ সুযোগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেই। তবে নিজেদের করা নীতিমালা ভেঙে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ আকমল হোসেনকে অনলাইন আবেদন ছাড়াই পদায়ন দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সর্বশেষ গত ২৮ থেকে ৩০ আগস্ট সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ পদে বদলি-পদায়নের আবেদন নেয়া হয়। এ ধাপে আবেদন করার সুযোগ পেয়েছিলেন শুধু অধ্যাপক পদ মর্যাদার কর্মকর্তারা। এর আগে ২০২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদে বদলি পদায়নের আবেদন অনলাইনে গ্রহণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেসময় ১৪ থেকে ১৬ ব্যাচের অধ্যাপকরা আবেদন করার সুযোগ পান। তবে এ দুই ধাপের ক্ষেত্রেই শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা আকমল হোসেনের যোগ্যতা ছিল না। কারণ ১৮ ব্যাচের এ কর্মকর্তা গত ২৩ সেপ্টেম্বর অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছিলেন। সরকারি কলেজের শিক্ষক বদলি ও পদায়ন নীতিমালা-২০২০ অনুসারে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদায়নে অনলাইন ছাড়া অন্য কোন মাধ্যমে পাঠানো বদলি বা পদায়নের আদেশ সুযোগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেই। তবে নিজেদের করা নীতিমালা ভেঙে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ আকমল হোসেনকে অনলাইন আবেদন ছাড়াই পদায়ন দিয়েছে।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে ৯২২ জন কর্মকর্তাকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়ার আদেশের শর্তে বলা ছিল, আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে কোন কর্মকর্তা নিজ প্রতিষ্ঠানের উচ্চতর পদে (প্রশাসনিক পদ)বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে পদায়নের জন্য স্বতঃসিদ্ধভাবে অগ্রাধিকার প্রাপ্ত বলে বিবেচিত হবে না।  

তবে গত ২৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে ৯২২ জন কর্মকর্তাকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়ার আদেশের শর্তে বলা ছিল, আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে কোন কর্মকর্তা নিজ প্রতিষ্ঠানের উচ্চতর পদে (প্রশাসনিক পদ)বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে পদায়নের জন্য স্বতঃসিদ্ধভাবে অগ্রাধিকার প্রাপ্ত বলে বিবেচিত হবে না।  

এদিকে সিলেটের এমসি কলেজে ১৮তম ব্যাচের অধ্যাপক আকমল হোসেনকে পদায়নের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ আছে। এমসি কলেজে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ১৪ ব্যাচ, ১৬ ব্যাচ ও ১৭ ব্যাচের অধ্যাপক কর্মরত আছেন। ওই কলেজের একজন সিনিয়র অধ্যাপক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে জুনিয়র অধ্যাপক সিনিয়র অধ্যাপকের এসিআর মন্তব্য লিখবেন। যা সিনিয়র অধ্যাপকদের আত্মমর্যাদার প্রশ্ন তৈরি করেছে। 

আরও পড়ুন : আরও ১২ সরকারি কলেজে নতুন অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ

সিলেটের এমসি কলেজে ১৮তম ব্যাচের অধ্যাপক আকমল হোসেনকে পদায়নের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ আছে। এমসি কলেজে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ১৪ ব্যাচ, ১৬ ব্যাচ ও ১৭ ব্যাচের অধ্যাপক কর্মরত আছেন। ওই কলেজের একজন সিনিয়র অধ্যাপক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে জুনিয়র অধ্যাপক সিনিয়র অধ্যাপকের এসিআর মন্তব্য লিখবেন। যা সিনিয়র অধ্যাপকদের আত্মমর্যাদার প্রশ্ন তৈরি করেছে। 
 

এদিকে মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ১৪ ব্যাচের অধ্যাপক কর্মরত আছেন। তা সত্ত্বেও গত ৮ অক্টোবর ১৬ ব্যাচের কর্মকর্তা অধ্যাপক মো. মনছুর আলমগীরকে ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ পদে পদায়ন দেয়া হয়েছে।  ফলে ১৬ ব্যাচের অধ্যাপক আলমগীর তার সিনিয়র কর্মকর্তাদের এসিআর লিখবেন—এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। একই পরিস্থিতি মৌলভীবাজার সরকারি মহিলা কলেজে। সেখান ১৬ ব্যাচের অধ্যাপক কর্মরত থাকার পরও ১৭ ব্যাচের অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ মো. শের উজ্জামানকে অধ্যক্ষ পদে পদায়ন দেয়া হয়েছে। দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস। 

মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ১৪ ব্যাচের অধ্যাপক কর্মরত আছেন। তা সত্ত্বেও গত ৮ অক্টোবর ১৬ ব্যাচের কর্মকর্তা অধ্যাপক মো. মনছুর আলমগীরকে ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ পদে পদায়ন দেয়া হয়েছে।  ফলে ১৬ ব্যাচের অধ্যাপক আলমগীর তার সিনিয়র কর্মকর্তাদের এসিআর লিখবেন—এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। একই পরিস্থিতি মৌলভীবাজার সরকারি মহিলা কলেজে। সেখান ১৬ ব্যাচের অধ্যাপক কর্মরত থাকার পরও ১৭ ব্যাচের অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ মো. শের উজ্জামানকে অধ্যক্ষ পদে পদায়ন দেয়া হয়েছে।

এদিকে গত ৮ অক্টোবরই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে পদায়ন পান। ওই একইদিন জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বিতর্কিত এ তিন পদায়ন নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। 

সরকারি কলেজের শিক্ষক বদলি পদায়ন নীতিমালা অনুসারে অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ পদে পদায়নের সুপারিশ প্রণীত হয় একটি কমিটির মাধ্যমে। গত ৮ অক্টোবরের ওই বিতর্কিত আদেশের সুপারিশ প্রনয়ণ কমিটির প্রধান ছিলেন সিনিয়র সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ। কমিটির সদস্যরা হলেন, অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) মোহাম্মদ খালেদ রহীম, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা এ বি এম রেজাউল করীম, যুগ্মসচিব (কলেজ) মো. নরুজ্জামান। ওই কমিটির সদস্য সচিব পদে আছেন যগ্মসচিব (কলেজ-২)  খোদেজা খাতুন।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে ওই কমিটির প্রধান ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পদায়নের আদেশাধীন সিনিয়র সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদের সঙ্গে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পক্ষ থেকে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তার মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। 

এ বিষয়ে (আবেদন না করেই উপাধ্যক্ষ পদে পদায়ন) এখনই মন্তব্য করতে পারছি না। আগামী সোমবার অফিসে গেলে বিষয়টি দেখে মন্তব্য করতে পারবো। তবে শিক্ষা ক্যাডারের প্রশাসনিক পদে (অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ) পদায়নে জুনিয়র পদায়নের নজির রয়েছে-অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) মোহাম্মদ খালেদ রহীম

জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) মোহাম্মদ খালেদ রহীম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ বিষয়ে (আবেদন না করেই উপাধ্যক্ষ পদে পদায়ন) এখনই মন্তব্য করতে পারছি না। আগামী সোমবার অফিসে গেলে বিষয়টি দেখে মন্তব্য করতে পারবো। তবে শিক্ষা ক্যাডারের প্রশাসনিক পদে (অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ) পদায়নে জুনিয়র পদায়নের নজির রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ দ্যা ডেইল ক্যাম্পাসকে বলেন, এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। তবে, তিনি এ সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হলে তা তাকে পাঠানোর পরামর্শ দেন। 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence