গাড়ি ও কৃষি যন্ত্র তৈরিতে স্বনির্ভর হতে উৎপাদকদের মিলনমেলা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৭ PM
রাজধানী ঢাকায় দুই দিনব্যাপী গাড়ি ও কৃষি যন্ত্রপাতির মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে গাড়ি, কৃষি ও হালকা প্রকৌশল খাতের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ প্রদর্শন এবং বিক্রি করা হয়। এই তিন খাতের শিল্পোদ্যোক্তারা একে অন্যের চাহিদা ও সরবরাহের সক্ষমতা সম্পর্কে জানতে এবং দেশে তৈরি পণ্যের ওপর নির্ভরতা বাড়াতে এই আয়োজন। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) শুরু হওয়া এই মেলা শেষ হয়েছে আজ।
আয়োজকরা বলেন, এই মেলার মাধ্যমে গাড়ি ও কৃষিযন্ত্রের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। বিপরীতে দেশেই আমদানি বিকল্প শিল্পের বিকাশ সহজ হবে। ‘অটোমোবাইলস অ্যান্ড এগ্রো-মেশিনারি ফেয়ার ২০২৫-রোড টু মেইড ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে এ মেলার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)।
মেলায় চুয়াডাঙ্গায় থেকে এসে অংশ জনতা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্বাধিকারী মো. ওয়ালী উল্লাহ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ কৃষি যন্ত্রপাতি প্রস্তুত এসোসিয়েশন এবং অটোমোবাইল এসোসিয়েশনের মাধ্যমে অনেক পার্টস আমাদের দেশেই উৎপাদন করা হয়। তবে আমরা একে অপরকে সঠিকভাবে অনেকেই চিনি না। মূলত আমাদের দেশে তৈরি এসব যন্ত্রাংশের বিষয়ে একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতেই এই মেলায় অংশ নেয়া। আমাদের একটা মেশিন তৈরি করতে হলে অনেকগুলা কম্পোনেন্ট বা পার্টস লাগে, যা একার পক্ষে তৈরি করে মেশিনটা কমপ্লিট করা সম্ভব না। অনেক সময় কোয়ালিটি নিশ্চিত করাও কষ্টসাধ্য। আমরা চাচ্ছি যে পার্টসটা আমরা আমদানি করি, সেই পার্টস আমদানি না দেশে তৈরি কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কিনে মেশিন তৈরি করতে। ফলে মেশিনের উৎপাদন খরচ এবং খুচরা মূল্যও কমবে। এভাবে পণ্য উৎপাদন খচর কমে যাবে।
কৃষি সম্পর্কিত সাড়ে তিন শতাধিক যন্ত্র তৈরি করেন জানিয়ে ওয়ালী উল্লাহ বলেন, কৃষি সম্পর্কিত যন্ত্রপাতিসহ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণ ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত অনেকগুলো যন্ত্র আছে, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটেরও অনেকগুলো যন্ত্র আছে, যে যন্ত্রগুলা কৃষকরা মাঠে ফসল উৎপাদন করতে ব্যবহার করে। গরুর খামার হাঁস মুরগির খামার মাছের খামারেও অনেক যন্ত্র ব্যবহার হচ্ছে। এসব পণ্যের ভালো ডিমান্ড বাংলাদেশে আছে। তবে এখনো অনেকে বিদেশী যন্ত্রাংশের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। অনেক সময় মেশিন নষ্ট হয়ে গেলে এই পার্টস পাওয়া যায় না বা আমদানি করতে সময় লাগে। ফলে কৃষকের নতুন মেশিন কিনতে হয় বা অপেক্ষা করতে হয়। নতুন মেশিন কিনলে কৃষকের পণ্য উৎপাদনে খরচ বেড়ে যায়। এজন্য আমরা চাচ্ছি, দেশের চাহিদা অনুযায়ী দেশেই যন্ত্রাংশগুলো উৎপাদন করা হোক। তাহলে কৃষিক্ষেত্রে অত্যাধুনিক যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে কম খরচে উৎপাদন বাড়বে।
কুষ্ঠিয়া থেকে এসে মেলায় অংশ নিয়েছেন আল-হেলাল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ। প্রতিষ্ঠানটি পেয়াজ সংরক্ষণে নতুন প্রযুক্তি নিয়ে এসেছেন। পাশাপাশি তারা গাছ থেকে পিয়াজ আলাদা কারণ মেশিনও রয়েছে তাদের। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রাংশও তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আল হেলাল বলেন, আমাদের তৈরি যন্ত্র ব্যবহার করে খুব সহজেই কম খরচে পেয়াজ সংরক্ষণ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে এ ধরনের প্ল্যান্ট তৈরি করতে ১২x১২ বা ১০x১০ বর্গফুটের ঘর প্রয়োজন। ওই ঘরের মধ্যে যন্ত্রটি বসালে বাইরে থেকে ঠাণ্ডা বাতাস ভেতরে প্রবেশ করবে এবং ভেতর থেকে বাইরে গরম হাওয়া বের হয়ে যায়। ফলে দীর্ঘ সময় পেয়াজ ভালো থাকে। এই যন্ত্র স্থাপনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কৃষককে অনুদান দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
মেলায় অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন ধরনের গাড়ি ও গাড়িতে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশও। সেফটি ব্যাটারি অ্যান্ড লেদ রিফিনিং ইন্ডাস্টি নিজেদের তৈরি ব্যাটারি এবং বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নিয়ে এসেছেন তারা। এসব ব্যাটারি বিভিন্ন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাতে ব্যবহার করা হয়। তারাও চাচ্ছেন বিদেশ থেকে আমদানি না করে দেশে তৈরি যন্ত্রাংশ কেনা হোক, তাতে উৎপাদন খরচ কমবে। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কোন কোন যন্ত্রাংশ আমদানি করেন এবং কোন কোন যন্ত্রাংশ নিজেরা উৎপাদন করেন সেগুলো মেলায় প্রদর্শন করছেন। এতে করে যেসব যন্ত্রাংশ দেশে এখনো উৎপাদন করা হয় না, সেগুলো নিয়ে চাইলে মেলায় আসা অন্য প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করতে পারবে।