টেকসই কৃষির জন্য ভর্তুকির চেয়ে জরুরি গবেষণা: ড. আনিছুজ্জামান চৌধুরী

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে বক্তারা
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে বক্তারা  © টিডিসি ফটো

কৃষিখাতের টেকসই উন্নয়নের জন্য কেবল ভর্তুকির ওপর নির্ভর না করে উন্নত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা অত্যন্ত জরুরি। কৃষির সুনির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জ ও সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে, বিশেষ করে ক্রিটিক্যাল (গুরুত্বপূর্ণ) জায়গাগুলোতে লক্ষ্যভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এতে করে সম্পদের সঠিক ব্যবহার ও ফলপ্রসূ উন্নয়ন সম্ভব হবে।

শনিবার (৩ মে) ফার্মগেটস্থ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির আয়োজিত বাজেট-পূর্ব আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে বক্তারা আরও বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের কাছে কৃষিসেবা পৌঁছে দেওয়া কৃষি উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। তথ্যপ্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ এবং সহজলভ্য পরামর্শের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ের কৃষকদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এসব উদ্যোগই কৃষি খাতে টেকসই অগ্রগতির পথ সুগম করতে পারে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিছুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের আজকের যে পরিবর্তন তা মূলত তিনটি চালিকা শক্তির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এই তিনটি হলো—গার্মেন্টস শিল্প, রেমিট্যান্স এবং কৃষি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই তিনটি ক্ষেত্র দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে কৃষি খাতকে অবজ্ঞা করার কোনো সুযোগ নেই বরং এই খাতের আরও উন্নয়নের জন্য আমাদের গবেষণায় গুরুত্ব দিতে হবে।’

ড. আনিছুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য আমাদের এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বা ক্রিটিক্যাল জায়গায় কাজ করতে হবে, যেগুলো প্রকৃত অর্থে উন্নয়নের গতি নির্ধারণ করে। তাই কোথায় কাজ করতে হবে তা সঠিকভাবে শনাক্ত করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী পরিকল্পিতভাবে কাজ এগিয়ে নিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কৃষিতে যারা কাজ করেন, তাদের অনেক সময় ‘ক্ষেত’ বলে অবজ্ঞা করা হয়। অথচ তারাই প্রকৃত অর্থে দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে যাচ্ছেন। আমাদের অনেকে বলেন, দেশের প্রবৃদ্ধি (গ্রোথ) কম। কিন্তু আমাদের শুধু সংখ্যাগত প্রবৃদ্ধি দেখালে চলবে না। গুণগত প্রবৃদ্ধি (কোয়ালিটি গ্রোথ) ও তুলে ধরতে হবে। কৃষির উন্নয়নের জন্য শুধু ভর্তুকি (সাবসিডি) নয় বরং ভালো গবেষণা জরুরি। যদি গবেষণা খাতে বাজেট বাড়ানো হয়, তবে কৃষিতে টেকসই উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হবে। তাই গবেষণার দিকেই আমাদের বেশি মনোযোগ দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, দেশের অর্থনীতিকে অনেকে আইএমএফ এর মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল করে তুলতে চায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো—কেন আমাদের অর্থনীতি তাদের শর্তের অধীনে থাকবে? আমরা সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি, যদি কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার নীতি আমাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়, তবে প্রয়োজন হলে আমরা আইএমএফ থেকেও বের হয়ে আসব।

অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. মো. মিজানুর রহমান। তাঁর প্রবন্ধে তিনি বাংলাদেশের কৃষি খাতের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও প্রয়োজনীয় সুপারিশ তুলে ধরেন।তিনি বলেন,‘ফসল সংগ্রহের পর ৪০-৪৫ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি হয় যা মূলত লজিস্টিক ও বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার ফল। এই অপচয় রোধে উন্নত পরিবহণ ও সরবরাহ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

হাওর অঞ্চলের কৃষি প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন,‘সেখানে রাস্তা নির্মাণ কৃষি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। রাস্তার উচ্চতা ও বাঁধ-সদৃশ অবকাঠামো পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। যার ফলে ২০২৩ সালে হাওরের প্রায় ১৭,০০০ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ধান উৎপাদনে প্রায় ৮০,০০০ মেট্রিক টন হ্রাস পেয়েছে।’

অনুষ্ঠানের উন্মুক্ত আলোচনায় বিভিন্ন কৃষি বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদসহ উপস্থিত অনেকেই কৃষিখাতে গবেষণার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্বের উপর জোর দেন। বক্তারা বলেন, কৃষির বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় টেকসই সমাধানের জন্য গবেষণাভিত্তিক পরিকল্পনা ও নীতিনির্ধারণ অত্যন্ত জরুরি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সভাপতি জনাব মো. আহসানুজ্জামান লিন্টু।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!