প্রতিকূলতার মধ্যেও খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে সফলতা দেখিয়েছে ৮ ব্যাংক

  © সংগৃহীত

দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক চাপে থাকা পরিস্থিতি সত্ত্বেও কিছু ব্যাংক খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে সফলতা দেখিয়েছে। ২০২৪ সালের শেষে বেশিরভাগ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে গেলেও আটটি ব্যাংকের ক্ষেত্রে এর বিপরীত চিত্র দেখা গেছে। এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আগের বছরের তুলনায় কমেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো হলো—বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল), ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, এইচএসবিসি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক।

২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে খেলাপি ঋণ বেড়ে চলেছে। ২০২৪ সাল শেষে এই ঋণের পরিমাণ নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে দাঁড়ায় প্রায় তিন লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকায়, যা ২০০৯ সালে ছিল মাত্র ২২ হাজার কোটি টাকা। এই সময়ে বিভিন্ন আর্থিক কেলেঙ্কারির সাক্ষী হয়েছে বাংলাদেশ—যেমন হলমার্ক, এননটেক্স, ক্রিসেন্ট, সাদ-মুসা, বেসিক ব্যাংক, এস আলম ও বেক্সিমকো গ্রুপের ঘটনা।

এমন প্রতিকূল বাস্তবতায়ও কিছু ব্যাংক শক্তভাবে নিজেদের খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকারদের মতে, এটি কোনো নতুন অর্জন নয়, বরং এতদিন ‘কার্পেটের নিচে চাপা পড়ে থাকা’ খেলাপি এখন সামনে আসছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর থেকেই ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র প্রকাশ করতে শুরু করেছে। এর ফলে দেশের কিছু রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী এবং বিতর্কিত গ্রুপের নামে-বেনামে নেওয়া ঋণগুলো প্রকৃতভাবে চিহ্নিত হচ্ছে। বিশেষ করে বেক্সিমকো, সিকদার গ্রুপ, এস আলম গ্রুপসহ একাধিক বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী বর্তমানে খেলাপি হয়ে পড়েছে। ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণেও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা গেছে।

তবে কিছু ব্যাংক খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বিডিবিএল ৯৮২ কোটি থেকে কমে ৯৫৩ কোটি টাকা, ব্র্যাক ব্যাংক ১,৭৫০ কোটি থেকে কমে ১,৬১৭ কোটি, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ১,৬৮৯ কোটি থেকে কমে ১,৫৯০ কোটি, ওয়ান ব্যাংক ২,৪৩৮ কোটি থেকে কমে ২,৩২৮ কোটি, উত্তরা ব্যাংক ৯৮৫ কোটি থেকে কমে ৯৮০ কোটি, এইচএসবিসি ৬৯৯ কোটি থেকে কমে ৩২০ কোটি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ৯৬৪ কোটি থেকে কমে ৮৩৬ কোটি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ১,৫৩৪ কোটি থেকে কমে ১,২৭৮ কোটি টাকা।

ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, “যেসব ব্যাংকে প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন ভালো, সেগুলো খেলাপি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে। আমাদের ব্যাংক করপোরেট গ্রাহকের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল নয়। বরং ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে বড় জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছাতে পারায় ঝুঁকি কমে যায়।”

তিনি আরও বলেন, “একই গ্রাহকের কাছে অতিরিক্ত ঋণ দেওয়ার ফলে কোনো এক গ্রাহক খেলাপি হলে পুরো ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই গ্রাহকের যোগ্যতা মূল্যায়ন এবং ঋণের বৈচিত্র্য গুরুত্বপূর্ণ।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট ঋণ স্থিতি ছিল ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ তিন লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২০.২০ শতাংশ। বর্তমানে ২২টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের বেশি এবং আটটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ৬০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষক মোহাইমিন পাটোয়ারী মনে করেন, “দীর্ঘ সময় ধরে সিস্টেমকে ডাউনপ্লে করে সুবিধা নেওয়ার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল, যার ফল এখন ভোগ করছে ব্যাংক খাত। দুর্নীতিতে জড়িতদের শাস্তির ব্যবস্থা না করলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। তবে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।”

তিনি বলেন, “ব্যাংক খাত সমাজ থেকে আলাদা কিছু নয়। যখন পুরো সমাজেই টাকা দিয়ে সবকিছু কেনার প্রবণতা তৈরি হয়, তখন এর প্রভাব ব্যাংকিং খাতেও পড়ে। সুশাসন, জবাবদিহি এবং শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে পারলে ব্যাংক খাতও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।”


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence