সাত বছরেও হলো না ১০ স্কুল নির্মাণ, আরও আড়াই বছর চায় মাউশি

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের লোগো
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের লোগো  © লোগো

ঢাকা শহর আশপাশে ১০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপনে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল ২০১৭ সালে। ৬৭৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন বছরে ১০টি স্কুল স্থাপনের কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। পরে আরও প্রায় ৭৭ কোটি টাকা বাজেট বাড়িয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু ৭ বছর পর হলেও এখনও কাজ শেষ হয়নি। এখন প্রকল্পের মেয়াদ আরও আড়াই বছর বাড়ানো জোর চেষ্টা চলছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। 

মন্ত্রণালয় সূত্র দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানায়, ওই প্রকল্পের মেয়াদ এখনো বাড়ানো হয়নি। তবে তা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। সূত্রের দেয়া তথ্য মতে, ওই প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর ছয় মাস বাড়িয়ে ২০২৭ সালের ৩০ জনু পর্যন্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের আওতায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। শতভাগ সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সংশোধিত মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৫০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। 

জানা গেছে, ২০১৭ সালের অক্টোবরে প্রকল্প অনুমোদনের পর সে বছরই স্কুলগুলোর নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত ২০২৩ সালে তিনটি স্কুলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রকল্প শুরুর ৭ বছর পর কোনো বিদ্যালয়েরই ভবন নির্মাণ শেষ হয়নি।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির মূল অনুমোদনের মেয়াদ ধরা ছিল তিন বছর (২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন)। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এনইসির (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ) নির্দেশনা মেনে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত এক বছর মেয়াদ বাড়ায় পরিকল্পনা কমিশন। পরবর্তী সময়ে ব্যয় ছাড়া ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত আরও এক বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। এতেও শেষ হয়নি কাজ। এবার প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ২ বছর ৬ মাস বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ নির্ধারণের করা হয়। প্রকল্পটির মূল ব্যয়ও ৬৭৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা থেকে ৭৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বাড়িয়ে ৭৫০ কোটি ৪০ লাখ টাকা করা হয়েছিল।

এ প্রকল্পের তৎকালীন পরিচালক ড. মো. আমিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক নথিতে প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়, ঢাকা শহর ও সন্নিকটবর্তী এলাকায় মাধ্যমিক স্তরে অতিরিক্ত ২৭০০ শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি, ওই শিক্ষার্থীদের বর্তমান প্রয়োজনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ শিক্ষার উপকরণসহ অবকাঠামো সুবিধা প্ৰদান, ঢাকার ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য মানসম্মত শিক্ষার চাহিদা মেটানো ও শিক্ষার গুণগত মান ও ফলাফল উন্নত করা।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছে, কেরানীগঞ্জের পশ্চিমদি, ধামরাইয়ের লাকুরিয়াপাড়া, আশুলিয়ার পাথালিয়ায় বাঁশবাড়ি, সাভারের হেমায়েতপুরের বিলামালিয়া, বাড্ডার সাঁতারকুল, নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ডে জালকুড়ি, নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোডের খোর্দ্দঘোষপাড়া, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচল, আশুলিয়ার পূর্র্ব নরসিংহপুর এবং খিলক্ষেতের জোয়ারসাহারায় এ স্কুলগুলো নির্মাণ করা হবে। এসব এলাকায় প্রতিটি স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য কমবেশি দুই একর করে জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে। তবে পূর্বাচল, খিলক্ষেতের জোয়ারসাহারা এবং আশুলিয়ার পূর্ব নরসিংহপুরে জমি অধিগ্রহণের কাজ এখনো চলছে। বাকিগুলোর জমি অধিগ্রহণ করে ভূমির উন্নয়ন তথা মাটি ভরাট, সয়েল টেস্ট-সহ আনুষঙ্গিক কাজ চলমান।

এ স্কুলগুলোর প্রতিটি ১০ তলাবিশিষ্ট ভবন হবে। ভবনের বাইরে থাকবে শহীদ মিনার, জিমনেশিয়াম ও গার্ডিয়ান শেড। প্রতিটি স্কুল ও কলেজের জন্য প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্ট করে নতুন করে নিয়োগ দেয়া হবে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী। এছাড়া আধুনিক আসবাবপত্র, কম্পিউটার ও কম্পিউটার-সামগ্রী (ইন্টারনেটসহ), অফিস সরঞ্জামাদি, ল্যাব, জিম ও কালচারাল ইকুপমেন্ট, খেলাধুলার সামগ্রী এবং বই-পুস্তক ইত্যাদি সব সুযোগ-সুবিধাও থাকবে।

প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের দাবি, ভবনের নকশাসংক্রান্ত বিষয়ে জটিলতা দৃষ্টিতে আসার পর পুরো প্রকল্প পুনরায় ২০২৩ সালে একনেক, পরিকল্পনা কমিশন এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন নিতে হয়। এছাড়া করোনা মহামারি, জমি নির্বাচন ও অধিগ্রহণে বিলম্ব, রেট শিডিউল ও ডিজাইন-সংক্রান্ত জটিলতায় প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হয়। 

প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন উইংয়ের পরিচালক ড. একিউএম শফিউল আজম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের কাছে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন এ প্রতিবেদককে। 

বর্তমানে এ প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্বে আছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. মীর জাহীদা নাজনীন। মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে কোন তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। একইসঙ্গে প্রতিবেদককে তার অফিসে গিয়ে দেখা করার পরামর্শ দেন। 


সর্বশেষ সংবাদ