হত্যা মামলায়ও অভিযুক্ত মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতারা!

আমিনুল ইসলাম, আল মামুন এবং সনেট মাহমুদ
আমিনুল ইসলাম, আল মামুন এবং সনেট মাহমুদ  © সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হকের ওপর হামলার পর আবারো আলোচনায় এসেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নাম। এর আগেও নুর ও ছাত্রদলের ওপর হামলা এবং আলোচিত কয়েকটি কর্মসূচি পালন করে সবার নজরে আসে সংগঠনটি। তবে এবার ডাকসু ভবনে লাইট বন্ধ করে ভিপি নুর ও তার সঙ্গীদের বেধড়ক পেটানোর ঘটনায় বিপাকে পড়েছে সংগঠনটি।

জানা গেছে, প্রায় ১৪ মাস আগে আত্মপ্রকাশ করলেও সংগঠনটির কোনো গঠনতন্ত্র নেই। এ সময়ের মধ্যেই দু’ভাগ হয়েছে মঞ্চটি। উভয় পক্ষই একে অন্যকে নানা অপকর্মের দায়ে দোষারোপ করে আসছে। শুরুতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল করার দাবিতে আন্দোলন করলেও পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিতর্কিত কিছু কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আলোচনায় আসে মঞ্চটি।

সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের অধিকাংশ নেতাকর্মীই আগে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত থাকলেও পরে মঞ্চে যুক্ত হন। কয়েকজন ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃতও হয়েছেন। গুরুতর অভিযোগ রয়েছে মঞ্চের কয়েকজন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে, এমনকি হত্যা ও নারী কেলেঙ্কারীর মামলার আসামি কয়েকজন।

শুরুতে এই মঞ্চের মূল নেতৃত্বে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দিন। তার সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খান। তবে পরে নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্বসহ নানা কারণে মঞ্চটি দুভাগ হয়ে যায়। ছাত্রলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে অব্যাহতি পাওয়া সহ-সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল নিজেকে সভাপতি এবং ছাত্রলীগের সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপ সম্পাদক আল মামুন নিজেকে সাধারণ সম্পাদক ঘােষণা করেন।

ভিপি নুরুল হক ও তার সঙ্গীদের ওপর হামলার ঘটনায় আল মামুনকে আটক করেছে পুলিশ। বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলার দায়ের করেছে। মামলার আসামি আমিনুল, সনেটসহ আরও অনেকে। মঞ্চের নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, সভাপতি আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে। গোপালগঞ্চ সদর থানায় ২০১৬ সালে হওয়া একটি মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি তিনি।

এছাড়া তার পক্ষের আরেক শীর্ষ নেতা সনেট মাহমুদের বিরুদ্ধে রয়েছে সমকামিতাসহ বিকৃত যৌনাচারের অভিযোগ। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযোগ উঠেছে। হল থেকে বেরও করে দিয়েছিলেন ছাত্রলীগেরই নেতাকর্মীরা। এ তিনজনই ভিপি নুর ও তার সহযোগীদের ওপর হামলায় নেতৃত্ব দেন বলে অভিযোগ করেছেন আহতরা। 

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের অপর পক্ষের মূখপাত্র অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে নানা অভিযোগ উঠেছে। গণমাধ্যমে খবরও প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া এ অংশের আরেক শীর্ষ নেতা মিজানুর রহমান ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় উপ-পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

দুই ছাত্রীতে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর চকবাজার থাকায় একটি মামলা হয়। পরে ছাত্রলীগ থেকেও বহিষ্কার হন তিনি। এছাড়া তার নিজের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের (এসএম) শিক্ষার্থীরাও মারধরসহ নানা অভিযোগ তুলেছেন।

এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কয়েকজন নেতার সঙ্গে একাধিক মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করে সনেট মাহমুদকে পাওয়া যায়। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘অতীতে আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তার সবই নিষ্পত্তি হয়েছে। সেগুলোতে আমার কোন দোষ ছিল না।’

ভিপি নুরসহ অন্যদের ওপর হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওইদিন তারাই আগে হামলা চালিয়েছে, গুলি ছুঁড়েছে। আমরা তখন প্রতিরোধ করেছি। বিষয়টিতে যারাই জড়িত থাক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা কেউ যেন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার না হই।’ এছাড়া আমিনুল ইসলাম বুলবুলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা থাকার বিষয়টিও স্বীকার করেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ