দুই মেয়ে বিক্রি করে বিদ্যুৎ বিল ও ঋণ পরিশোধ করলেন বাবা

এমরান হোসেন
এমরান হোসেন  © ফাইল ছবি

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে নিজের দুই শিশু মেয়েকে মায়ের অগোচরে বিক্রি করে দিয়েছেন এক বাবা। প্রথমে দেড় বছর বয়সী ছোট সন্তান রিয়াকে বিক্রি করে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেন সাত নম্বর বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের নাটেহরা গ্রামের বাসিন্দা এমরান হোসেন। এর চার-পাঁচ মাসের মাথায় ঋণ পরিশোধের জন্য তিন বছর বয়সী সন্তান ইভাকে বিক্রি করে দেন তিনি।

আর ওই সময় শিশু দুজনের মা জান্নাত বেগম চট্টগ্রামের একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কর্মরত ছিলেন। বিক্রি করে দেওয়ার পর দুই সন্তানের সব ছবি এবং তাদের জন্মগ্রহণের প্রমাণসংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্রও নষ্ট করে ফেলেন পেশায় বেকারি পণ্যের ব্যবসায়ী এমরান হোসেন। এদিকে দুই শিশু সন্তানকে হারিয়ে এখন পাগলপ্রায় তাদের মা জান্নাত বেগম। চট্টগ্রামের কর্মস্থল থেকে ফিরে নিজের সন্তানদের বিক্রি করে দেওয়ার তথ্য জানতে পারেন তিনি। তারপর থেকে সন্তানদের ফিরিয়ে আনার জন্য স্বামীকে চাপ দিয়ে এলেও গত এক বছর ধরে বিভিন্ন অজুহাতে সময় পার করছেন এমরান হোসেন। এমন পরিস্থিতিতে সন্তানদের ফিরে পেতে প্রশাসনের সহায়তা কামনা করেছেন জান্নাত বেগম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই সন্তানকে ৪০ হাজার টাকা করে মোট ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন এমরান হোসেন। তার দুই স্ত্রী। দ্বিতীয় স্ত্রীকে চট্টগ্রামের একটি তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরির জন্য পাঠিয়ে তার গর্ভে জন্ম নেওয়া দুই সন্তানকে কৌশলে বিক্রি করে দেন এমরান।

সন্তান হারিয়ে পাগলপ্রায় জান্নাত বেগম গতকাল মঙ্গলবার তার নিজ বাড়িতে বসে বলেন, ‘আমার স্বামী এমরান হোসেন আমাকে চট্টগ্রামে পাঠানোর পর তার প্রথম স্ত্রী ইয়াছমিনের কাছে আমার দুই মেয়েকে নিয়ে রাখে। সেখান থেকে পরে কৌশলে মেয়েদের বিক্রি করে দেয়। সন্তানদের ফিরিয়ে আনার জন্য চাপ দিলে গত এক বছর ধরে বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে সন্তানদের ফিরে আনবে বলে সময় পার করে আসছে আমার স্বামী। আমি আমার সন্তানদের আমার কোলে ফেরত চাই।’ সন্তানদের ফিরে পেতে স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সহায়তাও কামনা করেন তিনি।

এ ব্যাপারে এমরান হোসেন জানান, ছোট মেয়ে রিয়াকে ফরিদগঞ্জ পৌরসভার কলাবাগান মহল্লার এক পরিবারে বিক্রি করেছেন। আর এতে তাকে সহযোগিতা করেন প্রত্যাপপুরের পল্লী চিকিৎসক আমেনা বেগম। আর বড় মেয়ে ইভাকে বিক্রি করেন চাঁদপুর সদর উপজেলার মহামায়া পাকিস্তান বাজার এলাকার একটি পরিবারে। এ কাজে সহযোগিতা করেন নাটেহরা গ্রামের বাসিন্দা কামরুল ইসলাম। তার বোনের আত্মীয়রা ওই সন্তানকে নিয়েছেন।

দুই শিশুসন্তানকে বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে এমরান হোসেনের প্রথম স্ত্রী ইয়াছমিন জানান, তার স্বামী দুই কন্যাসন্তানকে বিক্রি করেছেন জানেন, কিন্তু কোথায় বিক্রি করা হয়েছে তা জানেন না।

নিজের শিশুসন্তানদের বাবা বিক্রি করে দিয়েছেন এমন তথ্য জানার পর এমরান হোসেনের ওপর ক্ষুব্ধ নাটেহরা গ্রামের বাসিন্দারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামটির এক বাসিন্দা বলেন, ‘রিয়া ও ইভা দুই বোন। তাদের মা জানে না তারা এখন কোথায়। সন্তান জন্ম দেওয়ার পর কিছুদিন লালনপালন করলেও তাদের একটি ছবি বা কোনো স্মৃতিও নেই। শিশু দুটি যেখানে বিক্রি হয়েছে, হয়তো তারা সেখানে ভালো আছে। অথচ তাদের জন্মধারিণী মা কে তা তাদের জানার সৌভাগ্য হলো না। বাবার অভাবের অর্থের জোগানদাতা হয়েছে তারা, কিন্তু রক্তের বন্ধন ছিন্ন করে!’

সন্তান বিক্রির বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাননি বলে জানিয়েছেন হাজীগঞ্জ থানার ওসি মো: জোবাইর সৈয়দ। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ নিয়ে কেউ আসেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রায় একই ধরনের কথা বলেছেন হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: রাশেদুল ইসলাম। তিনি গতকাল বিকেলে বলেন, ‘সন্তান বিক্রির ঘটনাটি আমি অবগত ছিলাম না। কোনো পক্ষই আমাদের কিছু জানায়নি। যেহেতু এখন জানতে পেরেছি, খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ