ত্বকী হত্যার ১০০ মাস
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২১, ০৮:২১ PM , আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২১, ০৮:২১ PM
তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ১০০ মাস পূর্ণ হয়েছে আজ। ২০১৩ সালের ৬ মার্চ ত্বকী হত্যার পর থেকে প্রতি মাসের ৮ তারিখ লাশ উদ্ধারের দিনটিকে কেন্দ্র করে বিচারের দাবিতে আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করেছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। নানা পদক্ষেপের পরও ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার আজ ১০০ মাস।
হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ভাতিজা এবং নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমান তখন আত্মগোপনে ছিলেন। আর এখন গোটা নারায়ণগঞ্জ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। শহরের ছেয়ে যাওয়া পোস্টার, বিলবোর্ডে শোভা পাচ্ছে আজমেরীর ছবি। তবুও বিচার হয়নি ত্বকী হত্যার।
উল্লেখ্য, ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৩ সালের ৬ মার্চ বিকেলে। সুধীজন পাঠাগারে যাওয়ার পথে নারায়ণগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সড়ক থেকে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীকে অপহরণ করা হয়েছিল। এর দুই দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীর খালের পাড় থেকে পুলিশ ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে। পুলিশ মামলাটির তদন্ত শুরু করে আশানুরূপ অগ্রগতি না হওয়ায় ২৮ মে ২০১৩ উচ্চ আদালতের নির্দেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এর তদন্তভার গ্রহণ করে। এর এক বছর পর সংবাদ সম্মেলন করে কোথায়, কার নির্দেশে, কীভাবে ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছিল তার বিস্তারিত জানিয়েছিল মামলার তদন্তকারী সংস্থা র্যাব।
হত্যার বছর ২৯ জুলাই ইউসুফ হোসেন নামের এক ঘাতক এবং ১২ নভেম্বর সুলতান শওকত নামের অপর এক ঘাতক আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তারা জবানবন্দিতে ত্বকীকে কখন, কীভাবে, কোথায়, কারা কারা এবং কেন হত্যা করেছে, তার বিশদ বর্ণনা দেয়। তাদের বর্ণনা অনুযায়ী অপহরণের রাতেই তারা তৎকালীন সাংসদ নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমানের উইনার ফ্যাশনখ্যাত টর্চার সেলে নিয়ে ত্বকীকে প্রথমে গজারির লাঠি দিয়ে পিটিয়ে অজ্ঞান করে এবং পরে কালাম সিকদার নামের একজন তার বুকের ওপর উঠে গলা চেপে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে। রাত ১১টার মধ্যেই তারা ত্বকীর মৃত্যু নিশ্চিত করে এবং পরে আজমেরী ওসমানের গাড়িতে করেই তারা ত্বকীর লাশ শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে নিয়ে যায় এবং লাশ নৌকায় করে নিয়ে নদীতে ফেলে দেয়। প্রথম জবানবন্দি গ্রহণের কিছুদিন পর ৭ আগস্ট র্যাব আজমেরী ওসমানের উইনার ফ্যাশনে অভিযান পরিচালনা করে। সেখানে তারা দেয়ালে ও আসবাবে গুলির চিহ্ন দেখতে পায় এবং সেখান থেকে রক্তমাখা প্যান্ট, দড়ি, রক্তমাখা গজারির লাঠি, ইয়াবা সেবনের সরঞ্জামাদি, পিস্তলের অংশসহ বিভিন্ন বস্তু আলামত হিসেবে সংগ্রহ করে।
ত্বকী হত্যার এক বছরের মাথায় ২০১৪ সালের ৫ মার্চ র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল হাসান র্যাবের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমকে ত্বকী হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি জানান। তারা জানান, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে, তারই উইনার ফ্যাশনে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। সংবাদ সম্মেলনের সে সংবাদ সেদিন বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল প্রচার করে এবং পরদিন তা বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। র্যাব তখন অচিরেই এ অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করা হবে বলে জানায়। কিন্তু তা আর হয়নি।
তৈরি করে রাখা সে অভিযোগপত্র আজ পর্যন্ত আদালতে পেশ করা হয়নি। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়া একজন ছাড়া অভিযুক্ত সবাই উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে কেউ বিদেশে পালিয়ে গেছে কেউবা দেশেই ঘুরে বেড়াচ্ছে।
ত্বকী হত্যার বিচারের দাবিতে বিশ্বের ১৯টি দেশে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ হয়েছে। এ বিচারের দাবিতে টানা প্রায় সাড়ে আট বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে মিছিল, সমাবেশ, মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন, আলোক প্রজ্বালন, গোলটেবিল বৈঠক, প্রতীকী অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। দেশের লেখক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবীরা প্রতিনিয়ত লেখালেখি, কবিতা রচনা, ছবি আঁকা, গান রচনা, প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ, স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ, গান, আবৃত্তির সিডি প্রকাশসহ বিভিন্নভাবে এ হত্যার বিচার চেয়ে আসছেন। প্রতিবছর জাতীয়ভাবে আয়োজিত হচ্ছে রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, যেখানে অংশ নিচ্ছে দেশের অসংখ্য শিশু-কিশোর-তরুণ। ২০১৩ সালের ৮ মার্চ ত্বকীর লাশ পাওয়ার তারিখটিকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ ১০০ মাস ধরে টানা প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। তবুও আজও বিচার চেয়ে চলেছেন ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বী। বুকের মধ্যে এখনও তিনি পুষে রেখেছেন প্রত্যাশার আগুনটাকে।