আব্দুর রউফ কলেজের এক বিভাগে তিন শিক্ষক নিয়োগে অসঙ্গতির অভিযোগ

সরকারি শাহ্ আব্দুর রউফ কলেজ
সরকারি শাহ্ আব্দুর রউফ কলেজ  © ফাইল ছবি

রংপুরের পীরগঞ্জের সরকারি শাহ্ আব্দুর রউফ কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগে তিন শিক্ষকের নিয়োগে অসঙ্গতির অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি অকপটে স্বীকারও করেছেন কলেজটির বর্তমান (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষ মো. সাইফুল নেওয়াজ শাকিল। তিনি বলেছেন, শুধু এ তিনজনের নিয়োগের অসংগতি নয়, আরও একাধিক শিক্ষকের নিয়োগে অসংগতি রয়েছে।

ওই তিন শিক্ষক হলেন- মোছা. মোসতারি পারভীন, মো. সাগর মন্ডল ও শাহ মো. সোয়েব মিয়া। অভিযোগ রয়েছে, মোছা. মোসতারি পারভীন এমএসসিতে দ্বিতীয় শ্রেণি অর্জন করেন। কিন্তু ২০১১ সালের নিয়োগ বোর্ডের নম্বরপত্রে প্রথম শ্রেণি দেখিয়েছেন। যার মাধ্যমে নিয়োগ বোর্ডকে প্রভাবিত করে তিনি প্রথম হয়েছিলেন। তিনি এমএসসির জাল সার্টিফিকেট ভাইভা বোর্ডে দেখিয়ে প্রথম হয়েছিলেন।

এছাড়াও একই বিভাগের অন্যান্যদের নম্বরপত্রের প্রত্যেক পৃষ্ঠায় সুপারিশ করা থাকলেও মোছা. মোসতারি পারভীনের নম্বরপত্রে কোনো সুপারিশ করা হয়নি। এমন নিয়োগ প্রক্রিয়ার পরও মোছা. মোসতারি পারভীন প্রজ্ঞাপনভুক্ত হয়ে সরকারিভাবে কলেজে যোগদানও করেছেন।

জানা যায়, ২০১১ সালে পত্রিকার বিজ্ঞপ্তি ছিল দুই জন শিক্ষকের জন্য। কিন্তু নিয়োগ দেওয়া হয় তিনজনকে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের মন্তব্য তালিকায়ও উপরের তথ্য পাওয়া যায়। প্রথম পর্যায়ে সাগর মণ্ডলের পদসৃজন করা না হলেও সম্প্রতি তার পদসৃজন করা হয়েছে।

পরবর্তীতে জমাকৃত রেজুলেশনের সাথেও মূল রেজুলেশনের অনেক অসংগতি পাওয়া যায়। একই সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত অন্য দুইজন শিক্ষকের রেজুলেশন পর্যালোচনা করেও বিষয়টির প্রমাণ মিলেছে। এছাড়াও নিয়োগপ্রাপ্ত অন্যান্যদের নম্বরপত্রের প্রত্যেক পৃষ্ঠায় সুপারিশ করা থাকলেও সাগর মণ্ডলের নম্বরপত্রে কোনো সুপারিশ করা হয়নি।

শাহ্ মো. সোয়েব মিয়া ২০১৫ সালে নিয়োগ পেয়েছেন। রেজুলেশন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ২ জন শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করা হয় সম্মান কোর্সে। কিন্তু সোয়েব মিয়ার রেজুলেশনে ঘষামাজা করে তীর চিহ্ন দিয়ে ডিগ্রি কোর্সে শিক্ষক নিয়োগের কথা বলা হয়। এ কারণে প্রথম এবং দ্বিতীয় পদসৃজন তালিকায় তার নাম আসেনি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের (কলেজ অনুবিভাগ) পদ সৃজন সংক্রান্ত সভার মন্তব্য তালিকায় শাহ মো. সোয়েব মিয়াকে জনবল কাঠামো অনুযায়ী প্রাপ্যতা নাই বলে মন্তব্য করছে। কিন্তু এসব কিছু উপেক্ষা করে সম্প্রতি পদসৃজনের জন্য তার ফাইল আবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭০ সালে উপজেলা সদরে শাহ আবদুর রউফ কলেজ প্রতিষ্ঠার পর এমপিওভুক্ত হয়ে ডিগ্রি অধিভুক্ত হয়। পরে কলেজে ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষে ৯টি বিষয়ে পাঁচজন করে মোট ৪৫ জন প্রভাষক এবং ৯ জন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই প্রভাষকরা কখনই এমপিওভুক্ত কিংবা সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পাবেন না- এমন শর্তেই তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ১  অক্টোবর শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে মোট ৭২ জনের পদসৃজন করা হয়। এরমধ্যে ৭০ জন যোগদান করেছেন। ২ জনের পদ স্থগিত রেখেছে মন্ত্রণালয়। এরপর ২৩ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদসৃজন করা হয়। বর্তমানে ২৩ জনের নিয়োগপ্রক্রিয়া বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম চলমান রয়েছে।

এ বিষয়ে মোছা. মোসতারি পারভীনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ফোনে কথা বলতে রাজি হননি। পদ সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে মো. সাগর মন্ডল বলেন, নিয়োগপত্রে প্রয়োজনে পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা যাবে এমন উল্লেখ্য ছিল। আর রেজুলেশন ভিন্ন থাকার বিষয়টি প্রশাসনই ভালো জানেন। কারণ আমার কাছে তো অন্য দুজনের কাগজ নেই। আর মো. সোয়েব মিয়া দেশের বাইরে থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে কলেজটির বর্তমান অধ্যক্ষ মো. সাইফুল নেওয়াজ শাকিল (ভারপ্রাপ্ত) তিন শিক্ষক নিয়োগে অসঙ্গতির বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, শুধু উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের তিনজনই নয়, কলেজে মোট নয় জনের নিয়োগ জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। উপরের তিন জন শিক্ষকের নিয়োগ জালিয়াতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তো নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। এসব নিয়োগের ঘটনা সাবেক অধ্যক্ষের সময়ে।

 

সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!