পৌনে ৫ কোটির সড়ক ধস, এক মাসেও আলোর মুখ দেখেনি তদন্ত প্রতিবেদন
- মাইনুদ্দিন আল আতিক, কলাপাড়া প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৫, ০১:৪০ PM , আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৫, ০৬:০১ PM

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত ঘেঁষা নির্মাণাধীন আরসিসি সড়ক ভেঙে যাওয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও জমা পড়েনি। এতে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও সন্দেহ দানা বাঁধছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, প্রকল্পে দুর্নীতির সত্যতা আড়াল করতেই তদন্তে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
গত ২৯ মে রাতে কুয়াকাটা বীচে সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে সড়কটি ধসে পড়ে। রাতেই কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন এবং সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। তবে এক মাস পার হলেও প্রতিবেদন এখনও আলোর মুখ দেখেনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ধসে যাওয়া সড়কের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠার প্রেক্ষিতে এ তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। কিন্তু এর প্রধান হিসেবে রয়েছেন কুয়াকাটা পৌর প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইয়াসীন সাদেক, যিনি একইসঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের অংশ। এতে করে তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন সচেতন মহল।
তদন্ত কমিটির প্রধান ইয়াসীন সাদেক দেরির কারণ হিসেবে ঈদুল আযহার ছুটি উল্লেখ করে বলেন, ‘দ্বিতীয় দফায় তদন্ত কমিটির মিটিং হয়েছে। শীঘ্রই প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।’
তবে ইউএনও রবিউল ইসলাম আগেই জানিয়ে দেন, এই অপরিকল্পিত নির্মাণে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ আদায় ও জামানত বাজেয়াপ্ত করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না হওয়ায় সেই প্রক্রিয়াও থেমে আছে।
জানা গেছে, প্রায় ৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১ হাজার ৩০০ মিটার আরসিসি সড়ক নির্মাণে তিনটি প্রতিষ্ঠান—মেসার্স আবরার এন্টারপ্রাইজ, এসএম ট্রেডার্স এবং মোল্লা ট্রেডিং কাজ পায়। গত বছরের ২৪ মার্চ কার্যাদেশ পাওয়া প্রকল্পটি ২০২৫ সালের মার্চে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ৩০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার বিলও উত্তোলন করা হয়েছে।
পৌরসভার অভ্যন্তরীণ সূত্র দাবি করছে, প্রকৃতপক্ষে প্রকল্পের অধিকাংশ কাজ না করেই বিল উত্তোলন করা হয়েছে। ঠিকাদারদের পেছনে ছিলেন পৌরসভার অপসারিত মেয়র আনোয়ার হাওলাদার ও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নেতাদের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা। শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্ট একাধিক নেতার নাম ঘুরে বেড়াচ্ছে ঠিকাদার হিসেবে।
তদন্ত কমিটি গঠনের চিঠিতেই উল্লেখ করা হয়েছে, নিম্নমানের উপকরণ, লোকাল বালি, পাতলা সিসি ও সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই কাজটি শুরু হয়েছে। স্থানীয় নাগরিক সমাজ বলছে, সড়ক ভাঙনের দায় একাধিক পক্ষের হলেও তদন্ত দীর্ঘায়িত করার মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের আড়াল করা হচ্ছে।
তারা আশঙ্কা করছেন, এই তদন্ত যদি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন না হয় এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে এমন দুর্নীতির ঘটনা আরও বাড়বে। তারা দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ ও উচ্চপর্যায়ের নতুন তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তদন্ত প্রতিবেদন পেলেই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’