শিক্ষকের এমপিওভুক্তির তথ্যে জালিয়াতি, আরএমপি কমিশনার ও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ

শহীদ মামুন মাহমুদ পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজ
শহীদ মামুন মাহমুদ পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজ  © সংগৃহীত

রাজশাহীর শহীদ মামুন মাহমুদ পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজে গুরুতর তথ্য জালিয়াতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এই জালিয়াতিতে প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান ও রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. শফিকুল ইসলামের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে জানা গেছে।

বিশ্বস্ত সূত্র, নথি ও মাঠপর্যায়ের তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধানে জানা গেছে, এমপিওভুক্তির জন্য পরিসংখ্যান বিষয়ের শিক্ষক মো. মানিক উদ্দিনের বিষয়ে অতিরিক্ত ছাত্রসংখ্যা দেখানো হয়েছে। অথচ সরকার-নির্ধারিত ন্যূনতম শিক্ষার্থী না থাকায় তিনি এমপিওভুক্তির নীতিমালার যোগ্য নন।

‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিও নীতিমালা ২০২১’-এর ধারা ৬.৩(ক)(৩) অনুযায়ী, ‘মহানগর এলাকার কলেজগুলোয় উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের কোনো বিষয়ে শিক্ষকের এমপিওভুক্তির জন্য অন্তত দুই শিক্ষাবর্ষে ৬০ জন শিক্ষার্থীর উপস্থিতি আবশ্যক।’

কিন্তু প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কলেজটির পরিসংখ্যান বিষয়ের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে মাত্র দুজন শিক্ষার্থী ওই বিষয়টি চতুর্থ বিষয় হিসেবে নিয়েছে এবং ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে সংখ্যা আরও কমে দাঁড়িয়েছে একজনে। অর্থাৎ প্রকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা মোট তিন।

তারপরও মানিক উদ্দিনের এমপিও আবেদনপত্রে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ২৫ জন এবং ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ৪০ জন শিক্ষার্থীর নাম দেখানো হয়, যা মোট দাঁড়ায় ৬৫-তে।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, শিক্ষার্থী সংখ্যার এই গড়মিল দেখাতে অন্য বিষয়ের শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে।

এই ভুয়া তথ্যের ভিত্তিতেই মানিক উদ্দিনকে এমপিওভুক্তির জন্য প্রস্তাব করা হয়। তার আবেদনপত্রে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার ও গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. শফিকুল ইসলামের স্বাক্ষর রয়েছে, যা তাদের প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি সামনে আনে। আবেদনপত্রটি গত ৭ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে জমা দেওয়া হয় এবং একই মাসের ২৮ তারিখে তা অনুমোদিত হয়।

এ ঘটনার সব তথ্য-প্রমাণ এই প্রতিবেদকের হাতে সংরক্ষিত রয়েছে। সেসব পর্যালোচনা করে আরও জানা গেছে, আগের পরিসংখ্যান শিক্ষকের অবসরের পর দুই-তিন বছর এ বিষয়ে কোনো শিক্ষক ছিলেন না এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যাও ছিল না। এরপরও শিক্ষক নিয়োগের শূন্য পদ চাওয়ার সময় কলেজ কর্তৃপক্ষ পরিসংখ্যান বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে।

এদিকে অধ্যক্ষ মো. শফিকুল ইসলামের বয়সজনিত কারণে ২০২৫ সালের ৬ এপ্রিল অবসর নেওয়ার কথা থাকলেও তিনি এখনো দায়িত্ব পালন করছেন, যা নীতিমালার পরিপন্থী। সরকারি আদেশ অনুযায়ী, এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বন্ধ রাখার নির্দেশনা রয়েছে। এ নির্দেশনা জারি হয় ২০২৪ সালের ১১ জানুয়ারি।

তবে কলেজ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা চলছে, যা পরিচালনায় স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ সম্পর্কে কিছু জানি না। এ বিষয়ে গভর্নিং বডির চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসা করুন।’

এমপিও আবেদন ও তথ্য জালিয়াতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই। এটা বোর্ডের সিদ্ধান্ত।’

অভিযোগ বিষয়ে জানতে মো. মানিক উদ্দিনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার ও গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবু সুফিয়ানকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি হয়, সেগুলো নিয়ে খোঁজ নেন না কেন?’

তথ্য জালিয়াতি ও নিয়ম লঙ্ঘনের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘আমার কিছু বলার নেই। আপনারা যেতে পারেন।’

রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এ এন এম মফাকখারুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিষয়টি ইতোমধ্যে যাচাই করেছি। যেসব শিক্ষার্থীর নাম ব্যবহার করা হয়েছে, তাদের কোনো সমস্যা হবে না। এমপিওভুক্তির পর সংশ্লিষ্টরা তথ্য সংশোধন করেছেন।’ তবে এ বিষয়ে শিক্ষা অধিদপ্তর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানান তিনি।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের রাজশাহী আঞ্চলিক পরিচালকের আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা অভিযোগ সম্পর্কে অবগত। এনটিআরসিএ নিয়োগের আদেশ দেওয়ায় আমরা তা অনুমোদন দিয়েছি। তবে জালিয়াতি প্রমাণিত হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence