এবারের রোজায় যশোরে নিত্যপণ্যের দাম ক্রেতার নাগালে
- রুহুল আমিন, যশোর
- প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৫, ১২:৩৩ PM , আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৫, ১২:৩৩ PM

যশোরে কয়েক বছর রোজায় নিত্যপণ্যের নাম বাড়তি থাকলেও এবার রোজায় ভিন্ন চিত্র। এ বছর শাকসবজি, মাছ-মাংসসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম ভোক্তাদের নাগালের মধ্যেই আছে। ফলের দামও খুব একটা বাড়েনি। তবে রোজার অনেক আগে থেকে শুরু হওয়া চাল ও তেলের বাজারের অস্থিরতা এখনো কাটেনি। চাল ও ভোজ্যতেলের দাম কমলে সাধারণ মানুষ আরেকটু স্বস্তি ফিরে পেত।
যশোরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, রোজার শুরুতে বেগুন, শসা ও লেবুর দাম বাড়লে তা এখন অনেকট নিম্নমুখী। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমেছে। প্রতি কেজি বেগুন ৬০ থেকে ৭০, শসা ৩০ থেকে ৪০ এবং প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৪০ থেকে ৫০, টমেটো ৩০ থেকে ৪০, আলু ২৫ থেকে ৩৫ ও করলা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এ ছাড়া বয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ২০০, কক মুরগি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাছের দামও মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আছে।
বাজারে অধিকাংশ সবজিতে অনেকটা স্বস্তিবোধ করছেন ক্রেতারা। রফিকুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা জানান, এবাবের রোজার মাসে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পায়নি। স্বস্তিতে বাজার করা যাচ্ছে। ভোজ্যতেলের দাম কমানো সম্ভব হলে সাধারণ মানুষের কোন অভিযোগ থাকত না।
আরও পড়ুন: হকারের দখলে ঢাকা কলেজের ফটক, ফুটপাতে হয়রানির শিকার পথচারী
সাঈদ মল্লিক নামের আরেক ক্রেতা বলেন, রোজায় তেমন জিনিসপত্রের দাম বাড়েনি। কিছু চালের দাম বেড়েছে। তাও খুব বেশি না। ভোজ্যতেলের দাম কমলে সবাই উপকৃত হতো।
এদিকে ভোক্তাদের অভিযোগ, লাখ লাখ টন চাল আমদানি করেও কমানো যায়নি দাম। তেলের দাম নানা কৌশলে বেড়েছে একাধিক দফায়। কাঁচা বাজারের স্বস্তি মিললেও চাল আর তেল কিনতে গিয়ে হতাশ হতে হচ্ছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, বাজারে গত এক বছরে মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ। মাঝারি চালের প্রায় ১৪ এবং মোট চালের ৫ শতাংশ দাম বেড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভরপুর আমন উৎপাদনের বছরে চালের বাজারে অস্থিরতা না কমাতে পারা সরকারের ব্যর্থতা। রোজার আগে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার চালের দাম কমানোর জন্য পদক্ষেপ নিলেও তার কার্যকারিতা বাজারে দেখা যায়নি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধি অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, আমন মৌসুমে এরপর বন্যায় উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমনে উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৭৮ লাখ টন। তাছাড়া সরকারের সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে গেল আট মাস ধরেই চাল আমদানি হচ্ছে। এ সময়ে মিয়ানমার, ভারত ও পাকিস্তান থেকে ৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪০০ টন চাল আমদানি হয়েছে।
আরও পড়ুন: বান্দরবান সীমান্তে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলিতে বাংলাদেশি যুবক আহত
যশোরের বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি মোটা চাল ৫৪ থেকে ৫৫, পাইজাম ৫৫ থেকে ৫৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রোজার আগে এসব চাল ২-১ টাকা কমে কেনা গেছে। মাঝারি চালের কেজিতে গত দুই সপ্তাহের মধ্যে ২ থেকে ৩ টাকা বেড়েছে। যা বিক্রি হচ্ছে ৬৪ থেকে ৬৫ টাকায়। তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সরু চালের দাম। প্রতি ২৫ কেজির বস্তা সরুচাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১০০ টাকায়, যা ১০ দিন আগে বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৯৭৫ থেকে ২ হাজার টাকায়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মৌসুম শেষের দিকে প্রতি বছর সরু চালের দাম বাড়ে। কিন্তু এবার পর্যাপ্ত চাল আমদানি হওয়ার পরও সরু চালের নাম বাড়া অযৌক্তিক।
যশোরের বড় বাজারের চাল ব্যবসায়ী অজয় রায় বলেন, মৌসুম শেষ। শেষ হওয়ায় মূলত সরু চালের দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি চালে ৪ ও প্রতি বস্তায় ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে। তবে আগামী দুই মাসের মধ্যে নতুন ধান উঠলে সরু চালের বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
এদিকে চালের মতো ভোজ্য তেলের বাজারের অস্থিরতা কাটেনি। তেল আমদানির ফল ভোক্তারা না পেলেও এর সুবিধা ব্যবসায়ীরা নিচ্ছেন। প্যাকেট সোয়াবিন তেলের তুলনামূলক কম থাকায় বাজারে প্যাকেট তেল তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। পাঁচ লিটারের তেল নেই বললেই চলে। এক থেকে দুই লিটারের বেশি প্যাকেট তেল নেই।
আরও পড়ুন: খালে ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ—চোখ ওঠানো, খুলিতে আঘাত
যশোরের বড় বাজারের সাহা স্টোরের স্বত্বাধিকারী পার্থ সাহা বলেন, চাহিদা অনুযায়ী তেল পাওয়া না। কিন্তু কোম্পানিগুলো তেল দিলেও বিভিন্ন লিটারের বোতল ভাগ করে দিচ্ছে। তাতে প্রতিনিয়ত তেল নিয়ে ভোক্তাদের সঙ্গে আমাদের বাগবিতন্ডায় জড়াতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে যশোরের অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদার বলেন, প্রতিনিয়ত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। কোনোভাবেই অসাধু চক্র যেন জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে না পারে। রোজায় যশোরবাসী তুলনামূলক বেশ স্বস্তিতে আছেন। নিয়মের ব্যত্য়য় ব্যবসায়ীকে ছাড় দেওয়া হবে না।