ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ১০৭ নম্বর হয়ে যায় ১২৭

বাংলাদেশ ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংক  © ফাইল ফটো

বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে তৈরি করা প্যানেল থেকে জালিয়াতি করে দুজনের নাম বাদ দেন কিছু অসাধু কর্মকর্তা। এর পরিবর্তে কম নম্বর পাওয়া দুজনের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। পরে প্যানেল চূড়ান্ত করা হয় বলে দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে। জানা যায়, ৭৪৫ জন কর্মকর্তা নিয়োগের একটি পরীক্ষায় ওই জালিয়াতি করা হয়।

পরে অবশ্য বিষয়টি ধরা পড়লে ওই দুজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। প্রকৃত নিয়োগ পাওয়া দুজনকেই নিয়োগ দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি বিশেষ তদন্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। এ ঘটনার জন্য ব্যাংকের প্রশাসন বিভাগের ছয় কর্মকর্তাকে দায়ী বলে চিহ্নিত করা হয়। তবে ওই ঘটনার পর সাড়ে পাঁচ বছরেও কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে ২০১৪ সালের ৩০ মে নিয়োগ পরীক্ষা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ পরীক্ষা নিয়ে প্যানেল তৈরি করে পাঠায়। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রশাসন বিভাগের নিয়োগ শাখায় ওই দুটি উত্তরপত্রের নম্বর কাটাকাটি করা হয়। তখন ১০৭ নম্বর থেকে বাড়িয়ে করা হয় ১২৭। বিষয়টি ব্যাংকের নিজস্ব অডিটে ধরা পড়লে তা গভর্নরের নজরে আনা হয়। তৎকালীন গভর্নরের নির্দেশে পরের বছরের ২৫ মে এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়। তদন্তের প্রতিবেদন পেলে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়।

পরে বিষয়টি নিয়ে ঢাবির সমাজবিজ্ঞান অনুষদের তৎকালীন ডিন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের মতামত নেওয়া হয়। এতে প্রমাণিত হয়, উত্তরপত্রের প্রাপ্ত নম্বর কাটাকাটি করে জালিয়াতি হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, নিয়োগ বিভাগের তখনকার ডিজিএম লিখিতভাবে বিষয়টি স্বীকার করেছিলেন তদন্ত কমিটির কাছে। প্রভাবশালী মহলের চাপে উত্তরপত্র ঘষামাজা করে তাদের প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে সে মহলকে শনাক্ত করা হয়নি। এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ কার্যক্রম গতি পাওয়ায় অনেক আগের ঘটনা হলেও বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। জালিয়াতির কাজটি করেন তৎকালীন একজন উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম)। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার সুপারিশও করা হয়। এছাড়া মানবসম্পদ বিভাগের তখনকার জিএম‘র দায়িত্বে অবহেলার কারণে ঘটনাটি ঘটে। এজন্য ব্যাখ্যা তলবের কথাও বলা হয়। এছাড়া প্যানেলটি যাচাই-বাছাই ছাড়াই স্বাক্ষর করায় তৎকালীন এক যুগ্ম-পরিচালক, উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক ও এক সেইফগার্ড কর্মকর্তার কাছেও কাছেও ব্যাখ্যা তলব করতে বলা হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঘটনাটি অনেক আগের, তখন আমি দায়িত্বে ছিলাম না। ফলে এ বিষয়ে বলতে পারব না। যে দুজনের প্রাপ্ত নম্বর টেম্পারিং করে চূড়ান্ত প্যানেলে ঢুকানো হয়েছিল, তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি।’


সর্বশেষ সংবাদ