কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে সিনিয়র-জুনিয়র সংঘর্ষে আহত ৫

শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে ব্যাপক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে
শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে ব্যাপক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে  © টিডিসি রিপোর্ট

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শহীদ নাজমুল আহসান হলের সিনিয়র-জুনিয়র শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্তর্কোন্দলের জেরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (৫ জুন) সন্ধ্যায় নাজমুল আহসান হলে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৫ জন আহত হয়েছেন।

হলের নিয়ম-শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে সংঘর্ষের লিপ্ত হওয়ার কারণে ৪ জনকে পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল আলম। তিনি জানান, এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, শহীদ নাজমুল আহসান হলের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীদের গেস্টরুমের নামে মারধর করেন ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থীরা। এ কারণে হলের সিনিয়রদের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীরা। পরে সুযোগে এদিন সন্ধ্যায় হলের সিনিয়রদের সাথে সংঘর্ষে জড়ায় ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীরা। 

এসময় অন্যান্য হল থেকে বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা ঝামেলা মেটাতে আসলে তাদের সকলের ওপর চড়াও হন ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে ঘটনাটি মারামারি আকার ধারণ করে। পরে হলের ভেতর জানালার কাচ ভাঙচুর করেন তারা। তবে এতে তাৎক্ষণিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।

অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, ছাত্রলীগের কর্মী যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত তাদের সাথে ছাত্রলীগের অন্যান্য বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলের ছিট সংক্রান্ত কারণে অন্তর্কোন্দলের সৃষ্টি হয়। পরে নিজেদের মধ্যে গালাগালি ও কথা কাটাকাটি থেকে এক পর্যায়ে ঘটনা সংঘর্ষে রূপ নেয়।

এসময় লাঠিসোঁটা, ইট-পাটকেল নিয়ে নাজমুল আহসান হল রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। মারামারির সময় হলের বেশ কিছু রুমের জানালা, দরজা ভেঙে ফেলা হয়। মারামারির একপর্যায়ে ছাত্রলীগের সভাপতি পরিস্থিতি শান্ত করতে ঘটনাস্থলে আসলে তাকে উদ্দেশ্যে করেও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়।  

মারামারিতে ২য়, ৩য় ও ৪র্থ বর্ষের মোট ৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজনকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় বলে জানিয়েছেন হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল আলম।

এ ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, সন্ধ্যা সাতটার কিছু আগে টিএসসিতে বন্ধুদের সাথে বসে ছিলাম। হঠাৎ করে নাজমুল আহসান হল থেকে প্রচণ্ড হট্টগোল শুনতে পাই। কিছুটা এগিয়ে যেতেই ওই হলের এক বড় ভাইয়ের সাথে দেখা হলে তিনি বলেন যে, হলে মারামারি হচ্ছে। এর কিছুক্ষণ পরেই কয়েকজন শিক্ষার্থীকে প্রাণপণে দৌড়ে যেতে দেখি। তাদের পেছনে আরও কয়েকজনকে ধাওয়া করে যেতে দেখতে পাই।

তিনি আরও বলেন, ধাওয়াকারীরা রীতিমতো ‘ধর ওদের ধর ওদের’ বলতে বলতে দৌঁড়াচ্ছিলেন। এর কিছুক্ষণ পরেই ওই হল এবং পুবালী ব্যাংক সংলগ্ন সড়ক দিয়ে ১২-১৫টি মোটরসাইকেলকে যেতে দেখি।এক একটি মোটরসাইকেলে ২-৩ জন করে ছিলেন এবং প্রত্যেকের হাতেই বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র (রামদা, ছুরি, হকিস্টিক, ক্রিকেট স্ট্যাম্প, সাইকেলের চেইন ইত্যাদি) ছিল। মোটরসাইকেলগুলো নিয়ে তারা বোটানিক্যাল গার্ডেনের সামনে দিয়ে কেআর মার্কেট এবং কৃষি অনুষদের করিডোর হয়ে আব্দুল জব্বার মোড়ের দিকে চলে যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য প্রতিষেষক শাখার (হেলথ কেয়ার সেন্টার) ডেপুটি চীফ মেডিকেল অফিসার ডা. পার্থ সেন বলেন, আমার কাজ শুরু হয়েছে রাত ৯টা থেকে। আমার আগে বিকাল ৩টা থেকে ডিউটিতে ছিলেন ড. মো. সাদিকুল ইসলাম খান। তিনি আমাকে যতটুকু জানিয়েছেন তাতে আহত অবস্থায় কোনো শিক্ষার্থী হেলথ কেয়ারে আসেননি। শিক্ষার্থীরা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে নিজেরাই হয়ত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে গিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানার জন্য ডা. সাদিকুল ইসলামের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

ঘটনার বিষয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. মো. আরিফ সাকিল বলেন, হলের নিয়ম-শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কারণে ওই ঘটনার সাথে জড়িত ২য় বর্ষের চারজন শিক্ষার্থীকে প্রক্টরিয়াল বডির কাছে হস্তান্তর করেছেন হল প্রভোস্ট। বর্তমানে তারা কোতোয়ালী থানায় পুলিশের হেফাজতে আছেন। পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল আলম বলেন, কি কারণে ঘটনাটি ঘটেছে আমরা এখনো বলতে পারছি না। আমরা চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে ঘটনা কি ঘটেছে। এই ব্যাপারে সবার সহায়তা কামনা করছি।

ঘটনায় হতাহতের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, এই ঘটনায় পাঁচ জনের আহত হয়েছেন। যার মধ্যে চারজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এবং একজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। আরও চারজনকে প্রক্টরের হাতে তুলে দিয়েছি। পরে তারা তাদেরকে কি করেছেন এই ব্যাপারে আমরা বলতে পারছি না।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence