মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে © সংগৃহীত
দেশ ও জনগণের বিজয়ের আনন্দঘন উপলক্ষ্য আরো বর্ণিল আনন্দময় এবং অর্থবহ করতে এবারও বিএনপি সারাদেশে সাড়ম্বরে গৌরবের ৫৫তম মহান বিজয় দিবস উদযাপন করতে আলোচনা সভা, বিজয়ের রোড শোসহ মাসব্যাপীবিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার (২৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ‘বিজয়ের মাসে বিজয় মশাল রোড শো’ সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তিনি জানান, কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপির উদ্যোগে ১ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে বিশেষ কর্মসূচি ‘বিজয়ের মাসে বিজয় মশাল রোড শো’।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আপনারা জানেন, ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে চট্টগ্রামের কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান। সুতরাং কালুরঘাট আমাদের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের অনিবার্য অংশ। এই ঐতিহাসিক কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকেই শুরু হবে এবারে বিএনপির ‘বিজয় মাস’ উদযাপন কর্মসূচি।
তিনি বলেন, ১ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক স্থান চট্টগ্রামের কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বিজয় মশাল যাত্রা শুরু করবে। মশাল মিছিল কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে যাত্রা শুরু করে একই দিন চট্টগ্রামের বিপ্লব উদ্যানে পৌঁছবে। বিজয় মিছিলের মশাল বহন করবেন ১৯৭১ সালের একজন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা এবং ২০১৪ সালের একজন জুলাই যোদ্ধা। আমরা মনে করি, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল দেশের স্বাধীনতা অর্জনের আর ২০২৪ হলো দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা রক্ষার।
ফখরুল বলেন, ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে কুমিল্লা, সিলেট, ময়মনসিংহ, বগুড়া, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুরে বিজয় মশাল রোড শো এবং সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি বিভাগে মশাল বহন করবেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা এবং একজন জুলাই যোদ্ধা। দুই সপ্তাহের এই বিশেষ ‘রোড শো’ উদযাপনের সময় বিভিন্ন বিভাগের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন, জাতীয় সঙ্গীত, মুক্তিযুদ্ধের গান, দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন, স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, মাদার অফ ডেমোক্রেসি বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্যের নির্বাচিত অংশ প্রচার, জাসাসের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ডকুমেন্টারী প্রদর্শিত হবে। একইসঙ্গে জনগনে সামনে তুলে ধরা হবে একটি নিরাপদ, সমৃদ্ধ এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মানে বিএনপির ৩১ দফা কর্মসূচি। এই পুরো আয়োজনে বিএনপির থিম সং, ‘সবার আগে বাংলাদেশ’।
তিনি বলেন, দেশের সকল বিভাগ ঘুরে বিজয় মশাল সবশেষে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় এসে পৌঁছবে। একইদিন ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউতে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ‘বিজয়ের মাসে বিজয় মশাল রোড শো’।বিজয় মাস উপলক্ষ্যে এই বিশেষ কর্মসূচি ছাড়াও পাশাপাশি আরো অন্যান্য কর্মসূচী উদযাপিত হতে থাকবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১৯৭১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত লাখো মানুষ শহীদ হয়েছেন। লাখো প্রাণের বিনিময়ে ৭১ এর স্বাধীন বাংলাদেশ, ৭৫ এর ৭ নভেম্বর এর আধিপত্যবাদবিরোধী তাঁবেদারমুক্ত বাংলাদেশ, ৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী বাংলাদেশ, এবং ২০২৪ এর ফ্যাসিবাদবিরোধী বাংলাদেশ।বাংলাদেশের ইতিহাসের এমন প্রতিটি বাঁকে এতো মানুষ কেন অকাতরে জীবন দিয়েছিলেন? কি ছিল শহীদদের স্বপ্ন ? এবারের বিজয় দিবসের প্রত্যয় হোক শহীদদের সেই স্বপ্ন পূরণের বাংলাদেশ।শহীদদের স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মানের জন্য আগামী ফেব্রুয়ারী মাসের জাতীয় নির্বাচন দেশের স্বাধীনতাপ্রিয় গণতন্ত্রকামী জনগণের সামনে এক বিশাল সুযোগ।
মির্জা ফখরুল বলেন, দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় ধরে গণতান্ত্রিক অধিকারহারা জনগণ ফ্যাসিবাদী শাসন শোষণে অত্যাচারিত হয়েছেন। ফ্যাসিবাদ বিরোধী ধারাবাহিক আন্দোলন সংগ্রামের জেরে শেষ পর্যন্ত হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে ২০২৪ সালে দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছে।গণতন্ত্রকামী স্বাধীনতাপ্রিয় দেশবাসীর কাছে ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে বিজয়ের আনন্দ ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মের সাধারণ সম্পাদক একে এম কামরুজ্জামান নান্নু এবং বিজয়ের রোড শো কর্মসূচি উদযাপন কমিটির সদস্য জুবায়ের বাবু।