ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

নিয়োগ না পাওয়ার পর শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ছাত্রীর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস (এমআইএস) বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি অভিযোগ এনে ভিসি বরাবর চিঠি দিয়েছেন ওই বিভাগের প্রাক্তন এক ছাত্রী।

আজ মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) এই চিঠি দিয়েছেন বিভাগের ৬ষ্ঠ ব্যাচের ওই ছাত্রী। একই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেকশন বোর্ড কর্তৃক ওই বিভাগের দুইজন সহকারী অধ্যাপক এবং দুইজন প্রভাষক নিয়োগের সুপারিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সভায় উঠেছিল। আর ওই ছাত্রী নিয়োগপ্রার্থীর (প্রভাষক) একজন ছিলেন।

সিলেকশন বোর্ডের সহকারী অধ্যাপক পদের সুপারিশ গ্রহণ করেছে সিন্ডিকেট। ওই ছাত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রভাষকের পদেরটা স্থ‌গিত করা হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রভাষকের পদের মধ্যে একজন আবেদনকারীর বিবিএ এবং এমবিএ দু‌টো‌তেই ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট। তিনি তার বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন। সভায় উপস্থিত একজন সদস্য দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে ওই ছাত্রী ২০১৯ সালের মে মাসে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের তৎকালীন ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের কাছে অধ্যাপক আকরামের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। তবে সে সময় এই অভিযোগটি গোপন ছিল। সেই অভিযোগে ছাত্রী বলেছিলেন, আমার ব্যাচে আমি বিবিএ এবং এমবিএ রেজাল্ট প্রথম স্থান অর্জন করেছি। সে সময় বিভাগটিতে শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে অধ্যাপক আকরাম হোসেনের সাথে দেখা করতে গেলে তিনি শারীরিক সম্পর্কের কুপ্রস্তাব দেন। ঘটনাটির প্রমাণ হিসেবে ভয়েস রেকর্ড রয়েছে।

এদিকে আজকের লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ২০১৮ সালের শিক্ষক নিয়োগের আগে অধ্যাপক আকরাম আমাকে অনৈতিক প্রস্তাব দেন। সে সময় রাজি না হওয়ায় আমাকে ওই নিয়োগ থেকে বাদ দিয়ে আমার সমমান রেজাল্টধারী দক্ষিণাঞ্চলের এক প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এবার ২০২২ সালেও আবারও শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেখে আবেদন করি। এই ভেবে যেহেতু তিনি (অধ্যাপক আকরাম) আমার শিক্ষক ছিলেন এবং এখন সবঠিক হয়ে গেছে। কিন্তু এবারও আমার বিবিএ ও এমবিএ দুটোতেই প্রথম হওয়া সত্বেও বাদ দেওয়া হচ্ছে। তাই আমি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাচ্ছি। অভিযোগের অনুলিপি সব সিন্ডিকেট সদ্যস্যদেরও দেওয়া হয়েছে।

বিভাগ সূত্রে জানা যায়, যৌথভাবে বিবিএ এবং এমবিএ দু‌টো‌তেই ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েছিলেন অভিযুক্ত ওই ছাত্রী এবং তার ব্যাচের আরেকজন শিক্ষার্থী। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে ওই শিক্ষার্থী বিভাগের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পান।

এদিকে, ওই ছাত্রীর ২০১৯ সাল ও আজকের অভিযোগের কিছুটা অমিল পাওয়া গেছে। ২০১৯ সালের অভিযোগে বলা হয়েছে, সে সময় শিক্ষক নিয়োগের আগে বিভাগটির অধ্যাপক আকরাম হোসেন আমাকে একটি অভ্যন্ত অনৈতিক ও ঘৃণ্য প্রস্তাব দেয়। নিয়োগের ব্যাপারে অধ্যাপক আকরাম হোসেনের সাথে দেখা করতে গেলে তিনি শারীরিক সম্পর্কের কুপ্রস্তাব দেন।

এদিকে, আজকের অভিযোগে বলা হয়, ২০১৮ সালে শিক্ষক নিয়োগের আগে বিভাগটির অধ্যাপক আকরাম আমাকে একটি অত্যন্ত অনৈতিক ও ঘৃণ্য প্রাস্তাবসহ আমার স্পর্শকাতর স্থানে পাশবিকভাবে নির্যাতন করে।

জানা যায়, গত ৩১ তারিখে ওই বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার (২৫ এপ্রিল) সিলেকশন বোর্ড বসে। সেখানে প্রভাষক পদের বিপরীতে ৮ জন প্রার্থীর মধ্যে ওই ছাত্রীসহ ৫ জন উপস্থিত ছিলেন। সেখান থেকে জাহাঙ্গীর আলাম ও সুমাইয়া সিদ্দিকা নামে ২ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। সুপারিশ আজকের সিন্ডিকেটের সভায় উঠালে ওই ছাত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সুপারিশটি স্থগিত করা হয়।

সভায় উপস্থিত সিন্ডিকেটের এক সদস্য বলেন, এক ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগ দিলে প্রভাষক নিয়োগের সুপারিশটি স্থগিত করা হয়।

জানতে চাইলে ওই ছাত্রী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অভিযোগটি আমি ভিসির কাছে জমা দিয়েছি। অভিযোগের সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ জমা দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনার সময় একটা রেকর্ড আমার কাছে আছে। এসময় তিনি রেকর্ডটি এ প্রতিবেদককে দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তাছাড়া তিনি রেকর্ডটি প্রামণস্বরূপ ভিসি বরাবর অভিযোগের সঙ্গে সংযুক্ত করেননি।

এদিকে বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সিলেকশন বোর্ড থেকে যাদেরকে প্রভাষক পদের জন্য সুপারিশ করছে হয়েছে তাদের নিজ নিজ ব্যাচে বিবিএ ও এমবিএতে ডাবল ফাস্ট ক্লাস এবং গোল্ড মেডেলিস্ট। তাছাড়া অভিযোগকারীর চেয়ে তাদের দুইজনের সিজিপিএও অনেক বেশি।

জানতে চাইলে অধ্যাপক আকরাম বলেন, অভিযোগ সত্যি হলে এতোদিন কেন গোপন রেখেছেন অভিযোগকারী? গতকাল চাকরি না পাবার জন্যই আজকের এই অভিযোগ। তার মানে চাকরি পেলে অভিযোগ দিতেন না। তাই আমি মনে করি এ অভিযোগটি অগ্রহণযোগ্য ও সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাছাড়া ২০১৯ সালে অনুষদের সাবেক ডিনের এবং আজকের চিঠি, দুটির মধ্যে কোনো মিল নেই বলেও তিনি দাবি করেন।

এ ব্যাপারে মানহানির মামলা করবেন বলেও জানান অধ্যাপক আকরাম। আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনজীবীর পরামর্শও শুরু করেছেন বলে তিনি জানান।

বিষয়টি জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানকে মুঠোফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ওই ছাত্রীর অভিযোগপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলে পাঠানো হয়েছে। ওই সেলের তদন্ত প্রতিবেদন আলোকে ওই ছাত্রীর নিয়োগের বিষয়ে সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেকশন বোর্ডের সভাপতি ও প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, নিয়োগে কোনো বৈষম্য হয়নি। সর্বোচ্চ নম্বরধারী দুজনকে নিয়োগ বোর্ড সম্মতিক্রমে নিয়োগের সুপারিশ করেছে। সুপারিশ করার পরদিন এক প্রার্থী অভিযোগটি করেছেন। সিন্ডিকেট সেজন্য নিয়োগটি আপাতত স্থগিত রেখেছে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence