জেল খেটে এসে অফিসে ‘অসুস্থতার ছুটি’ আবেদন, নেয়া হচ্ছে ব্যবস্থা
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২২, ০৬:৪০ PM , আপডেট: ২২ মার্চ ২০২২, ০৬:৪০ PM
ইয়াবা বিক্রি করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে মাদক মামলায় একদিন জেল খেটেছেন। জেল থেকে বেরিয়ে এসে অফিসে অসুস্থতা দেখিয়ে মিথ্যা ছুটির আবেদন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর মো. সাব্বির আলম। কিন্তু তার অসুস্থতার কোন লক্ষণ না পেয়ে ছুটি মঞ্জুর করেনি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস।
সাব্বির আলমের মামলার পত্রে দেখা যায়, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টায় রাজধানীর কাঁটাবন এলাকা থেকে পুলিশের হাতে মোটরসাইকেলসহ ৯০ পিস ইয়াবাসহ ধরা পড়ে মো. আসলাম উদ্দিন রাজু ও মো. সাব্বির আলম।
রাজু গাউসুল আজম মার্কেটের মামা হোটেলের স্বত্ত্বাধিকারী আর সাব্বির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর। তাদেরকে আটক করে নিউ মার্কেট থানার উপ-পরিদর্শক সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন। সেদিন রাতেই তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়। মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হলে একদিন পর জামিন পান তারা।
জেলে থাকায় সাব্বির ২৭ তারিখ রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে তার কর্মস্থল আসতে পারেননি। ২৮ ফেব্রুয়ারি জেল থেকে বের হয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তর বরাবর মেডিকেল ছুটির আবেদন করেন। আবেদন পত্রের সাথে কারণ হিসেবে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের একটি চিকিৎসাপত্র সংযুক্ত করেন।
আরও পড়ুন: ঢাবিতে সান্ধ্য কোর্স আসছে ‘অনিয়মিত প্রোগ্রাম’ নামে
আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, আমি গত মাসের ২৪ ফেব্রুয়ারি অফিস শেষে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জস্থিত আমার শশুর বাড়িতে যাই। কিন্তু ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক হয়ে আমার নিজ বাসায় আসার পথে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হই এবং সেখানে আমার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি ছিটকে পড়ে গিয়ে ভেঙ্গে যায়।
পরে আমার পরিবারের লোকজন আমাকে ২৭ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। তারা ডাক্তারের সঙ্গে ব্যস্ত থাকায় আমি অফিসে জানাতে ব্যর্থ হই। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন (ব্যবস্থাপত্র) অনুযায়ী আমাকে পূর্ণ ১৫ (পনের) দিনের বিশ্রাম নিতে বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী আমাকে ২৭ ফেব্রুয়ারি হতে আগামী ১৩ মার্চ পর্যন্ত মেডিকেল ছুটির আবেদন করছি।
এদিকে সাব্বিরের আবেদনের সাথে তার শারিরীক অবস্থার কোন মিল না থাকায় তার আবেদন গ্রহণ করেনি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তর বলে জানান তার অফিসের দায়িত্বরত একাধিক কর্মকর্তা।
মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে তার বিরুদ্ধে মামলা থাকার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরীর কাছে জানতে চাওয়া হয়। তখনও তিনি সাব্বিরের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার কথা জানতেন না বলে জানান। পরে মামলার বিষয়ে খোঁজ নিলে তারা মামলার সত্যতা পায়।
এ বিষয়ে সাব্বির আলম প্রথমে সবকিছু অস্বীকার করেন। তবে পুলিশের কাছে আটক হওয়া কথা স্বীকার করেন তিনি। তিনি বলেন, আমার কোন মন্তব্য নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যা চায়, যে সিদ্ধান্ত নেবে। তার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের দায়িত্বরত একাধিক কর্মকর্তা জানান, আমরা এটি নিয়ে একটি মিটিংয়ে বসবো। সেখানে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আমি বিষয়টা জানি না। কেউ যদি এরকম কাজ করে থাকে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। কি শাস্তি হবে সেটা এখনই বলতে পারছি না।