এক কমিটিতেই পাঁচ বছর রাবি ছাত্রলীগ, উদাসীন কেন্দ্র
- রায়হান ইসলাম
- প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:২৫ PM , আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২১, ০১:২৭ PM
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের এক বছর মেয়াদি কমিটি দিয়ে চলছে পাঁচ বছর। চার বছর আগে মেয়াদ শেষ হলেও নতুন কমিটির বিষয়ে নের্তৃবৃন্দের তেমন তৎপরতা না থাকায় ইতোমধ্যে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন অনেক নেতাকর্মী। অন্যদিকে যারা সক্রিয় আছেন তাদের ছাত্রত্ব নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। কমিটি করার বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের প্রস্তুতি থাকলেও এ বিষয়ে কেন্দ্রের কোন নির্দেশনা নেই বলে জানান তারা।
এদিকে, শাখা চার বছর ধরে নতুন কমিটি না হওয়ায় যেমন নতুন নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না, তেমনি ভেঙে পড়ছে সাংগঠনিক কাঠামো। সংগঠনটিতে বাড়ছে গ্রুপিং, তৈরি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। হতাশা নিয়ে রাজনীতি করার আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেক নেতাকর্মী।
পড়ুন: পরকীয়ার জেরে খুন, জেলহাজতে রাবি ছাত্রলীগ নেতা
তবে দীর্ঘ ছুটি শেষে আবার ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলমান হওয়ায় নতুন সম্মেলনের আশায় চাঙ্গা হচ্ছেন শাখা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীরা। হল সম্মেলনকে ঘিরে পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা ইতিমধ্যেই দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। ক্যাম্পাসে নিয়মিত করছেন মিছিল-মিটিং।
পড়ুন: মৌলবাদ প্রতিহত করবে রাবি ছাত্রলীগ
এমতাবস্থায় দ্রুত মেয়াদোত্তীর্ণ এই কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠনের মাধ্যমে সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতি ফেরানোর পাশাপাশি নতুন নের্তৃত্বের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তরের দাবি তুলেছেন সংগঠনের অনেক নেতা।
দ্রুত সম্মেলনের দাবি জানিয়ে রাবি শাখা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি হাবিবুল্লাহ নিক্সন বলেন, কমিটি না হওয়ার ফলে প্রায় ২৭০ জন নেতাকর্মীর মধ্যে ২২০ জনই বিয়ে সেরে ফেলেছেন। অনেকে চাকরি বা ছাত্রত্ব না থাকায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। ফলে সংগঠন একপ্রকার ঝিমিয়ে পড়েছে। তাই সংগঠনকে গতিশীলের উদ্দেশ্যে দ্রুত সম্মেলনের দেয়ার মাধ্যমে নতুন কমিটি দেওয়া দাবি জানাচ্ছি।
পড়ুন: বান্ধবী ইস্যুতে ছাত্র-শিক্ষকের ঝগড়া, উত্তেজিত রাবি ছাত্রলীগ
বর্তমান নেতৃবৃন্দের কমিটি না দেয়ার মানসিকতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে উল্লেখ আছে জেলা শাখা এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটির মেয়াদ এক বছর। ২০১৬ সালে আমাদের কমিটি হয়েছে। সে হিসেব অনুযায়ী ২০১৭ সালে কমিটির মেয়াদ শেষ।
তিনি বলেন, ২০১৯ সালে কমিটি দেওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের কমিটি না দেওয়ার মনমানসিকতা এবং হল কমিটির অজুহাতে কমিটি দেওয়া হয়নি। পরে কোভিডের জন্য দেওয়া হলো না।
বর্তমান কমিটির নের্তৃবৃন্দ কমিটির নামে মূলা ঝুলিয়েছেন মন্তব্য করে পদপ্রত্যাশী শাখা ছাত্রলীগের উপ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক তাওহীদ দুর্জয় বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ বছরের জন্য সবাই আসে। অথচ এক কমিটিতেই পাঁচ বছর পার হয়ে গেছে। ফলে অনেকেই রাজনৈতিক পরিচয় না পেয়ে রাজনীতি ছেড়ে অন্যদিকে ঝুঁকছে।
তিনি বলেন, হল সম্মেলনের কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক আমাদের ‘মূলা ঝুলিয়েছেন’। তাদের স্বদিচ্ছা থাকলে পাঁচ দিনের ভেতর হল সম্মেলন করতে পারতেন। আসলে কমিটি সচল না থাকলে রাজনৈতিক উর্বরতায় মরিচিকা পড়ে যায়। এজন্য খুব দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি দেওয়া প্রয়োজন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ২৫তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১১ ডিসেম্বর গোলাম কিবরিয়াকে সভাপতি ও ফয়সাল আহমেদ রুনুকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৩ সদস্যের প্রাথমিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
পড়ুন: শহীদ মিনারের বেদিতে বাইক চালালেন রাবি ছাত্রলীগ নেতা
এর প্রায় ছয় মাস পর পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। হিসেব অনুযায়ী ১ বছর মেয়াদী এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর। তবে কমিটির ৫ বছর শেষ হলেও নতুন কমিটির বিষয়ে রয়ে গেছে ধোঁয়াশা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি গোলাম কিবরিয়া জানান, নতুন কমিটির বিষয়ে এ মূহুর্তে কেন্দ্রের কোন নির্দেশনা নেই। আমরা নতুন কমিটি দেয়ার বিষয়ে প্রস্তুত আছি। কেন্দ্রীয় নেতারা যখনই চাইবেন, তখনই নতুন কমিটি দেয়া হবে। তাছাড়া নতুন কমিটির কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন, খুব দ্রুতই তা গঠন করা হবে।
এদিকে, গত পাঁচ বছরে হল কমিটি দিতে সক্ষম হয়নি মেয়াদোত্তীর্ণ বর্তমান এই কমিটি। গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারিতে হল সম্মেলনের উদ্যোগ নিলেও, ঠিক দু’দিন আগে তা স্থগিত করা হয়। ফলে হল সম্মেলনকে ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠা নেতাকর্মীরা যেমন হতাশ হয়েছেন, তেমনি রাজনীতি থেকে অনেকে গুটিয়ে নিয়েছেন নিজেকে।
হলের পদপ্রত্যাশীদের সূত্রে জানা যায়, গেল বছর হল সম্মেলনকে ঘিরে পদপ্রত্যাশীরা নিজ পকেট থেকে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করেছিলেন। যেখানে বিভিন্ন হল থেকে প্রায় সাড়ে ৪শ সিভি জমা পড়ে। প্রত্যেক সিভির জন্য ১ হাজার টাকা করে নেয় শাখা ছাত্রলীগ।
এছাড়া কর্মীদের নিয়ে শোডাউন, চা-চক্র, আনন্দ মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে অনেক টাকা খরচ করেও শেষমেশ এই সম্মেলন স্থগিত হওয়ায় হতাশ এই পদপ্রত্যাশী নেতারা।
হল সম্মেলনের বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি গোলাম কিবরিয়া জানান, আমরা হল সম্মেলনটা দ্রুত করতে চাই। কেননা, অনেক দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত আছে, তাদের রাজনৈতিক একটা পরিচয় থাকা দরকার। আমরা এবিষয়ে ঊর্ধ্বতন নেতাদের সাথে আলোচনা করেছি। খুব দ্রুতই এ সম্মেলন হবে বলে আশাবাদী এই সভাপতি।
কেন্দ্র থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসক জানান, কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। শিগগির রাবি ক্যাম্পাসে যাবো। সেখানকার পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।