চার মাসে সাতচল্লিশ দিনই আংশিক-পূর্ণ বন্ধ; বাধাগ্রস্ত নিরবচ্ছিন্ন পড়ার সুযোগ
- মোফাচ্ছেস এইচ ইমরান
- প্রকাশ: ০১ মে ২০২৫, ০৮:৩২ PM , আপডেট: ২২ জুন ২০২৫, ০৪:৫৬ PM

অবকাঠামোগত সংকুলানের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার এবং বিজ্ঞান গ্রন্থাগার কখনোই শিক্ষার্থীদের পড়ার চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়নি। আসন সংকটের কারণে শুধু পড়ার জায়গা নিশ্চিত করতে শিক্ষার্থীদের সকাল সকাল দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এতসব সমস্যার মধ্যে যখন লাইব্রেরি পরিচালিত হচ্ছে, তখন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে হাজির হয়েছে সাপ্তাহিক ছুটি ও বিভিন্ন সরকারি ছুটি। এর সাথে যোগ হয়েছে বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। শুক্রবার বিকেল তিনটায় খুলে রাত আটটায় বন্ধ এবং শনিবার সকাল দশটায় খুলে রাত আটটায় বন্ধের নিয়মে দীর্ঘদিন ধরে গ্রন্থাগার দুটি পরিচালিত হচ্ছে।
এসব কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ও বিজ্ঞান গ্রন্থাগার উল্লেখযোগ্য সময় বন্ধ থাকে, যা শিক্ষার্থীদের নিরবচ্ছিন্ন পড়ার সুযোগকে বাধাগ্রস্ত করে। শিক্ষার্থীদের দাবি, এসব সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটি ছাড়াই লাইব্রেরির নতুন সময়সূচি প্রণয়ন করা হোক। তারা নিরবচ্ছিন্ন পড়ার সুবিধার্থে সব ধরনের পরীক্ষার আসন থেকে গ্রন্থাগারকে মুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছেন।
নতুন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। এসব ভবনে উল্লেখযোগ্য আসন থাকায় কর্তৃপক্ষের কাছে লাইব্রেরিগুলো একপ্রকার পছন্দসই হয়ে উঠেছে। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা সম্প্রতি লাইব্রেরির মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত দু’মাসে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য পাঁচ দিন গ্রন্থাগার নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে বন্ধ রাখা হয়েছিল।
শুক্রবার এবং শনিবার নির্দিষ্ট সময়ে লাইব্রেরি খোলা থাকলেও যেকোনো সরকারি ছুটিতে লাইব্রেরি পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত শুক্রবার-শনিবারসহ বিভিন্ন সরকারি ছুটিতে মোট চার মাসে অন্তত সাতচল্লিশ দিন আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় এবং বিজ্ঞান গ্রন্থাগার।
চারমাসের ছুটিগুলোর মধ্যে- জানুয়ারিতে ১০ দিন, ফেব্রুয়ারিতে ৯ দিন, মার্চে ১৫ দিন এবং এপ্রিলে ১৩ দিন বন্ধ রাখা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী সুমন আহমেদ বলেন, "আমরা লাইব্রেরিতে এসে পড়াশোনা করি। কিন্তু যখন ভর্তি পরীক্ষাগুলো চলে, তখন পড়াশোনা করা সম্ভব হয় না। এছাড়া যদি শুক্রবারে লাইব্রেরি সকাল দশটা পর্যন্ত খোলা রাখা হয়, তাহলে আমাদের জন্য ভালো হবে।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর আলম সায়েম বলেন, "ভর্তি পরীক্ষা এবং বিভিন্ন সরকারি ছুটি আমাদের বড় সমস্যা। অনেক সময় সকাল বেলা উঠে লাইব্রেরিতে গিয়ে দেখি বন্ধ। খোঁজ নিলে জানতে পারি, আজ কোনো ভর্তি পরীক্ষা বা সরকারি ছুটি। আমরা চাই, সব ধরনের ভর্তি পরীক্ষা থেকে লাইব্রেরি যেন মুক্ত থাকে।"
তিনি আরও বলেন, "লাইব্রেরিতে যেকোনো সময় যে কেউ ঢুকে যায়, যা সত্যিই বিব্রতকর। পাবলিক টয়লেটের মতো অবস্থা। কয়েকটা বাচ্চা নিয়ে লাইব্রেরিতে ঢুকে সামনে এসে হাঁটাহাঁটি শুরু করে। এটা আমাদের জন্য অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এতগুলো হল ও বিভাগ বেড়েছে, কিন্তু লাইব্রেরি আগের মতোই রয়েছে।"
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক অধ্যাপক ড. কাজী মোস্তাক গাউসুল হক বলেন, "আমরা ভর্তি পরীক্ষার আগের দিন সিট প্ল্যানের জন্য তাড়াহুড়া করে গ্রন্থাগার বন্ধ করি না। পরের দিন তাড়াতাড়ি এসে সেই কাজটা করতে হয়। ভর্তি পরীক্ষার জন্য যদি ছাত্র-ছাত্রীদের কোনো সমস্যা হয়, তবে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য আমরা যা কিছু করতে পারি, সেটাই করব।"
শুক্রবার ও শনিবারের ভিন্ন সময়সূচির বিষয়ে তিনি বলেন, "আমাদের কর্মীদের কথা ভাবতে হবে। তবে যদি অনেক শিক্ষার্থী চাই, এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সামর্থ্য থাকে, আমরা অবশ্যই পদক্ষেপ নেব।"
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, "কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় আসলে পরীক্ষার হল হিসেবে লাইব্রেরিকে পছন্দ করা হয়। তারপরেও যদি শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা থাকে, আমরা অবশ্যই আলোচনা করব। এটি সাময়িক বিষয়। ভর্তি পরীক্ষার কয়েক মাস থাকে, তারপরেও লাইব্রেরি বাদ দেওয়ার সুযোগ থাকলে আলোচনা করব।"
শুক্রবার-শনিবারসহ সরকারি বিভিন্ন ছুটির বিষয়ে তিনি বলেন, "শুক্রবার এবং শনিবারের অন্যান্য দিনের মতো সময়সূচি দেয়া যায় কিনা, বা এই নিয়মটি শিক্ষার্থীবান্ধবভাবে পরিবর্তন করা যায় কিনা, তা আলোচনা করে দেখব। এছাড়া যারা এখানে কাজ করেন, তাদের নিয়ে আলাদা ম্যানেজমেন্ট করার চিন্তা করতে হবে।"