জুলাই আন্দোলন

মানবতাবিরোধী অপরাধের সমর্থনে মিছিল করা ঢাবি কর্মকর্তারা বহাল তবিয়তে

আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মিছিল করলেও তদন্ত ও ব্যবস্থা নেই

৪ আগস্ট রেজিস্ট্রার ভবনে মিছিল
৪ আগস্ট রেজিস্ট্রার ভবনে মিছিল  © সংগৃহীত

২০২৪ সালের ৪ আগস্ট। দেশজুড়ে উত্তাল পরিস্থিতি। স্বৈরাচারী হাসিনার পতনের মাত্র একদিন বাকি। সেদিনও এই স্বৈরাচারকে টিকিয়ে রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রেজিস্ট্রার ভবনের অভ্যন্তরে মিছিল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫ থেকে ৪০ কর্মকর্তা-কর্মচারী। সেসময় যারা তাদের মিছিলে যোগ দেয়নি, যাদেরকে রুমে বসে থাকতে দেখেছে সবাইকে দেখে নেওয়ার হুমকিও দেয়া হয়েছিল।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও বহাল তবিয়তে আছেন স্বৈরাচারের দোসর সেই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল উপাচার্য থাকাকালীন তার অফিসে থাকা কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘লোক দেখানো’ অফিস বদলি ছাড়া কাউকেই শাস্তির আওতায় আনা হয়নি।

মিছিলের শেষের দিকে সংক্ষিপ্ত সমাবেশও করা হয়

মানবতাবিরোধী অপরাধের সমর্থনে সেদিন আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মিছিল করলেও তদন্ত ও ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

সেদিনের ৯ মিনিটের মিছিলের একটি ভিডিও পর্যালোচনা করে এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে ৩৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতি নিশ্চিত করে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস।

রেজিস্ট্রার ভবনে রাজনৈতিক মিছিলের সুযোগ নেই
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুনসী শামস উদ্দিন আহম্মদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘অনেক সময় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়। সেটা একটা বিষয়। কিন্তু দলীয় রাজনৈতিক মিছিল করার সুযোগ নেই। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনে বলে কথা নেই, যেকোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে এরকম মিছিল করার সুযোগ নেই।’ 

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার জানা নেই শাস্তিস্বরূপ তাদের বিরুদ্ধে কোনো উদ্যোগ নিয়েছে কিনা।’

কে কোথায় এখন?
উপাচার্য অফিসের ডেপুটি রেজিস্ট্রার জনাব মুহাম্মদ লাভলু মোল্লাহ, ডেপুটি রেজিস্ট্রার মঞ্জুর হোসেন, ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. আরাফাত হোসেন, সেকশন অফিসার নিপু ইসলাম তন্বী, উচ্চমান সহকারী মো. মাহমুদুল হাছান তানভীর ও প্রধান সহকারী মো. নয়ন হাওলাদারকে রেজিস্ট্রার অফিসে বদলি করা হয়েছে। তাছাড়াও, সিনিয়র সুপার ভাইজার মো. মোজাম্মেল হককেও অন্যত্র বদলি করা হয়েছে।

প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অফিসের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. সাইদুল ইসলাম স্বপদে বহাল আছেন। প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অফিসের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহমুদা খানম সুমিকে অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোতে বদলি করা হয়েছে। পাশাপাশি সহকারী রেজিস্ট্রার আজম রানাকেও এই অফিস থেকে সরানো হয়েছে। তবে সহকারী রেজিস্ট্রার সুমনা আক্তার স্বপদে বহাল আছেন।

স্বপদে বহাল আছেন কোষাধ্যক্ষ অফিসের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ রুহুল আমিন, রেজিস্ট্রার অফিসের ডেপুটি রেজিস্ট্রার সালমা বিনতে হক, কলেজ উপ-পরিদর্শক হাসান জামিল শিশির, সহকারী রেজিস্ট্রার শারমিন জাহান, সহকারী রেজিস্ট্রার মাহমুদা সুলতানা হেলেন, সহকারী রেজিস্ট্রার শেখ মো. গিয়াস উদ্দিন, এস্টেট অফিসের নিম্নমান সহকারী মো. আমান উল্লাহ আমান, আইসিটি সেলের সিনিয়র টেকনিক্যাল অফিসার শেখ আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধান প্রকৌশলীর অফিসের সেকশন অফিসার মো. রেজাউল ইসলাম ও সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী গ্রন্থাগারিক মো. ইউসুফ আলী।

এছাড়াও, হিসাব পরিচালক অফিসের উপ-হিসাব পরিচালক মো. তারিক হাছান, সহকারী হিসাব পরিচালক মো. আল মামুন, অডিট শাখার প্রধান সহকারী মো. সাইফুল ইসলাম, কলা অনুষদ ডিন অফিসের সিনিয়র সহকারী রেজিস্ট্রার মো. আক্তার হোসেন, সিনিয়র সহকারী রেজিস্ট্রার মজুমদার মো. মকবুল হোসেন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রিন্সিপাল কম্পিউটার অপারেটর অফিসার অসীম কুমার দাস, বাংলা বিভাগের সিনিয়র প্রশাসনিক কর্মকতা রীনা বেগম, শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান, সূর্যসেন হলের প্রিন্সিপাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার আব্দুল মোতালেব, ইন্টারন্যাশনাল হলের প্রিন্সিপাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার এমদাদুল ইসলাম, পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষা ইন্সটিটিউটের প্রিন্সিপাল টেকনিক্যাল অফিসার মো. আল মামুন খান, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক রফিকুল ইসলাম সুজন এবং আইন বিভাগের ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট মমিনুর রহমান মমিন বহাল তবিয়তে স্বপদে আছেন বলে নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা।

সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে গুরুত্ব দিয়ে দেখব
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়েমা হক বিদিশা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসলে সেটা গুরুত্ব সহকারে দেখি। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে অনেক অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থাও নিয়েছি। এখন যদি কেউ কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগ দেয়, সেটাও আমরা বিবেচনা করব।


সর্বশেষ সংবাদ