বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্থবিরতা, সেশন জটের শঙ্কা

বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা   © ফাইল ছবি

দেশজুড়ে চলা ছাত্র-জানতার আন্দোলনে সরকারের পট পরিবর্তনের পর পুনরায় সচল হচ্ছে দেশ। তবে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক পদগুলো থেকে ভিসি, প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারারসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিদের সরে যাওয়ার ফলে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। ফলে এখনও শুরু হয়নি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম। ফলে সেশন জটের শঙ্কায় শিক্ষার্থীরা।

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর ৭ আগস্ট থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে বলে ঘোষণা দেয় আইএসপিআর। তবে সেসময় বিশ্ববিদ্যালয় খোলা সম্ভব হয়নি। সেই ঘোষণার প্রায় দুই সপ্তাহ পর ১৮ আগস্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দিতে বলা হয়। তবে ক্লাস শুরু হয়নি অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে। কয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে, কয়েকটিতে সশরীরে ক্লাস শুরু হলেও তাতে উপস্থিতিও খুবই কম। ফলে সেশন জটের শঙ্কায় শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন :  ভিসিবিহীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনের শঙ্কা কাটল, তবে...

জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, নেত্রকোনার শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু করা যায়নি। ফলে স্থবির হয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক কার্যক্রম। 

যদিও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি), গণ বিশ্ববিদ্যালয় ও হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) সশরীরে ক্লাস শুরু হয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে মঙ্গলবার থেকে অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন : ইউজিসি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

এছাড়াও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিকৃবি) আগামী ৫ সেপ্টেম্বর, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ও চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) ৮ সেপ্টেম্বর নিয়মিত ক্লাসসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসন। 

এমন পরিস্থিতিতে সেশন জটের শঙ্কায় শিক্ষার্থীরা। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস দ্যা ডেইলি ক্যাম্পসকে বলেন, আমাদের জুলাই থেকে সেমিস্টার শুরু হয়ে নভেম্বরে ফাইনাল পরীক্ষা হয়। কিন্তু সেপ্টেম্বর চলে আসলেও সেমিস্টারই শুরু হয়। ফলে ফাইনালও পেছানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমদ খান বলেন, দ্রুততম সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার লক্ষ্যে হলগুলোয় শৃঙ্খলা এবং ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের ফলে ইতোমধ্যে বেশ কিছু বিষয় উঠে এসেছে, যা প্রশাসন গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছে।

শাবিপ্রবির নতুন প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র ডিন অধ্যাপক  ড. সৈয়দ বদিউজ্জামান ফারুক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ডিনদের এক জরুরি মিটিংয়ে আমাকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে জরুরি প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব পালন করার জন্য মনোনীত করা হয়েছে। 

ক্লাস কার্যক্রম ও আবাসিক হল খোলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা মঙ্গলবার সব ডিন এবং বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে মিটিং ডেকেছি। সেখানে তাদের মতামতের ভিত্তিতে ক্লাস কার্যক্রম এবং হল খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এই দায়িত্ব পালনে ডিনরা সহযোগিতা করবেন। আশা করছি দ্রুতই আমরা ক্লাস কার্যক্রম শুরু করতে পারব। এজন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি। 

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আ ব ম ছিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী বলেন, মন্ত্রণালয়ের চিঠির আলোকে সিনিয়র ডিন হিসেবে আমাকে প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। উপাচার্য না আসা পর্যন্ত চলতি জরুরি দায়িত্বগুলো আমি পালন করবো। আর্থিক ও প্রশাসনিক কাজের বাইরে মঙ্গলবার থেকে অনলাইনে ক্লাস অফিসিয়ালি শুরু করতে বিভাগীয় সভাপতিদের বলা হয়েছে। আশা করি আগামী সপ্তাহের শুরুতেই সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু করতে পারব। শিক্ষার্থীদের রেজাল্টসহ যে-সব পেন্ডিং কাজ রয়েছে সেগুলা সমাধান করা হবে। সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু করার বিষয়টি  শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে যুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করেছি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ১৮ আগস্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয় চালু করা জন্য আমরা সব বিশ্ববিদ্যালকে নোটিশ দিয়েছি। তাদের বলেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রদের সঙ্গে বসে কবে থেকে ক্লাস চালু করা যায় এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্বের কাউকে বসানো হয়নি। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কাজ করছে।


সর্বশেষ সংবাদ