রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে বেগুনি রানি জারুল ফুল

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে বেগুনি রানি জারুল ফুল
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে বেগুনি রানি জারুল ফুল  © সংগৃহীত

সবুজ পাতা, হালকা বাদামি বর্ণের বাকল আর ছয়টি মুক্ত পাপড়িতে গঠিত মায়াবী ফুল। নাম জারুল ফুল। হলুদ রঙের পরাগবিশিষ্ট ফুলটি বিমোহিত করছে সবাইকে। কবির ভাষায় 'জারুল সত্যিই একটি চেয়ে থাকার মতো ফুল।' প্রখর তাপপ্রবাহের মাঝেই মনোমুগ্ধকর বেগুনি রঙের জারুল ফুলের সৌন্দর্যে ছেয়ে গেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের চারদিকে।

চলতি পথে হঠাৎ করেই পথিকের চোখে এনে দিচ্ছে শিল্পের দ্যোতনা। মন ছুঁয়ে রঙিন দৃষ্টিতে অবাক হয়ে সেই সৌন্দর্য উপভোগ করছে সবাই। গ্রীষ্মের শুরুতেই ৭৫৩ একরের এই বিশাল ক্যাম্পাস যেন বেগুনি রঙে ছেয়ে গেছে। যা দেখে মনে হচ্ছে এ যেন জারুল ফুলের এক বৃহৎ আড্ডাস্থল। সবুজ প্রকৃতির মধ্যে রোদ ঝলমলে জারুল গাছগুলোয় শোভা পাচ্ছে গাঢ় বেগুনি রঙের ফুল।

চলার পথে পথিক থমকে দাঁড়িয়ে উপভোগ করছেন জারুল ফুলের বেগুনি রঙের আভা। থোকা থোকা ফুলগুলোও যেন চোখ ধাঁধিয়ে শিক্ষার্থীসহ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।

ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভবনের উত্তর পাশে, সত্যেন্দ্রনাথ বসু অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে, পশ্চিমপাড়া এলাকায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের পাশে, পুরাতন শেখ রাসেল স্কুল মাঠের পূর্বে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের পাশে, পূর্বপাড়া মসজিদের সামনের রাস্তার ধারে, বধ্যভূমি এলাকার পুকুর পাড়ে এবং চারুকলা চত্বরসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় রঙ ছড়াচ্ছে অর্ধশতাধিক জারুল গাছের ফুল।

জারুল ফুলের বেগুনি রঙে সেজেছে রাবি ক্যাম্পাস

গ্রামবাংলায় জারুল গাছ একটি অতি পরিচিত নাম। প্রকৃতিকে মাতিয়ে রাখতে জারুল ফুলের কোনো জুড়ি নেই। পাপড়ির নমনীয় কোমলতায় দৃষ্টিনন্দন বর্ণচ্ছটা নিয়ে প্রকৃতিকে আরও সুন্দর করে সাজিয়ে তোলে এই বেগুনি রানি। পাতাঝরা বড় আকারের বৃক্ষ। বাকল মসৃণ ও রং ধূসর বা পিতাভ ধূসর। ফুল বেগুনি। গাছের উচ্চতা ৮০ থেকে ১০০ ফুট বা তদূর্ধ্ব। উদ্ভিদ বিজ্ঞান অনুযায়ী জারুল লিথ্রাসি গোত্রের উদ্ভিদ। এর অর্থ সুন্দর-শোভন। ইংরেজি নাম কুইন ফ্লাওয়ার। এর বৈজ্ঞানিক নাম লিরগার্সট্রোমিয়া স্পোসিওসা। জারুলকে বাংলার চেরি বলা হয়। কী অপূর্ব হয়ে ফোটে! চোখ ভরে যায় তার রূপে। জারুল যেন বেগুনি রানি। 

জারুল ফুলের এই মনমুগ্ধকর সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান  বিভাগের শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান বলেন, ফুল পছন্দ নয় এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যায়। এর মধ্যে জারুল ফুল প্রায় সকলেরই পছন্দের। ক্যাম্পাসে পড়াশোনার ব্যস্ততায় শত ক্লান্তিতেও জারুল ফুলের রঙিন সৌন্দর্যে মুহূর্তেই মন ভালো হয়ে যায়। প্রেমময় এই ঋতুতে জারুল ফুল যেন অপরূপ এক সৌন্দর্যের প্রতিচ্ছবি।

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আনিকা শারমিলা বলেন, জারুল ফুল আমার প্রিয় ফুলগুলোর একটি। যখন চারদিকে তাকিয়ে দেখি জারুল ফুলে ছেয়ে গেছে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস তখন যেন মুহূর্তেই মন ভালো হয়ে যায়। আমার মতে জারুলফুল আমাদের মনে প্রশান্তি দেয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের শিক্ষার্থী রোজলিন তাসনিম বলেন, বৈশাখ মাসের তীব্র গরমে বরাবরের মতো প্রাকৃতিকভাবে সেজে উঠছে ক্যাম্পাস। গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে ঝাঁক বেঁধে দেখা মিলছে জারুল, কৃষ্ণচূড়া, সোনালু প্রভৃতি গ্রীষ্মকালীন ফুল। বেগুনি রঙের জারুল ফুলেরা কেড়ে নিচ্ছে শিক্ষার্থীদের মুগ্ধ দৃষ্টি। গাছের নিচে ফুলের পাপড়ি ঝরে তৈরি হচ্ছে নৈসর্গিক সৌন্দর্য। 


সর্বশেষ সংবাদ