পুলিশি পাহারায় রাবি ক্যাম্পাস ছাড়লো ঢাবির খেলোয়াড়রা, হামলা শুরু হয়েছিল যেভাবে

আহত ঢাবির শিক্ষার্থীরা
আহত ঢাবির শিক্ষার্থীরা  © টিডিসি ফটো

আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) খেলোয়াড়দের ওপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের অতর্কিত হামলায় ঢাবির ৬ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ঢাবি প্রশাসন এ ধরনের হামলাকে অখেলোয়াড়সুলভ উল্লেখ করে বিবৃতি দেয়। রাবি প্রশাসনও পাল্টা বিবৃতিতে  অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে বলে দাবি করে। রাত ১ টায় খেলোয়াড়রা পুলিশ পাহারায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হন এবং তারা নিরাপদে ক্যাম্পাসে আসতে পেরেছেন বলে জানা গেছে। 

সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় চলাকালীন সময়ে মাঠে এ হামলা হয়। এ ঘটনায় ঢাবির অন্তত ৬ খেলোয়াড় আহত হয়েছেন। এসময় ম্যাচ পণ্ড হয়ে গেলে আলোক স্বল্পতার কারণ দেখিয়ে খেলাটি স্থগিত করে ও পরে উভয় দল ঢাবি ও রাবিকে যৌথভাবে বিজয়ী ঘোষণা করে ম্যাচ রেফারি।

এ ঘটনায় ঢাবি ও রাবি শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছেন। ঘটনা কীভাবে শুরু হয়েছিল জানতে চাইলে হামলায় আহত ঢাবি ক্রিকেট টিমের খেলোয়াড় সিফাত সাদিক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ঘটনার শুরু হয়েছে প্রথম থেকেই। খেলার শুরু থেকেই রাবি শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত ছিল। আমাদেরকে অন্যমনস্ক করার চেষ্টা করছিল। খেলার মাঝে আম্পায়ারও গালিগালাজ করেছে। নো বল দেয়নি, আমাদের রাইট বল গুলো ওয়াইড দিয়েছে। তবুও আমরা যখন জেতার দ্বারপ্রান্তে তখনই ঘটনা ঘটে। 

যখন আমরা জেতার দ্বারপ্রান্তে লাঠি স্টাম্প হাতে মাঠে প্রবেশ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১১ বল হাতে থাকতে যখন ২০ রান বাকি এবং নবম উইকেট পড়ে যায়। তখন তারা একত্রিত কিছু একটা আলোচনা করে এবং দর্শক সারিতে থাকা শিক্ষার্থীদেরকে রাবির মাঠের খেলোয়াড় ডাক দেয়। এমন সময় সবাই দ্রুত লাঠি স্টাম্প হাতে মাঠে প্রবেশ করলে আমাদের দুই থেকে তিন জন আগেই দৌড়ে পালায় এবং আমরা মাঝখানে পড়ে যাই। 

চারদিক থেকে কিলঘুষি শুরু হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, চারদিক থেকে কিলঘুষি এবং লাঠির আঘাত আমাদের উপর পড়ছিল। আমরা কোনোরকম দৌড়ে পালিয়েছি। তারপর আমরা ক্যাম্পাসের ভেতরের একটি কোয়ার্টারে আতঙ্কিত অবস্থায় থাকি। আমাদের কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছে তবে সবাই মার খেয়েছে। এর মধ্যে আমি সিফাত সাদিক, সাকিব, রোকনসহ আরও কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছে।

ঢাবি ক্রিকেট টিমের সদস্য খেলোয়াড় নয়ন দাস সাগর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট টিমের একজন খেলোয়াড় আমি। আমাদের উপর আজকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে হামলা করা হয়েছে তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ধিক্কার জানাচ্ছি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এবং ম্যানেজমেন্টকে। আমি এবং আমরা যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলোয়াড় আছি, তাদের জীবনের কি কোন দাম নেই? এইভাবে আপনারা আমাদের উপর হামলা করতে পারলেন কীভাবে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সকল প্রশাসন আছে, তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং আমাদের উপর হওয়া হামলার বিচার চাইছি।

ঢাবি একাদশের খেলোয়াড় ফারসি বিভাগের হানিফ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, খেলার তখন বাঁকি ১ ওভার চার বল এবং শেষ উইকেটের খেলা চলছিলো। এমন সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে মাঠে নেমে আসে সাথে রাবির খেলোয়াড়রাও আমাদের উপর চড়াও হয়। স্টাম্প, লাঠি দিয়ে আঘাত করে। আমাদের প্রায় ছয় থেকে সাতজন আহত হয়েছেন। আমরা কোনো মত পালিয়ে ড্রেসিংরুমে গেলে সেখানেও হামলার শিকার হলে আমরা দ্রুত কোয়ার্টারে চলে আসছি।

তিনি আরও জানান, আম্পায়ার মাঠের মধ্যে নানা ধরনের পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছেন। তিনি আমাদেরকে গালিগালাজ ও করেছেন। তিনি আমাদেরকে গালি দিয়ে বলেছেন 'তোরা আজকে বাসায় যেতে পারবি না'। এছাড়া খেলার মাঝে পুরাতন বল রেখে রাবি একাদশকে নতুন বল দিয়েও সহায়তা করে আম্পায়ার আমরা সেটা ধরে ফেললে কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দেয় আর কোনো ধরনের সমস্যা হবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাকসুদুর রহমান বলেন, এঘটনা অত্যন্ত অপ্রীতিকর এবং নিন্দনীয়। রাবি প্রশাসনের অপারগতা এখানে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। আমরা খেলোয়াড়দেরকে নির্দেশনা দিয়েছি যে তারা যেন পুলিশ পাহাড়ায় আজই চলে আসে।

ঢাবি ক্রিকেট টিমের ওপর রাবির হামলা, কড়া প্রতিবাদে যা বলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাবি ক্রিকেট টিমের ওপর হামলার ঘটনায় কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এ ধরনের হামলা অখেলোয়াড়সুলভ এবং অনাকাঙ্ক্ষিত। আয়োজনকারী বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পূর্ব থেকেই বিশেষ সতর্কতা ও সার্বিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ছিল। স্বাগতিক ভেন্যু হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত ছিল প্রতিপক্ষ টিমকে সম্মান দেখানো এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গভীর উদ্বেগ, ক্ষোভ, প্রতিবাদ ও তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।

অতীতেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এ ধরনের প্রতিযোগিতার সুষ্ঠু আয়োজনে ব্যর্থতার পরিচয় দেয় এবং এর ফলে তখনও অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি হয়— বলা হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

ঢাবির শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. শাহজাহান আলী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এর আগে তারা এসে আমাদের এখানে খেলে গেছে কোনো ঝামেলা হয়নি আমরাও সেই বিশ্বাসে সেখানে আমাদের খেলোয়াড়দের পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তারা তাদের প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেননি। খেলা শুরুর আগে রাবি উপাচার্য আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছিলেন কোনো ঝামেলা হবে না কিন্তু যখন তারা দেখলো আমাদের টিম জিতে যাচ্ছে তখন আমাদের ওপর তাদের শিক্ষার্থীরা হামলা করে।

তিনি আরও বলেন, ঢাবির মাননীয় উপাচার্য রাবি উপাচার্যকে ফোন করে ভদ্র ভাষায় যতটুকু বলা সম্ভব বলেছেন এবং আমাদের শিক্ষার্থীদেরকে বলেছেন পুলিশ পাহারায় ক্যাম্পাসে চলে আসতে। আর ধরনের টুর্নামেন্টে ঢাবি শিক্ষার্থীরা আর বাইরে যাবে না।


ঢাবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাখ্যান, ঘটনা তদন্তে রাবির কমিটি

আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট প্রতিযোগিতার ফাইনাল ম্যাচে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পক্ষ থেকে দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাখ্যান করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) কর্তৃপক্ষ। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে যে ভাষায় ঢাবি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেছে তা অপ্রত্যাশিত ও দুঃখজনক। এর আগেও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় খেলাকে কেন্দ্র করে এমন  অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে এবং সেসকল স্থানে রাবির খেলোয়াড়দের উপর নির্মম হামলা চালানো হয়েছে। ঢাবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিকে রাবি প্রত্যাখ্যান করছে এবং এহেন বিজ্ঞপ্তি প্রচারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

ফাইনাল খেলাকে ঘিরে পূর্ব থেকেই বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছিলো উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, খেলার চূড়ান্ত পর্যায়ে আম্পায়ারের একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ও ঢাবির খেলোয়াড়দের অখেলোয়াড়সুলভ আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে স্টেডিয়ামের দর্শক সারি থেকে বেশ কয়েকজন মাঠে প্রবেশ করলে এক  অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে খেলাটি সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে দুজন আম্পায়ার ও দুই দলের ম্যানেজারের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে ম্যাচ রেফারি দুই দলকে যৌথ-চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করেন। রাবি উপাচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার মাঠে থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যাটি নিরসনের চেষ্টাও চালান। এই  অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে।

হামলার ঘটনায় রাবির তদন্ত কমিটি গঠন

আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলায় ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার তদন্তে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) প্রফেসর মো. হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটির অন্য সদস্য হলেন শহীদ জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ ড. সুজন সেন ও সদস্য সচিব হলেন শরীরচর্চা শিক্ষা বিভাগের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আলী।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence