রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের মৃত্যু, শোকে মারা গেলেন বোনও

শোকের মাতম চলছে মুরাদের পরিবারে। ইনসেটে মুরাদ
শোকের মাতম চলছে মুরাদের পরিবারে। ইনসেটে মুরাদ  © সংগৃহীত

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মুরাদ আহমেদ মৃধা নামে এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। ভাইয়ের মৃত্যুর খবর সইতে না পেরে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে না ফেরার দেশে চলে গেছেন বড় বোন দোলেনা বেগম। তাদের বাড়ি নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায়। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে একই পরিবারের দুইজনের মৃত্যুর ঘটনায় ওই এলাকায় চলছে শোকের মাতম।

জানা গেছে, সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মুরাদ। তিনি নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার খাটাসখৈল গ্রামের আব্দুস সাত্তার মৃধার ছেলে। তার মৃত্যুর খবর শোনার পরই রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হন চাচাতো বোন দোলেনা। মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ভোরে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বোনের মৃত্যু হয়।

আরও পড়ুন: ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুরাদ

নিহতদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়িতে আসার পর মুরাদ জ্বরে আক্রান্ত হন। পরিবারের লোকজন স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে তিনি পরীক্ষা করাতে দেন। পরীক্ষায় তার শরীরে ডেঙ্গু ধরা পড়ে।

কয়েক দিন চিকিৎসার পরও সুস্থ না হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে লিভার ও কিডনির সমস্যা ধরা পড়ে মুরাদের। পরে পরিবারের লোকজন তাকে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে ডাক্তাররা ডায়ালাইসিস করতে বললে তাকে আবার রাজশাহী মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। ডায়ালাইসিসে নেওয়ার পর সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় মুরাদের মৃত্যু হয়।

তার মৃত্যুর খবর গ্রামের বাড়ি নাটোরের বড়াইগ্রামে পৌঁছালে পরিবারের লোকজন কান্নায় ভেঙে পড়েন। ভাইয়ের মৃত্যুর সংবাদ শুনে চাচাতো বোন দোলেনা বেগম হৃদরোগে আক্রান্ত হন। পরে তাকে দ্রুত নেওয়া হয় নাটোর হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার ভোরে না ফেরার দেশে চলে যান তিনি।

মুরাদের বাবা আব্দুস সাত্তার মৃধা জানান, অন্যের খেজুরের গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করতেন। গুড় বিক্রির টাকা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চালান। বাড়ি ঘর তেমন একটা করতে পারেননি। উপার্জনের বড় অংশ ব্যয় করেছেন দুই ছেলের পড়াশোনায়। বড় ছেলে মুন্না মৃধা। তিনি গত বছর মাস্টার্স শেষ করে স্কয়ার কোম্পানিতে কর্মকর্তা পদে চাকরি করছেন। ছোট ছেলে মুরাদ আহমেদ মৃধা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ছিলেন। এক মাস আগে তার অনার্স পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। স্বপ্ন ছিল পড়া লেখা শেষ করে বিসিএস ক্যাডার হবে। 

তিনি আরও বলেন, মুরাদ ২৬ জানুয়ারি বাড়ি এসে জ্বরে আক্রান্ত হয়। সঙ্গে বমি ছিল। স্থানীয় একজন চিকিৎসককে দেখালে তিনি পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে দেন। রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গু রোগ ধরা পড়ে। পাঁচদিন চিকিৎসা করার পরও সুস্থ না হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে লিভার ও কিডনি সমস্যা ধরা পড়ে। গত বৃহস্পতিবার তার ডায়ালাইসিস শুরু হয়। কিন্তু তাতেও তিনি সুস্থ হননি। সোমবার তাকে দ্বিতীয় ডায়ালাইসিসে নেওয়া হলে অবস্থার আরও অবনতি হয় এবং সন্ধ্যায় তার  মৃত্যু হয়। রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের নেতৃত্বে শতাধিক সহপাঠী তার মরদেহ বাড়িতে পৌঁছে দেন। 

মুরাদের চাচা আফছার মৃধা বলেন, আমাদের পৈত্রিক জমি জমা তেমন ছিল না। তবুও ভাই তার ছেলেদের ব্যাপারে খুবই সচেতন ছিলেন। এমনকি সুদের ওপর টাকা ধার নিয়ে ছেলেদের লেখাপড়ার খরচ ও খাবারের ব্যবস্থা করতেন। তিনি বলেন, যে দিন অনার্সের ফল প্রকাশ হয় সেদিন মুরাদ বাড়িতে ছিল। আমাকে নিজ হাতে মিষ্টি খাওয়ায় মুরাদ। আমার কাছে দোয়া চেয়ে বলেছিল, সে বিসিএস কর্মকর্তা হবে।

মুরাদ আহমেদের কলেজ শিক্ষক রুহুল আমীন বলেন, মুরাদ আমার খুব প্রিয় ছাত্র ছিল। টানা তিন বছর ওকে পড়িয়েছি। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও ওর সঙ্গে আমার যোগাযোগ বন্ধ হয়নি। কয়েক দিন আগেও ফোন করে আমার খোঁজখবর নিয়েছেন। ওর মতো ভদ্র ও বিনয়ী ছাত্র পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence