ঢাবি ভিসি প্যানেলের আলোচনায় পুরনো তিন মুখ

বর্তমান ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ও দুই প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল।
বর্তমান ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ও দুই প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল।  © ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) বর্তমান উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২ নভেম্বর। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে প্যানেল নির্বাচনের বাধ্যবধকতা রয়েছে। এর মাধ্যমে নতুন ভিসি নিয়োগ দেবে সরকার। এদিকে, ভিসি প্যানেল নির্বাচন নিয়ে এখনও নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা না হলেও ইতোমধ্যে নতুন ভিসি প্যানেল গঠন নিয়ে সরকারপন্থী শিক্ষকদের নানামুখী তৎপরতা শুরু হয়েছে। ভিসি হতে আগ্রহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা সিনেট সদস্যদের সাথে যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন মহলেও যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। 

নিয়ম অনুযায়ী, উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয় ‘উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন’ এর মাধ্যমে। সিনেটের বিশেষ অধিবেশন বসে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে এ অধিবেশনের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঘোষণা করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এবার উপাচার্য প্যানেলে আলোচনায় রয়েছেন পুরনো তিন মুখ- বর্তমান ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ও দুই প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল।

আরও পড়ুন: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হওয়ার সিঁড়ি ঢাবি শিক্ষক সমিতি

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাবির এক সিনেট সদস্য দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, বর্তমান ভিসির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তিনি নিজেই প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে সিনেটের বিশেষ অধিবেশন ডাকেন। সেখানে ভোটাভুটির মাধ্যমে ৩ জনকে নিয়ে উপাচার্য প্যানেল চূড়ান্ত হয়। এরপর প্যানেল পাঠানো হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সেখান থেকে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাষ্ট্রপতির কাছে। এরপর রাষ্ট্রপতি একজনকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেন।

অনেক সময় আওয়ামীলীগের সমর্থক শিক্ষকদের রাজনৈতিক সংগঠন নীল দলের অভ্যন্তরীণ বৈঠকে ও উপাচার্য প্যানেল নিয়ে আলোচনা হয়। সেখান থেকে নেওয়া সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে সিনেটের বিশেষ অধিবেশনে পাশ হয়।

আরও পড়ুন: ‘ড্যাম কেয়ার’ দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্যরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ, ১৯৭৩ এর আর্টিক্যাল ২১ (২) ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সিনেটের এই বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করেন। সিনেটের এই বিশেষ অধিবেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ, ১৯৭৩ এর আর্টিক্যাল ১১ (১) ধারা অনুযায়ী চ্যান্সেলর কর্তৃক ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) নিয়োগের জন্য তিন জনের একটি প্যানেল মনোনয়ন করা হয়।

ঢাবি সিনেট যেভাবে গঠিত হয়
পদাধিকার, নির্বাচিত ও মনোনীত তিন ক্যাটাগরির ১০৫ জন সদস্য নিয়ে গঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট।বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, পদাধিকার বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হবেন সিনেটের চেয়ারম্যান। তিনি ছাড়াও সিনেটের সদস্য হবেন দুই উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ। এর বাইরে রয়েছেন সরকার মনোনীত পাঁচজন আমলা, স্পিকার মনোনীত পাঁচজন সংসদ সদস্য, আচার্য মনোনীত পাঁচজন শিক্ষাবিদ, ঢাবি সিন্ডিকেট মনোনীত গবেষণা সংস্থার পাঁচজন প্রতিনিধি, ঢাবির একাডেমিক পরিষদ কর্তৃক মনোনীত পাঁচটি অধিভুক্ত ও উপাদানকল্প কলেজের অধ্যক্ষ, একাডেমিক পরিষদ মনোনীত অধিভুক্ত ও উপাদানকল্প কলেজগুলোর ১০ জন শিক্ষক, ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট নির্বাচিত ২৫ জন প্রতিনিধি, নির্বাচিত ৩৫ জন শিক্ষক প্রতিনিধি এবং ডাকসু মনোনীত পাঁচজন ছাত্রপ্রতিনিধি। তাদের ভোটেই উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন হয়।

আরও পড়ুন: আইনের ঊর্ধ্বেই থাকছেন ভিসিরা!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ-১৯৭৩ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের ধারা ১১(১) ও ১১(২) অনুসরণ করে দুইভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১১(১) অনুসারে সিনেটে তিনজনের একটি উপাচার্য প্যানেলে নির্বাচন করা হয় এবং সেই প্যানেল থেকে যে কোনো একজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি চার বছরের জন্য উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দান করেন। আর ১১(২) ধারা অনুযায়ী, কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যেমন অসুস্থতা, ছুটি, অপসারণ বা অন্য কোনো কারণে উপাচার্যের পদ শূন্য হলে একজনকে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

জানা গেছে, সিনেটের সর্বশেষ উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন হয় ২০১৯ সালের ৩১ জুলাই। বিএনপিপন্থি সাদা দলের অধিবেশন বর্জন এবং অন্য কোনো শিক্ষকের প্যানেল না থাকায় সেসময় অধিবেশনে কোনো ভোটাভুটি হয়নি। আওয়ামীপন্থি তিন সদস্যের উপাচার্য প্যানেল কণ্ঠভোটে পাস হয়। 

উপাচার্য প্যানেলে আসতে শিক্ষকদের দৌড়ঝাঁপ
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য এবং বিভিন্ন শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভিসি প্যানেলে আসতে আগ্রহী শিক্ষকরা দুই জায়গায় যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। প্রথমত সিনেটের ১০৫ জন সদস্য এবং দ্বিতীয়ত আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী অংশের সাথে। 

আগ্রহী শিক্ষকরা ভিসি প্যানেলে আসার জন্য  সিনেটের সদস্যদের সাথে এবং নীল দল সমর্থিত শিক্ষকদের সাথে যোগোযোগ বাড়িয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকে নিজস্ব লোকদের সাথে ভিসি প্যানেলে করণীয় নিয়ে আলোচনা করছে। 

একই সাথে চূড়ান্ত ভিসি নিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতাদের সাথে যোগাযোগ বাড়িয়েছে।

আরও পড়ুন: বরেণ্য শিক্ষাবিদরা উপাচার্য হতে চান না: শিক্ষামন্ত্রী

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাবেক এক নেতা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ এই পদে আসতে অনেক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ইতোমধ্যে দৌঁড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। তারা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতাদের সাথে যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি শিক্ষক কমিউনিটিতেও যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। তবে ভিসি নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়াটি নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর উপর। তিনি যাকে এই পদে আসতে ইঙ্গিত দেবেন, মূলত তিনিই আগামীতে ভিসি পদে আসবেন।

উপাচার্য প্যানেলে আলোচনায় যারা
উপাচার্য প্যানেলের সম্ভাব্য তালিকায় বর্তমান উপাচার্য ও দুই উপ-উপাচার্য ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক রয়েছেন। এরমধ্যে শিক্ষক সমিতির সাবেক ও বর্তমান এবং আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের সাবেক ও বর্তমান ডজন খানেক নেতা রয়েছেন। তবে জোর আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ও দুই প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল।


সর্বশেষ সংবাদ