ঢাবি অধ্যাপকের প্রবন্ধে ৫৩ শতাংশ নকলের প্রমাণ মিলেছে

অধ্যাপক রেবেকা সুলতানা
অধ্যাপক রেবেকা সুলতানা  © সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রেবেকা সুলতানার লেখা ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা’ শীর্ষক প্রবন্ধে ৫৩ শতাংশ নকলের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গঠিত ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি। তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদনে নকলের সত্যতা পাওয়ায় সিন্ডিকেট থেকে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩০ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্তগ্রহণকারী ফোরাম সিন্ডিকেটের এক সভায় এ কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির প্রধান হিসেবে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

অধ্যাপক রেবেকা সুলতানা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের নাজমুল করিম স্টাডি সেন্টারের জার্নাল অব সোশিওলজির (সমাজবিজ্ঞান পত্রিকা) একাদশতম ভলিউমের ২য় সংখ্যায় (২০২০ সালের জুলাই-ডিসেম্বরে প্রকাশিত) এই প্রবন্ধটি লিখেছিলেন।

পরে গত বছরের ৬ নভেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ, উপাচার্য ও নাজমুল করিম স্টাডি সেন্টারের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কাছে এক চিঠিতে নকলের বিষয়টি তদন্ত ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানান।

চিঠিতে অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ উল্লেখ করেন, তার জানা মতে উল্লিখিত প্রবন্ধে কমপক্ষে ৫৩ শতাংশ রেবেকা সুলতানা নকল করেছেন। এর মধ্যে আকবর আলী খান রচিত ‘অবাক বাংলাদেশ: বিচিত্র ছলনা জালে রাজনীতি’ (প্রথমা ২০১৭) বইয়ের ১৪২, ১৫৫-১৬০ পৃষ্ঠা থেকে; বদরুল আলম খান রচিত (প্রথমা ২০১৭) ‘গণতন্ত্রের বিশ্বরূপ ও বাংলাদেশ’ বইয়ের ১১৫ পৃষ্ঠা; বদিউল আলম মজুমদারের (আগামী প্রকাশনী ২০১৫) ‘রাজনীতি, দুর্নীতি ও নির্বাচন’ বইয়ের ৪৬ পৃষ্ঠা; আবুল কাসেম ফজলুল হকের লেখা ‘অবক্ষয় ও উত্তরণ’ কথা (প্রকাশ ২০০৯) বইয়ের ৫৪ ও ৬৩ পৃষ্ঠা থেকে নকল করেছেন।

আরও পড়ুন: গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি ঠেকাতে নীতিমালা চূড়ান্ত, সর্বোচ্চ শাস্তি চাকরিচ্যুতি

নাম না প্রকাশের শর্তে এক সিন্ডিকেট সদস্য বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করা হয়। তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদনে নকলের সত্যতা পাওয়া যাওয়ায় সিন্ডিকেট থেকে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া কাউকে কিছু না জানিয়ে বিদেশে অনেক অবস্থানের কারণে ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ক্ষণিকা গোঁপকে শাস্তিদানে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে।

তবে এ বিষয়ে জানতে অধ্যাপক রেবেকা সুলতানাকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তার পক্ষ থেকে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

এদিকে, গবেষণা ও প্রকাশনায় স্বচ্ছতা ও নৈতিকতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘চৌর্যবৃত্তি (Plagiarism)’ নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এদিন সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের নিয়মিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এ নীতিমালায় গবেষণা নকল বা সামঞ্জস্যের মাত্রা অনুযায়ী সংশোধনের সুযোগ দেওয়া সাপেক্ষে জরিমানা, ডিগ্রি বাতিল ও পদাবনতি, এমনকি চাকরিচ্যুতিসহ বিভিন্ন ধরনের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। পরে রাতে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। 

তিনি বলেন, একাডেমির কাউন্সিলে যেটা চূড়ান্ত হয়েছিল, সেটার টুকটাক সংশোধন করা হয়েছে। বাংলাদেশের এধরনের সিদ্ধান্ত এটাই প্রথম। ‘চৌর্যবৃত্তি’ নীতিমালা সর্বোচ্চ শাস্তি চাকরিচ্যুতি, ডিগ্রি বাতিল, অনেক বছর কাজ থেকে বিরত রাখা ও জরিমানাসহ বিভিন্ন ধরনের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। আমরা ভালো একটা রেগুলেশন করেছি। এটা নির্ধারিত স্থানে যাবে।


সর্বশেষ সংবাদ