রঙ তুলির আঁকিবুঁকিতে রাবির কথা বলা দেয়াল

রাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরের পশ্চিম পাশের দেয়ালে আঁকা চিত্রমালা
রাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরের পশ্চিম পাশের দেয়ালে আঁকা চিত্রমালা  © টিডিসি ফটো

‘দেয়ালেরও কান আছে’ বাংলা ভাষায় বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ। তবে দেয়াল শুধু শোনেই না, কখনো কখনো কথা বলেও! রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরের পশ্চিম পাশের দেয়ালটি ঠিক তেমনই। কথা বলা একটি দেয়াল। এই দেয়ালে আঁকা চিত্রমালা যেন বাংলাদেশের ইতিহাসের কথাই বলে যাচ্ছে অবিরাম।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে আঁকা হয় এই দেয়ালচিত্র। বিশাল এই চিত্রটি দেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের সাক্ষী। এ যেন তুলির আঁচড়ে কোনো গল্পগাঁথা। এখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে '৬৬-এর ছয় দফা, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ দেশ স্বাধীন হওয়ার পরবর্তী মুহূর্তগুলো। 

দেয়ালচিত্রটিতে ধাপে ধাপে উঠে এসেছে আমাদের স্বাধীনতা পূর্ববর্তী জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সব আন্দোলন। সবশেষে আছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের ছবি। যেখানে দেখা যাচ্ছে, শিশুরা মনের আনন্দে স্কুলে যাচ্ছে, হাতে বাংলায় লেখা বই। তীক্ষ্ণ মগজ দিয়ে অনুধাবন করলে মনে হবে এই বুঝি বিমূর্ত চিত্রগুলো বলে উঠবে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘আমাদের দাবি মানতে হবে।’

সরেজমিনে দেখা যায়, দেয়ালের পরতে পরতে সৌন্দর্যের ছোঁয়া। চিত্রকর্মটিতে বামপাশে শুরুর দিকে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে ভাষা আন্দোলনের সময়কালের ভয়াবহতা। পরবর্তীতে আছে শহিদ মিনারের চিত্র। মাঝ বরাবর মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদের বর্বরতার দৃশ্য, এরপরেই বাঙালির কাঙ্ক্ষিত বিজয় অর্জনের প্রতিচ্ছবি ও বিজয়োল্লাস। আর সবশেষে ডানপাশে বই বুকে নিয়ে স্কুলে যাওয়া শিশুদের নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের আবহমান দৃশ্যাবলী। যা রঙিন ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ‘পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান’ না থাকায় ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীরা বিসিএসে ঝুঁকছে

চিত্রকর্মটি তৈরি করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের একঝাঁক তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থী। চারুকলা অনুষদের মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কনক কুমার পাঠকের তত্ত্বাবধানে এই চিত্রকর্মের খসড়া লেআউট করেছিলেন চারুকলা অনুষদের প্রাক্তন শিক্ষার্থী শামীমা আক্তার। সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন প্রসেনজিৎ মিস্ত্রী, রায়হান আহমেদ, সুভাষ পাল এবং সৌমিত্র কুমার।

সহযোগী অধ্যাপক কনক কুমার পাঠক বলেন, দেয়ালচিত্রটি অনুধাবন করলে দেখা যাবে ১৯৫২ সালে যে ভাষার জন্য বাঙালিদের বুকের তাজা রক্ত ঝরেছিল, সেই ভাষায় রচিত বই এখন আমরা বুকে নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাই। গৌরবের ইতিহাসকে এই দেয়ালচিত্রতে ধাপে ধাপে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। চিত্রটির বামপাশ থেকে যদি দর্শনার্থীরা দেখা শুরু করেন তাহলে ডান পাশে যেতে যেতে চিত্রকর্মটির প্রেক্ষাপট জেনে ফেলবে। চিত্রকর্মটিই দর্শনার্থীকে বলে দিবে কীসের বার্তা বহন করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী পলাশ হোসেন বলেন, আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। শহীদ মিনারের পাশে দেয়ালের ক্যানভাসে তা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যা মনে করিয়ে দেয় আমাদের বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রাম। 


সর্বশেষ সংবাদ