গুচ্ছ ভর্তি: ইউজিসির নীরব ভূমিকায় ক্ষুব্ধ উপাচার্যরা

শিক্ষার্থী ও ইউজিসি ভবন
শিক্ষার্থী ও ইউজিসি ভবন  © ফাইল ছবি

দেশের উচ্চ শিক্ষার মানোন্নয়ন, গবেষণা কার্যক্রমের বিস্তার, বাস্তব অবস্থা পর্যালোচনা, নীতি নির্ধারণ এবং সকল সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করা, তাদের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া এবং বিষয়গুলো সরকারের কাছে উপস্থাপন করাও সংস্থাটির অন্যতম কাজ। তবে এই কাজগুলো ইউজিসি কতটুকু সুষ্ঠুভাবে করতে পারছে তা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। বিশেষ করে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি প্রক্রিয়া টিকিয়ে রাখতে ইউজিসির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।

গুচ্ছভুক্ত একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘব এবং আর্থিক ক্ষতি কমাতে ২০২০ সালে ইউজিসির উদ্যোগেই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হয়। সবশেষ ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যেতে চাইলেও ইউজিসির শক্ত অবস্থানের কারণে এ পদ্ধতির ভর্তি প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে যেতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তবে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ ভর্তি নিয়ে ইউজিসির নীরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক উপাচার্য দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষেও গুচ্ছ থেকে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের সর্বোচ্চ ফোরাম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে উপাচার্যরা গুচ্ছে থেকে ছিলেন। এর একমাত্র কারণ ইউজিসির শক্ত অবস্থান। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের আইনে পরিচালিত হলেও বাজেট বরাদ্দ এবং ছাড় করে ইউজিসি। ফলে ইউজিসি একটু শক্ত অবস্থান নিলে গুচ্ছ থেকে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বেরিয়ে যেত না।’

গুচ্ছ টিকিয়ে রাখতে ইউজিসি কোনো ভূমিকা নিচ্ছে না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে সংস্থাটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার বিষয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান দেখছেন। এ বিষয়ে তিনিই ভালো বলতে পারবেন।’

এ বিষয়ে জানতে অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খানকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

ক্ষুব্ধ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছুরাও, ইউজিসি ঘেরাওয়ের ঘোষণা

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে ইউজিসি কোনো ভূমিকা না রাখায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, অল্প সময়ের মধ্যে গুচ্ছ নিয়ে ইউজিসি কোনো পদক্ষেপ না নিলে সংস্থাটির কার্যালয় ঘেরাও করবেন তারা।

এ বিষয়ে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ ভর্তি নিয়ে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া মো. আব্দুল মালেক সিয়াম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা বহাল রাখতে ইউজিসি চেয়ারম্যানকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। এরপরও এখন পর্যন্ত গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ইউজিসি থেকে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অথচ বিগত বছর গুলোতে গুচ্ছ বহাল রাখার জন্য ইউজিসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এ বছর ইউজিসির এমন দায়িত্ব জ্ঞানহীন আচরণে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আগামী দুই/তিনদিনের মধ্যে ইউজিসি থেকে এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তাহলে গুচ্ছ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা ইউজিসি ঘেরাও কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।’

গুচ্ছ নিয়ে ফের সভায় বসতে যাচ্ছেন উপাচার্যরা

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আবারও সভায় বসতে যাচ্ছেন গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা। সভার তারিখ চূড়ান্ত না হলেও আগামী শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) অথবা শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) এ সভা হতে পারে বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটির আহবায়ক এবং মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা সংক্রান্ত চিঠি আমরা পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে কয়েকজন উপাচার্য-এর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। খুব দ্রুত আমরা আবারও সভায় বসব।’

জান গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কঠোর নির্দেশনার পরও বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে। গুচ্ছের ভাঙন রোধে দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি সভা করতে চায় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটি। উপাচার্যরা মনে করছেন, শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুচ্ছে থাকবেন। এজন্য নিয়মিত মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তারা। 


সর্বশেষ সংবাদ