ফেল করেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, পোষ্য কোটা বন্ধে নীতিমালা আসছে

শিক্ষার্থী
শিক্ষার্থী  © ফাইল ছবি

প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষায় একজন শিক্ষার্থী অন্যদের চেয়ে শূন্য দশমিক শূন্য শূন্য নম্বর কম পাওয়ার কারণে যেখানে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে না; সেখানে পোষ্য কোটার কারণে ফেল করেও ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন অনেকে। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে পোষ্য কোটা বন্ধ করতে চায় তদারকি সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।

ইউজিসি বলছে, কোটা অনগ্রসর ব্যক্তি অথবা জাতির জন্য রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে পোষ্য কোটা রাখা হয়েছে সেগুলো মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য। তবে তারা কোনো অর্থেই অনগ্রসর নয়। কাজেই এটি বন্ধ করা উচিৎ। এজন্য একটি নীতিমালা তৈরি করা দরকার।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্টের সদস্য প্রফেসর দিল আফরোজা বেগম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ইউজিসি অনেক আগে থেকেই পোষ্য কোটার বিরোধী। আমরা বরাবরই বলে আসছি, মেধায় যারা যোগ্য কেবল তাদেরকেই যেন সুযোগ দেওয়া হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নানা কারণে পোষ্য কোটা চালু রেখেছে। কেউ ভর্তি পরীক্ষায় ৬০ নম্বর পেয়ে চান্স পাচ্ছে না। আবার কেউ ন্যূনতম নম্বর না পেয়েও ভর্তির সুযোগ পাবে এটি হতে পারে না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমনিতেই আসনের স্বল্পতা রয়েছে। পোষ্য কোটা বন্ধে শিগগিরই উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে কেবল চারটি বিশ্ববিদ্যালয় পোষ্য কোটায় কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি করে না। তুমূল প্রতিযোগিতা থাকায় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তিযোদ্ধা কোটাতেও কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি করান না। কোনো সমস্যা ছাড়াই এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য করা পোষ্য কোটায় ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর অনেক কমানো হয়েছে। বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করা শিক্ষার্থীদের পোষ্য কোটার নাম দিয়ে ভর্তি নিচ্ছে।  অথচ প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই ভর্তি পরীক্ষায় যারা ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন, তাঁরা পোষ্য কোটায় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর চেয়ে দ্বিগুণ বা তিন গুণ নম্বর পেয়েও সুযোগই পাচ্ছেন না। কেউ কেউ অন্যদের চেয়ে ০ দশমিক ২৫ নম্বর কম পাওয়ার কারণে মেধাতালিকায় নামই তুলতে পারছেন না।

তাদের মতে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসনের ৩ থেকে ৫ ভাগ আসন পোষ্য কোটার জন্য সংরক্ষণ করা হয়। অনেকক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের মূল বিজ্ঞপ্তিতে পোষ্য কোটার কথা উল্লেখ করে না। তবে ভর্তি নেয় ঠিকই। এসব ভর্তিতে যেমন অস্বচ্ছতা থাকছে, তেমনি প্রতিবছর এই পোষ্য কোটায় কতজন পড়াশোনা করছেন সেই তথ্যও প্রকাশ করছে না বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় ফেলকৃতরা যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায়; তাহলে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের কোনো দরকার আছে বলে আমার মনে হয় না। যারা পোষ্য কোটায় শিক্ষার্থী ভর্তি করান, তাদের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে লোক দেখানো পরীক্ষা আয়োজনের কোনো মানে হয় না। সরাসরি শিক্ষার্থী ভর্তি করালেও পারে।

ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে সরকারের একটি নীতিমালা তৈরি করা দরকার জানিয়ে তিনি আরও বলেন, শুধু ভর্তি পরীক্ষা নয়; দেশের সব প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য একটি নীতিমালা থাকা দরকার। সেই নীতিমালা অনুযায়ী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। নীতিমালার বাইরে ভর্তির কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না। সরকার এনটিএ (ন্যাশনাল টেস্টিং অথোরিটি) গঠনের কথা বলছে। এটি হলে আশা করছি কিছু সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে।

পোষ্য কোটায় ভর্তি বন্ধে নীতিমালা আসছে

ইউজিসির একটি সূত্র জানিয়েছে, নানা নির্দেশনার পরও পোষ্য কোটায় শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করা যাচ্ছে না। পোষ্য কোটার লাগাম টেনে ধরতে তারা একটি নীতিমালা তৈরি করতে চান। এ নীতিমালায় সর্বনিম্ন কত নম্বর পেলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া যাবে সেটি নির্দিষ্ট করা থাকবে। এর বাইরে কেউ কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে না।

ওই সূত্র আরও জানায়, শিগগিরই ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট পূর্ণ কমিশনের সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন। এরপর একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। নীতিমালাটি পাশ জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার পর সেটি প্রজ্ঞাপন আকারে জানিয়ে দেওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এনটিএ’র মাধ্যমে সকল বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি ভর্তি পরীক্ষার মধ্যে নিয়ে আসতে আলোচনা চলছে। এনটিএ গঠন হলে পোষ্য কোটার সমস্যা অনেকাংশে সমাধান হয়ে যাবে। এনটিএ’র মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য সর্বনিম্ন একটি স্কোর ধার্য করে দেওয়া হবে। এই নম্বরের বাইরে কাউকে ভর্তি করানো যাবে না। নির্দেশনা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হলে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence