বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রথমবর্ষেই যুক্ত হতে পারেন যেসব সংগঠনে

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধি, সেবামূলক ও স্বেচ্ছাসেবী  বিভিন্ন ধরনের সংগঠন সক্রিয় রয়েছে
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধি, সেবামূলক ও স্বেচ্ছাসেবী বিভিন্ন ধরনের সংগঠন সক্রিয় রয়েছে  © টিডিসি সম্পাদিত

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবর্ষে ভর্তির পর থেকে ধীরে ধীরে অ্যাকামেডিক কাজে নিজেদের মানিয়ে নেন শিক্ষার্থীরা। এর পাশাপাশি তাদের নানা ধরনের গঠনমূলক ও স্বেচ্ছাসেবী কাজে যুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু নবীন শিক্ষার্থীদের অনেকের তা অজানা থাকে। এ ধরনের কাজের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার মাধ্যমে তারা নিজেদের আত্মবিশ্বাসের জায়গা যেমন মজবুত করতে সক্ষম হন, তেমনেই নিজেদের সমৃদ্ধ করতে পারেন।

শিক্ষার্থীরা প্রথমবর্ষ থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন। এ ধরনের সংগঠনের মূল উদ্দেশ্যই হলো, তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে সহায়তা করা, জ্ঞানের সমৃদ্ধি এবং নেতৃত্ব দেওয়ার মতো উপযুক্ত করে তোলা। তেমনই কিছু সংগঠন নিয়ে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের আজকের এ আয়োজন।

গঠনমূলক সংগঠন 

ডিবেটিং ক্লাব
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং ক্লাব এমন একটি সংগঠন, যেখানে সংযুক্ত হওয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিতর্ক বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারেন। নিজের যুক্তি প্রদানের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারেন এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারেন। যেকোনো বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও তার পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে। দলগত কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি করে। কীভাবে একটি দল পরিচালনা করা যায় সে সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা দক্ষ হয়ে ওঠেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং ক্লাবগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সক্রিয় থাকে, যার ফলে তারা বিদেশি শিক্ষার্থী বা সংগঠনের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান।

আইটি ক্লাব
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কিত নানা সংগঠনগুলোর মধ্যে আইটি সোসাইটি অন্যতম একটি সংগঠন। আইটি ক্লাব আয়োজিত বিভিন্ন সেমিনার, প্রশিক্ষণ কর্মশালার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা হয়। ক্লাবগুলোতে যুক্ত থাকার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা প্রোগ্রামিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, সাইবার সিকিউরিটি এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত বিষয় সম্পর্কে জানতে পারেন। এছাড়া এগুলোতে যুক্ত থাকার মাধ্যমে তারা বিভিন্ন ধরনের ইন্টার্নশিপ, চাকরি এবং ক্যারিয়ার বিষয়ক তথ্য সম্পর্কে জানতে পারেন। বিভিন্ন প্রযুক্তি বিষয়ক মেলা, গেমিং উৎসব বা প্রতিযোগিতামূলক আয়োজন শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রযুক্তিগত বিষয়ে জানার আগ্রহ তৈরি করে।

ক্যারিয়ার ক্লাব
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার ক্লাবগুলোর মূল উদ্দেশ্য থাকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দলবদ্ধভাবে কাজ করা, যোগাযোগ সমস্যা সমাধান ও নেতৃত্ব দেওয়ার মতো নানা দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করা এবং কর্মজীবনের জন্য প্রস্তত করা। তাদের কর্পোরেট, ব্যবসায়িক বা শিল্পখাত সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। এ ধরনের সংগঠন বিভিন্ন সেমিনার, কর্মশালা, প্রশিক্ষণ ও চাকরি মেলার আয়োজন করে থাকে, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অনেক বিষয় সম্পর্কে অবগত হওয়ার পাশাপাশি দক্ষ হয়ে ওঠে। 

ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব
ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব শিক্ষার্থীদের ইংরেজি বিষয়ের দক্ষতা (পড়া, লেখা, বলা ও শোনা) বাড়াতে সহায়তা করে থাকে। সংগঠনটি সদস্যদের ইংরেজি ভাষায় সহজ ও সাবলীলভাবে কথা বলাতে উৎসাহিত করে। সদস্যরা একে অপরের সঙ্গে ইংরেজি ভাষা চর্চার মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করে এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।  

স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন

বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি)
বিএনসিসি হচ্ছে সেনা, নৌ,বিমান শাখার ক্যাডেটদের সমন্বয়ে গঠিত একটি দ্বিতীয় সারির, অসামরিক স্বেচ্ছাসেবী রিজার্ভ বাহিনী। এটি সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা, জেসিও, এনসিও, বেসামরিক কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিটের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত সংগঠন। বিএনসিসির মূলমন্ত্র হলো ‘জ্ঞান ও শৃঙ্খলা’। বিএনসিসিতে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্ব, শৃঙ্খলা, দেশপ্রেম ও নৈতিকতার বিকাশ ঘটে।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক যুব বিনিময় কর্মসূচির মাধ্যমে বিদেশ ভ্রমণের সুযোগও করে দেয় বিএনসিসি। মেধাবী ক্যাডেটরা তাদের মেধার ভিত্তিতে বিএনসিসি থেকে নানা আর্থিক সহায়তা এবং বৃত্তির সুযোগ পেয়ে থাকে।সামরিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে  দেশ রক্ষার জন্য উৎসাহী হয়ে ওঠে এবং জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় যোগ্য করে তোলে।

রোভার স্কাউটস
রোভার স্কাউটস হচ্ছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, যা বাংলাদেশ স্কাউটসের একটি অংশ। এটি ১৭-২৫ বছর বয়সী কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত একটি শাখা। রোভার স্কাউটস শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভাষা, সংস্কৃতি এবং সৃজনশীলতা বিকাশে সহায়তা করে। রোভাররা বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সমস্যা, যেমন- যানজট, জলবায়ু সমস্যা, পরিবেশ সংরক্ষণ, বৃক্ষরোপণ, দুর্যোগ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি নিয়ে কাজ করে। সংগঠনটির মূল উদ্দেশ্য তরুণ সমাজকে দায়িত্বশীল হিসেবে গড়ে তোলা, যাতে তারা একটি সুন্দর সুশৃঙ্খল সমাজ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। 

বাঁধন
বাঁধন হলো বাংলাদেশে অবস্থিত একটি শিক্ষার্থী পরিচালিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এর মূল উদ্দেশ্য হলো স্বেচ্ছায় রক্তদান এবং রক্তদাতাদের উৎসাহিত করা। পাশাপাশি অন্যান্য সেবা ও সচেতনমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা। এর মূল স্লোগান হলো ‘একের রক্ত অন্যের জীবন, রক্তই হোক আত্মার বাঁধন’। এটি একটি অরাজনৈতিক, অসাম্প্রদায়িক এবং সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন।

সংগঠনটি সারাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাজ করে। এটি বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় এর ব্যবস্থা করে। জরুরি প্রয়োজনে রোগীদের জন্য নানা রক্তদান কার্যক্রম পরিচালনা করে। পাশাপাশি রক্তদান ও রক্তের গ্রুপ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে নানা কার্যক্রম গ্রহণ করে। এ ধরনের সংগঠনে যুক্ত থাকার মাধ্যমে সদস্যদের মধ্যে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং সবাই মিলে একটি মহৎ উদ্দেশ্য পূরণ করে।

আরও পড়ুন: যে অ্যাপসের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী বেছে নিল নেপালের ‘জেন-জি প্রজন্ম

সাংস্কৃতিক ক্লাব

মিউজিক ক্লাব
মিউজিক ক্লাবের উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংগীতশিল্পী হিসেবে আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা। সংগীতচর্চার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করা। দলবদ্ধভাবে গান গাওয়া বা বিভিন্ন রকমের বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা জানতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামে তারা গান পরিবেশনা করতে পারে। তাদের ভেতর সংস্কৃতি চর্চা নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়।

ড্রামা ক্লাব
ড্রামা ক্লাবের উদ্দেশ্য ক্লাবের সদস্যদের অভিনয় ও এ সম্পর্কিত কৌশল শেখানো, যার ফলে শিক্ষার্থীরা অধিক আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। অভিনয়ের মাধ্যমে মানুষের মাঝে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা যায়। বিভিন্ন ডিজাইন বা মঞ্চ তৈরি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জিত হয়। নানা উৎসব বা মেলা আয়োজনের মাধ্যমে বিনোদনের পাশাপাশি আগ্রহ সৃষ্টি হয়।

আর্ট ক্লাব
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আর্ট ক্লাব থাকে। এ ক্লাবে ছবি আঁকার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে। তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। অনেক প্রতিযোগিতার আয়োজন এবং প্রদর্শনীর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছবি আঁকার প্রতি আগ্রহ তৈরি করা যায়। ছবি আঁকার মাধ্যমেও সমাজে নানাভাবে সচেতনতার সৃষ্টি করা যায়।

ক্রীড়া বিষয়ক সংগঠন
ক্রীড়া বিষয়ক সংগঠনগুলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্রীড়া বিষয়ে আগ্রহী করে তুলে। নিয়মিত খেলাধুলা করলে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা যায় এবং মন ভালো থাকে। ক্রীড়া সংগঠনগুলো বিভিন্ন আন্তঃ এবং জাতীয় প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। এ ধরনের সংগঠনগুলো শিক্ষার্থীদের মাঝে দলবদ্ধভাবে কাজ করার মনোভাব তৈরিতে সহায়তা করে এবং দলের প্রতি দায়িত্বশীল হতে উৎসাহিত করে।

নানা প্রতিযোগিতামূলক খেলার আয়োজনের মাধ্যমে দলগত কাজ, নেতৃত্ব এবং অন্যান্য দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ক্রীড়া বিষয়ক অনেকগুলো সংগঠন রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ক্রিকেট ক্লাব, ফুটবল ক্লাব, হ্যান্ডবল ক্লাব, ব্যাডমিন্টন ক্লাব ও দাবা ক্লাব।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence