বুন্দিয়া নাকি বুরিন্দা— কোনটি সঠিক?
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৫, ০৩:৩৩ PM , আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৫, ০৩:৩৩ PM

রমজান আসলেই ইফতারের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে নানা ধরনের মিষ্টান্ন। পেঁয়াজু, বেগুনির পাশে জায়গা করে নেয় ছোট ছোট গোলাকার মিষ্টি—যা কেউ বলেন বুন্দিয়া, আবার কেউ বুরিন্দা। তবে আসল নাম কোনটি? এই মিষ্টির ইতিহাস, নামকরণ আর প্রকারভেদ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে বিতর্ক। আসলে কোনটি সঠিক?
চলুন ভাষা আর ঐতিহ্যের পাতায় ঘুরে আসা যাক—
বুন্দিয়া অথবা বুরিন্দা বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় মিষ্টান্ন। এটি বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় বেশ প্রচলিত। ছোট ছোট গোল দানার মতো এই মিষ্টি তৈরি হয় বেসন দিয়ে, এরপর তেলে ভেজে চিনির সিরায় ডুবিয়ে রাখা হয়। অঞ্চলভেদে এর নাম ও উচ্চারণে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও মূলত এটি একই মিষ্টান্ন।
চলুন এর উৎপত্তি জেনে নেই— বুন্দিয়া শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ‘বিন্দুক’ থেকে, যার অর্থ ছোট বিন্দু। হিন্দিতে ‘বুন্দ’ মানে ফোঁটা, যা এই মিষ্টির আকারের সঙ্গে মিলে যায়। তাই কেউ একে বলেন ‘বুন্দিয়া’, আবার কেউ ‘বুঁদিয়া’ বা ‘বোঁদে’। তবে ভাষা বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রচলিত ‘বুন্দিয়া’ বা ‘বুরিন্দা’ শব্দ দুটি প্রকৃতপক্ষে শুদ্ধ নয়, বরং ‘বুঁদিয়া’ বা ‘বোঁদে’ই প্রমিত।
বাংলাদেশে এটি সাধারণত হলুদ বা লালচে রঙের হয়ে থাকে, এটি তেল বা ঘিয়ে ভেজে চিনির সিরায় ডোবানো হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গে এর সাদা সংস্করণও জনপ্রিয়, বিশেষ করে হুগলি জেলার জনাই ও কামারপুকুর-জয়রামবাটী এলাকায়। এই বিশেষ বোঁদে বরবটি ও আতপ চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি হয় এবং গাওয়া ঘিতে ভাজা হয়, তাই এটি স্বাদে কিছুটা ভিন্ন হয়।
এই মিষ্টির জনপ্রিয়তা বহু পুরোনো। কথিত আছে, রামকৃষ্ণ পরমহংস সাদা বোঁদে খেতে ভালোবাসতেন। বাংলার মিষ্টির তালিকায় এটি বরাবরই বিশেষ স্থান দখল করে রেখেছে। রজনীকান্ত সেন তার কবিতায় এই মিষ্টির কথা উল্লেখ করেছেন, সেখানে বোঁদেকে তুলনা করা হয়েছে বুটের মতো ছোট ছোট দানার সঙ্গে।
ঔদারিক গানে বুঁদিয়া বা বোঁদের উল্লেখ পাওয়া যায়—
‘যদি, কুমড়োর মত, চালে ধ’রে র’ত,
পান্তোয়া শত শত;
আর, সরষের মত, হ’ত মিহিদানা
বুঁদিয়া বুটের মতো!’
মূলত বুন্দিয়া, বোঁদে, না কি বুঁদিয়া—নাম যা-ই হোক, স্বাদে কিন্তু এটি একই। তবে ভাষাগত দিক থেকে দেখতে গেলে বুঁদিয়া বা বোঁদেই শুদ্ধ, আর বুন্দিয়া বা বুরিন্দা শব্দ দুটি প্রচলিত হলেও প্রকৃতপক্ষে দুটো অশুদ্ধ শব্দ।