শূন্য থেকে শুরু, বিদেশ যাওয়ার চিন্তা বদলে প্রথম সারির ক্যাডার হাবিব

মো. হাবিবুর রহমান
মো. হাবিবুর রহমান  © টিডিসি ফটো

৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. হাবিবুর রহমান। অনার্স-মাস্টার্সে হাবিব ভাবতেন, দেশে উচ্চশিক্ষা শেষে বিদেশি স্থায়ী হবেন। কিন্তু তার এমন ভাবনায় সমর্থন ছিলো না পরিবারের। উল্টো পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে দেশে স্থায়ী হওয়ার জন্য। পরে হাবিবও সেটা মেনে নেন। নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে পান সাফল্যও।

হাবিবুরের গ্রামের বাড়ি নওগাঁর পত্নীতলা থানার মহেশপুরে। তার বাবা মো. আব্দুর হামিদ। মা বিউটি খাতুন। হাবিবরা পাঁচ ভাই-বোন। তিনি তার মাধ্যমিক বামইল উচ্চ বিদ্যালয় ও উচ্চমাধ্যমিক নওগাঁ সরকারি কলেজ থেকে সম্পন্ন করেছেন। পরবর্তীতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সিনিয়রদের অনুকরণে উচ্চশিক্ষা শেষে পিএইচডির জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষ থেকে তিনি এমন চিন্তা-ভাবনা নিয়ে এগিয়েও যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, দেশে জব করার পরিকল্পনা তখন ছিলো না। তাই অনার্স শেষ করার পরও কোনো জবের আবেদন করিনি।

হাবিবুর রহমান বলেন, মাস্টার্সে এসে বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন স্যারের কাছে থিসিস করেছি। আর পাশাপাশি জিআরই প্রস্তুতি নিতে থাকি। আমি ফার্স্ট অথর হিসেবে ৩টা ও সহযোগী হিসেবে আরও একটি গবেষণাপত্র ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে প্রকাশ করেছি।

দেশে অনার্স-মাস্টার্স শেষে বাইরে স্থায়ী হওয়ার জন্য আরও যা যা করা দরকার, সবই করছিলেন হাবিব। কিন্তু হাবিবের দেশের বাইরে স্থায়ী হওয়ার সিদ্ধান্ত পছন্দ হয়নি পরিবারের। তাই তিনি সমর্থনও পাননি।

হাবিব বলেন, পরিবারকে দেশের বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানালে তারা বলেন বাইরে যাওয়ার কি দরকার? দেশেই কোনো চাকরি করলে হয় না? পরে আমিও অনেক কিছু ভেবে বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসি।

তিনি বলেন, এখনো আমার মনে আছে, যেদিন ৪০তম বিসিএসের প্রিলির তারিখ দেয় সেদিন আমার ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই ওমর আরমান ভাইকে ফোন দিলাম। বললাম যে ভাই বিসিএস দেব (তখন তিনি শিক্ষা ক্যাডারে কর্মরত ছিলেন)। আপনি তো সব জানেন, আমাকে শূন্য থেকে শুরু করতে হবে।

এরপর একেবারের শূন্য থেকে শুরু করেন হাবিব। এখন তিনি প্রশাসন ক্যাডার। বলেন, পিএইচডি করতে গেলে যে পরিমাণ পরিশ্রম করতে হতো সেটা আমি বিসিএসের জন্য করবো। আমার টার্গেট ছিলো প্রথম বিসিএসে ক্যাডার হওয়ার। কিন্তু করোনার কারণে সেটা হয়নি। আমি প্রস্তুতির ক্ষেত্রে প্রিলির পাশাপাশি রিটেনের জন্যেও পড়তাম। সবসময় চেষ্টা করতাম সর্বোচ্চ পরিশ্রম করার। আল্লাহ পাক আমাকে নিরাশ করেন নাই।

বিসিএস প্রস্তুতি শুরুর পর থেকে হাবিবের আসতে থাকে একের পর এক সাফল্য। তিনি বলেন, ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে প্রথম সাফল্যের খবর পাই। সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশের এরোড্রোম অফিসার পদে আমি প্রথম স্থান অধিকার করি। 

‘‘এরপর দ্বিতীয় সুখবরটা পাই ২০২৩ সালের ৩ আগস্ট। ৪১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হই এদিন। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর ছিলো আমার জীবনের ও আমার পরিবারের জন্য সবচেয়ে আনন্দের দিন। যেদিন আমি আমার স্বপ্নের ক্যাডার বিসিএস প্রশাসন সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি।’’

হাবিব নিজের সাফল্যের কৃতিত্ব দিয়েছেন পরিবারকে। তিনি বলেন, বিসিএস জার্নিতে আমার পরিবার যে পরিমাণ সাপোর্ট দিয়েছে, তা বলে বোঝানো যাবে না। আমার মা-বাবা সবসময় আমার জন্য দোয়া করেছেন। আমি আমার শিক্ষকসহ এ পর্যায়ে আসতে যারা সহায়তা করেছে সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।

বিসিএস প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে হাবিব বলেন, আপনাদের টার্গেট থাকবে প্রথম বিসিএসে ক্যাডার হওয়ার। স্বল্প সময়ে বেশি পরিশ্রম করার চেষ্টা করুন। তাতে প্রথম বিসিএস না হলেও দ্বিতীয় বিসিএসে সফল হবেন। আপনাদেরকে স্বপ্ন দেখতে হবে, তবেই সর্বোচ্চ পরিশ্রম করতে পারবেন।

তিনি বলেন, আমার যখন পড়তে ইচ্ছে করত না, তখন আমি যারা সফল হয়েছে তাদের গল্প শুনতাম আর চিন্তা করতাম একটা মাত্র রেজাল্ট যেটা আমার জীবনকে পুরোপুরি পরিবর্তন করে দিতে পারে। তবে সবসময় একটা কথা মাথায় রাখবেন, বিসিএস একমাত্র চাকরি না। এটা না হলে আপনার জীবন বৃথা এমন ভাবার কোনো অবকাশ নেই। বিসিএসের জন্য চেষ্টা করলে বিসিএস না হলেও অন্য ভালো চাকরি অবশ্যই পাবেন। সবার জন্য শুভকামনা রইলো।


সর্বশেষ সংবাদ