ছাত্রদলের ওপর হামলা, সংবাদে নাম না আসায় ছাত্রলীগ নেতার ক্ষোভ

ছাত্রদলের ওপর হামলা
ছাত্রদলের ওপর হামলা   © সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে মঙ্গলবার ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর সহিংসতার ঘটনায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কোন সাংগঠনিক সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেছেন একজন শীর্ষ ছাত্রলীগ নেতা। তিনি আরও দাবি করেছেন, ছাত্রদলের অপরাধমূলক কার্যকলাপ প্রতিরোধ করতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

এদিকে এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মী এ হামলায় অংশগ্রহণের দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক ছবি ও টেক্সট শেয়ার করেছেন। তা এ ঘটনাকে তাদের গর্ব হিসেবেও উল্লেখ্য করেছেন। এই ছাত্রলীগ নেতাদের অধিকাংশই সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি ও ঢাবির বিভিন্ন হল ইউনিটের পদে আসীন রয়েছেন। এদের মধ্যে একজন দুই ক্যাম্পাস প্রতিবেদককে বিষয়গুলো সংবাদমাধ্যমে না আসায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন।  

তিনি জানান, কিছুদিন পরেই ছাত্রলীগের সম্মেলন। এই হামলায় জড়িত থাকার বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে আসলে, সম্মেলনে পদ পেতে সাহায্য করবে। তাই এই বিষয় নিয়ে মিডিয়া কভারেজ দরকার।

এদিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক নেতা জানান, এ ধরনের হামলার সঙ্গে জড়িত কেউ যদি মিডিয়ার স্পটলাইট পায়, তাহলে সে ভালো পোস্ট পাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কয়েকজন প্রাক্তন ছাত্রনেতা জানান, এটি একটা সাধারণ অভ্যাস যে গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো এমন ব্যক্তিদের নির্বাচন করে, যারা এই ধরনের হামলায় অংশ নিতে পারে। এই কারণেই নেতারা নিজেদের সম্পৃক্ততার আস্ফালন করে ফেসবুকে ছবি ও পোস্ট লেখেন।

জানা যায়, মঙ্গলবার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা, লোহার রড ও ছুরিকাঘাত দিয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এতে কয়েকজন নারী কর্মীসহ অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিও ক্লিপগুলোতে দেখা গেছে, ছাত্রদলের নারীকর্মীকে ছাত্রলীগের পুরুষরা মারধর করছে। অন্তত ১০ জন ছাত্রলীগ নেতা নিজেদের ছবি আপলোড করেছেন এবং এ হামলায় তাদের জড়িত থাকার কথা লিখেছেন।

এদের কয়েকজন হলেন- ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্ত, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ইউনিটের সহ-সভাপতি সুরপ মিয়া সোহাগ এবং একই হল ইউনিটের যুগ্ম সম্পাদক আমির হামজাকে হাতে লাঠি নিয়ে দেখা গেছে।

আমির, যিনি আক্রমণে লক্ষণীয়ভাবে আক্রমণাত্মক ছিলেন, তিনি এই সংবাদদাতার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন কেন তিনি ‘সক্রিয়’ থাকলেও সংবাদে তার নাম ছিল না। তিনি জানান, আপনি যদি হামলার বিষয়ে কোনো খবর করেন, তাহলে অনুগ্রহ করে আমার নাম লিখুন। নথিগুলো আমাকে আরও ভালো পোস্ট পেতে সাহায্য করবে।

এছাড়া কিছু নেতা ফেসবুক পোস্টে গর্বিতভাবে নিজেদের ‘অংশগ্রহণ’ সম্পর্কে লিখেছেন ও বলেছেন তারা ছাত্রদলকে সফলভাবে প্রতিহত করেছেন। তারা হলেন- কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি রাকিব হোসেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সেক্রেটারি আল আমিন রহমান, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সভাপতি রুবেল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন রানা, স্যার এএফ রহমান হলের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মুনেম শাহারিয়ার মুন এবং কবি জসিমউদ্দিন হলের সভাপতি মো. সাধারণ সম্পাদক লুৎফুর রহমান প্রমুখ।

ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিমুদ্দিন খান জানান, রাজনৈতিক দলগুলো যদি এ ধরনের হামলাকে যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করে, তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পেশীশক্তি ব্যবহার করে মূল লক্ষ্য বাস্তবায়ন কখনোই সম্ভব হবে না।

তিনি আরও জানান, মনে হচ্ছে ভালো রাজনীতির চেয়ে পেশীশক্তি বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। আর এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নীরবতা আরও বেশি পেশীশক্তি অনুশীলনকে উৎসাহিত করবে।

ঢাবি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন জানান, শাসকপন্থী ছাত্র সংগঠন রাজনীতিতে সব সময় পেশীশক্তি ব্যবহার করে। আমি হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিশেষ করে নারীদের বিচার দাবি করছি।

এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তারা সাড়া দেননি।

তবে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ মো. আরিফ হোসেন জানান, প্রতিপক্ষকে আঘাত করা আমাদের সংগঠনে অর্জন হিসেবে বিবেচিত হয় না। সঙ্কটের সময় যারা দলের সাথে থাকে তাদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!