রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

ছাত্রলীগের হল সম্মেলন ঘিরে উৎসব-উল্লাস, আছে বিভক্তির সুরও

লোগো
লোগো  © ফাইল ছবি

আগামীকাল সোমবার (১৪ মার্চ) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত শাখা ছাত্রলীগের সমন্বিত হল সম্মেলন। দীর্ঘ ছয় বছরের আলোচনা-সমালোচনার ইতি টেনে অনুষ্ঠিত হল সম্মেলনকে ঘিরে করে পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে উৎসবের আমেজ। নেতাকর্মীদের মিছিল, মিটিং, শোডাউন ও ব্যানার-ফেস্টুনে তৈরী হয়েছে ভিন্ন এক পরিবশে সৃষ্টি হয়েছে ক্যাম্পাসজুড়ে।

তবে উৎসবঘন পরিবেশেকে ভারী করে তুলেছে নেতাকর্মীদের মধ্যে সৃষ্ট দুপক্ষের বিরোধ। একটি পক্ষ হল সম্মেলন চাইলেও অপরপক্ষের দাবি শাখা ছাত্রলীগের ২৬তম সম্মেলন। এ নিয়ে দুপক্ষের মাঝে দেখা দিয়েছে বিভক্তির সুর।

এর আগে, গত ৩ মার্চ সমন্বিত হল সম্মেলনকে কেন্দ্র করে শাখা ছাত্রলীগের আয়োজনে একটি বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। যে সভাকে কেন্দ্র করে শাখা ছাত্রলীগের দুপক্ষের বিভক্তি প্রকাশ্যে আসে।

এক পক্ষে রয়েছেন শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি কাজী আমিনুল হক, মিজবাহুল হক মেজবাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক এনায়েত হক রাজু, উপ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক তৌহিদ ইসলাম দুর্জয় ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লাহ হিল গালিব প্রমুখ। তারা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির সম্পাদক ডা. আনিকা ফারিহা জামান অর্ণার অনুসারী।

সভার ব্যানারে জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান ও বর্তমান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের ছবি না থাকায় ছাত্রলীগের একাংশ সভা বন্ধের পক্ষে স্লোগান দেন। ফলে সভা পরবর্তী ওই রাতেই এমন ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে জাতির সামনে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান তারা।

তবে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া দাবি করেছেন বর্ধিত সভার ব্যানার তৈরি করা হয়েছিল কেন্দ্রীয় নির্দেশেনায়। যদিও পরে সেটি পরিবর্তন করা হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের মধ্যে কোনো ধরনের বিভক্তি নেই।

আরও পড়ুন: রাবি ছাত্রলীগের হল সম্মেলন কাল

সংগঠনটির একটি পক্ষ বলছে সভাপতি বিভক্তি অস্বীকার করলেও শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে প্রকাশ্যেই রয়েছে বিষয়টি। ২৬তম সম্মেলনকে কেন্দ্র করে শাখা ছাত্রলীগের এই বিভক্তি বেশ কিছুদিন আগে থেকেই সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। নতুন কমিটি না করে হল সম্মেলন করায় এ বিভক্তি বলে মনে করেন না তারা।

২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ২৫তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১১ ডিসেম্বর গোলাম কিবরিয়াকে সভাপতি ও ফয়সাল আহমেদ রুনুকে সাধারণ সম্পাদক করে ১ বছর মেয়াদী একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে কমিটির মেয়াদ পাঁচ বছর হলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘোষিত হয়নি নতুন কমিটি।

এদিকে নতুন কমিটির দাবিতে ক্যাম্পাসে আলাদা শোডাউন, মিটিং, মিছিল ও মৌন মিছিল-সমাবেশ করতে দেখা গেছে। এমনকি চলতি বছরের শুরুতে এক পক্ষ বর্তমান কমিটির সাথে জাতীয় প্রোগ্রাম ছাড়া কোনো ধরনের প্রোগ্রামে অংশ না নেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছে। বর্তমানে হল সম্মেলন উপলক্ষেও এপক্ষের পদপ্রত্যাশীদের আলাদাভাবে মিটিং, মিছিল ও শো-ডাউন করতে দেখা গেছে।

সংগঠনটির সিনিয়র নেতারা বলছেন, কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের মধ্যে বিভক্তি ভালো কিছু বয়ে নিয়ে আনতে পারে না। এছাড়া আগামীতে সম্মেলন রয়েছে। সেটিকে সফল করার জন্য সকল স্তরের নেতা-কর্মীদের এক হওয়া জরুরী। এসব বিষয়ে দলের অভিভাবক নেতাদের দেখভাল করা প্রয়োজন।

এদিকে আগামীকাল দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সমন্বিত হল সম্মেলন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি আবাসিক হলে সভাপতি- সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছাত্রলীগকর্মীর ৪১৬টি জীবনবৃত্তান্ত জমা পড়েছে।

জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ৪২ জন, শের ই বাংলা এ কে ফজলুল হক হলে ৩০ জন, মতিহার হলে ২২ জন, শাহ মখদুম হলে ৩৪ জন, সৈয়দ আমীর আলী হলে ২৮ জন, লতিফ হলে ২৬ জন, জোহা হলে ২৫ জন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে ৪০ জন, মাদার বখশ হলে ৩১ জন, শহীদ হবিবুর রহমান হলে ৩৭ জন ও জিয়াউর রহমান হলে ২৮ জন।

এছাড়া বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে ২২ জন, মন্নুজান হলে ১৭ জন, তাপসী রাবেয়া হলে ৭ জন, রহমতুন্নেসা হলে ৮ জন, খালেদা জিয়া হলে ৯ জন তাদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন।

হল সম্মেলনকে কেন্দ্র করে পদপ্রত্যাশী জোবায়ের আহমেদ বলেন, আসন্ন সম্মেলনে কমিটিতে এমন নেত্বৃত্ব আসুক যারা সৎ, যোগ্য এবং ক্যাম্পাসে গ্রহণযোগ্য। এছাড়া যারা প্রকৃত অর্থে শেখ মুজিবের আদর্শ ধারণ করে সোনার বাংলাদেশ গড়তে চায় বলে জানান এই ছাত্রলীগ কর্মী।

নারী পদপ্রত্যাশী আভা বলেন, নারীদের রাজনীতিতে পথে সুগম হক এটাই আমার চাওয়া। সম্মেলনের মাধ্যমে প্রগতিশীল চিন্তাধারার নেতৃত্ব আসুক। বাকারম্বর নয়, বরং মেয়েদের নিয়ে ইনোভেটিভ কাজ করতে হবে। আমি নেতৃত্বে আসলে সেই কাজগুলো করার মাধ্যমে দেশনেত্রী হাত শক্তিশালী করতে সর্বদা কাজ করে যাব বলে জানান ছাত্রলীগের এ নারী কর্মী।

হল সম্মেলনের সর্বশেষ প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, আমরা ইতোমধ্যে হল সম্মেলনকে ঘিরে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। যেটুকু বাকি রয়েছে, তা নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হবে বলে আশা করছি।

হল সম্মেলনকে ঘিরে যে পদ-প্রত্যাশীদের নাম ক্যাম্পাসে আলোচিত হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের কাবিরুজ্জামান (রুহুল), আলতাফ সায়েম জেমস, মো. সামিউল আলম পিয়াস ও মুশফিকুর রহমান শুভ। মতিহার হলের রাজিব হোসেন, ভাষ্কর সাহা ও পারভেজ হোসেন। শেরে ই বাংলা হলের মোস্তাফিজুর রহমান রাতুল ও স্বাধীন খান, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের

মাজহারুল ইসলাম, সাখয়াত হোসেন শাকিল, জোবায়ের আহমেদ, ইন্দ্রজিৎ সাহা ও নিয়াজ মোর্শেদ। শাহ্ মাখদুম হলের আবদুল্লাহ আল মামুন ও রামিম আহমেদ রুপম। নবাব আবদুল লতিফ হলের শুভ্রদেব ঘোষ, রাজিব হোসাইন, আল শাহরিয়ার সজল, ইমরান হোসেন ও সোহানুর রহমান।

এদিকে সৈয়দ আমীর আলী হলের শেখ সিয়াম, আল-আমিন, রায়হান হোসেন, হৃদয় সাহা, আবদুল্লাহ আল মারুফ, মো. রেজা করিম (রুবেল), শেখ কামাল। শহীদ শামসুজ্জোহা হলের চিরন্তন চন্দ, অমিত সাহা ও মোমিন ইসলাম। শহীদ হবিবুর রহমান হলের সাজ্জাদ হোসেন, মিনহাজুল ইসলাম, মুমিনুল ইসলাম, আল-আমিন।

মাদার বক্স হলের প্রিন্স হামিম রেজা সাফায়েত, আশিকুর রহমান অপু, জাহিদ হাসান সোহাগ, আকিত রানা, জয়ন্ত সরকার ও জাহিদ হাসান সোহাগ। শহীদ জিয়াউর রহমান হলের আহছান উল্লাহ, মো. রাকিবুল ইসলাম রাকিব, মো. আশরাফুল আমিন, রাশেদ খান ও অনিক শংকর।

অন্যদিকে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে ছাত্রী হলের ছাত্রলীগ কর্মীরাও। আলোচিত হয়েছে মন্নুজান হলের
খন্দকার সুমাইয়া লামিয়া হক স্রোতস্বিনী, ফারজানা শশী, জান্নাতুল নাঈম আকন্দ জানা। বেগম রোকেয়া হলের নুসরাত জাহান আভা, টিউলিপ আব্বাসী, আলফি শারিন আরিয়ানা, মারিশা আনাম বিভা। খালেদা জিয়া হলের প্রিয়াংকা সেন মৌ, আজমিনা বিনতে ইসলাম শ্রেয়া। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের তাজরীন আহমেদ খান মেধা, মারিয়া বিনতে মতিন (ঈশানা), স্মৃতি বালা, নবনীতা বিশ্বাস।রহমাতুন্নেছা হলের: তামান্না আকতার তন্নি ও নাসরিন মিম।


সর্বশেষ সংবাদ