এক দশক রাজনীতি করেও ছাত্রদলে পদহীন ওরা

ছাত্রদলের লোগো
ছাত্রদলের লোগো  © সংগৃহীত

প্রথমবারের মতো কমিটি পূর্ণাঙ্গ না করেই মেয়াদ শেষ করেছে ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি। ফলে দীর্ঘদিন রাজনীতি করার পরও অনেক নেতাকর্মী রয়েছেন পদহীন। কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার দাবিতে পদপ্রত্যাশীরা অনশনসহ নানা কর্মসূচিও পালন করেছেন। সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন তারা। কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া কমিটির অন্য কাউকে মধুর ক্যান্টিনে বসতে দিচ্ছেন না পদপ্রত্যাশীরা। অভিযোগ উঠেছে, পদ আঁকড়ে ধরে রাখতেই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করছেন না ছাত্রদলের শীর্ষ দুই নেতা।

২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে সভাপতি হিসেবে ছাত্রদলের দায়িত্ব পান ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ইকবাল হোসেন শ্যামল। পরে ২১ ডিসেম্বর ৬০ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রদল। গত ১৫ জানুয়ারির মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কথা দিয়েছিলেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। ৩০০ জনের মতো পদপ্রত্যাশী জীবনবৃত্তান্তও জমা দিয়েছিলেন।

পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা জানান, দীর্ঘদিন রাজনীতি করেও বিরোধী দলের রাজনীতিতে পদহীন থাকা অনেক কষ্টের। একদিকে মামলা, পুলিশের হয়রানি অন্যদিকে নিজের কোনো পদ না থাকায় বাড়িতেও মুখ দেখাতে পারছি না। নিয়মিত দলের কর্মসূচিগুলোতে অংশ নিচ্ছি। মিছিল-মিটিং করে যাচ্ছি। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক শুধু বারবার আশ্বাসই দিয়ে যাচ্ছেন। বলেছেন, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন ইউনিট কমিটি দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করবেন। কিন্তু এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটির কোনো প্রক্রিয়াই দেখছি না।

আরও পড়ুন- তিন মাসের কমিটিতে ২ বছর পার

পদপ্রত্যাশীরা আরও জানান, দীর্ঘদিন রাজনীতি করার পর কমিটিতে স্থান না পাওয়ায় অনেক নেতাকর্মী হতাশ হয়ে পড়েছেন। রাজনীতি বিমুখ হচ্ছেন তারা। এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৪-২০০৫ সেশনের আবু তাহের গত বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বর্তমানে তিনি ছাত্রদলের কোনো পদে নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৫-২০০৬ সেশনের খায়রুল আলম সুজন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৬-২০০৭ সেশনের রোকনুজ্জামান রোকন। ২০০৭-২০০৮ সেশনের আনোয়ার পরভেজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকে ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও এখন পর্যন্ত সংগঠনের কোনো পদ পাননি তারা। প্রায় ১৪/১৬ বছর রাজনীতি করছেন তারা। গত বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন শেখ আল ফয়সাল ও ঝলক মিয়া। ১নং সহ সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মো. মুতাছিম বিল্লাহ। দীর্ঘদিন ধরে তারাও ছাত্রদলের কোনো পদে নাই। বিভিন্ন ইউনিট মিলিয়ে এমন আরও অন্তত ২৫০ থেকে ৩০০ জন নেতাকর্মী দীর্ঘদিন রাজনীতি করেও বর্তমানে পদহীন আছেন। এদের মধ্যে বেশির ভাগই নিজ নিজ ইউনিটের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।

পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এম মূছা, আসাদুজ্জামান আসাদ, মো, রেজোয়ান আহমেদ, দিপু পাটোয়ারী, জাহাঙ্গীর আলম, শাহ আলম, ওয়াসিম খান মুক্ত, ইব্রাহীম খলিল ফিরোজ, গাজী হারুনুজ্জামান, সাঈদ আহমেদ, তৌহিদুল ইসলাম, জুবায়ের আহমেদ, সরকার সোহেল, মনজুরুল রিয়াদ, শফিকুল ইসলাম, সাকির আহমেদ, নাজমুল হোসেন, ইমরান আলী সরকার, আবদুস সাত্তার রনি, নাদির শাহ পাটোয়ারী, মিঠুন চক্রবর্তী, সালেহ আদনান, শরীফুল ইসলাম, ওমর সানি, মুস্তাফিজুর রহমান ফরহাদ, মাহফুজ, জিএম ফখরুল ইসলাম, মহাসিন ভূইয়া।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুরুজ মণ্ডল, আসাদুজ্জামান আসলাম, মিল্লাত ভুইয়া, সুজন মোল্লা, আতাউর রহমান বুলেট, মো. আলী হাওলাদার, নাজমুল ইসলাম হাবীব, আবুল খায়ের ফরাজী, সালাউদ্দিন আহমেদ, সানোয়ার হোসেন মিঠু, জুলকার নাইন, ইব্রাহীম কবির মিঠু, আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল, সাইফুল ইসলাম সিয়াম, জাকিরুদ্দিন আবীর, রুহুল আমিন টুটুল, শামীম হোসেন, ঢাকা কলেজের সাহাদাত সোহাগ, মাহী বিশ্বাস, সাইফুল ইসলাম তুহিন, আলীজা মিজান, আনিস, জহির হাসান মোহন, মামুন দেওয়ান, মুধা মাসুদ, আসিক আহমেদ, মারজান, ইসলামুল হক চঞ্চল, রাসেল মোল্লা। কবি নজরুল কলেজের আরিফুর রহমান আরিফ, মো. মিলন হাওলাদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু আহমেদ, সোহান, শাহরিয়ার হক মজুমদার (শিমুল), তিতুমীর কলেজের আবুল হাসান চৌধুরী, মনিরুল ইসলাম পিন্টু, রিয়াজ হোসেন, জিয়া, রকি সোহেল, হাফীজুল্লাহ হীরা, মো. রুহুল আমীন, রেজওয়ানুল হক সবুজ, জাহাঙ্গীর আলম জীবন, বুলবুল হোসেন, মো. জহিরুল ইসলাম, খান মামুন, নাসরিন রহমান পপি, রফিকুল ইসলাম রফিক, আল আমিন, সাজ্জাদুল হানিফ সাজ্জাদ, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নাজমুল, নিশাত, আকন মামুন, এ এম সুমন, ঢাকা মহানগর উত্তর তানভীর আল হাদী, হিমেল আল ইমরান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আবদুস সালাম হিমেল, ঢাকা মহানগর পূর্ব  জসিমউদ্দিন সরদার জীবন, আসাদুজ্জামান আশা, ঢাকা মহানগর পশ্চিম এর ইব্রাহীম খলিল, সম্রাট খান। এছাড়া তাহসান রেজা, মাকসুদুর রহমান সুমিত, শাকিল চৌধুরী, খোরশেদ আলম রকি প্রমুখ।

আরও পড়ুন- ঢাবি ছাত্রদল: নবীনদের বরণে কর্মসূচি নেই, নেতাকর্মীদের ক্ষোভ

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন পদপ্রত্যাশী জানান, বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আগের কমিটির মতো দীর্ঘদিন পদে থাকতে চায়। যার কারণে তারা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করছেন না। এভাবে দীর্ঘদিন ঢাকার ইউনিটগুলো কখনোই কমিটিহীন ছিলো না।

তারা আরও বলেন, কিছু হলেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দোহাই দেন তারা। বেশ কয়েকটা ঘটনায় ধরাও পড়েছেন তারা। বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ওপর আমাদের আস্থা নেই। তারা আরও জানান, দলের ক্ষতির কথা চিন্তা করে আমরা কঠোর কোনো কর্মসূচি দিচ্ছি না। বাধ্য হলে তখন আমাদের করার কিছুই থাকবে না। অবিলম্বে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলনও চাই আমরা। একই সঙ্গে তারা আরও বলেন, গতবারের ঢাউস কমিটি চাই না আমরা। ২৫০ থেকে ৩০০ এর মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করারও দাবি জানান তারা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পদপ্রত্যাশী বলেন, চাকরি কেন্দ্রিক ক্যারিয়ার পেছনে ফেলে আদর্শকে ভালোবেসে সংগঠন করছি। কিন্তু দীর্ঘদিন সংগঠন করার পরও গুটি কয়েক মানুষের ব্যক্তিস্বার্থের বলি হয়ে আমরা আজ পদ ছাড়া ঘুরচ্ছি।

পদপ্রত্যাশী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রচার সম্পাদক মো. জুয়েল মৃধা বলেন, ২২টি মামলায় আসামি আমি। একাধিকবার করাবরণ করেছি। নিয়মিত দলের কর্মসূচিগুলোতে অংশ নিচ্ছি। কিন্তু পদ না থাকায় কাউকে পরিচয় দিতে পারি না। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকে চেয়ে আছি। আশা করি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে উনি উদ্যোগ নেবেন।

এ বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল বলেন, কমিটি প্রস্তুত আছে। খুব দ্রুত প্রকাশ করা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ