'আমি কীভাবে তিন সন্তানকে বোঝাবো তাদের বাবা আর বেঁচে নেই?’

শহীদ আলম সরদার, তার স্ত্রী ও তিন শিশু সন্তান
শহীদ আলম সরদার, তার স্ত্রী ও তিন শিশু সন্তান  © সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ২০-২৪ সালের ৫ আগস্ট স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর বিকালে আনন্দ মিছিলে অংশ নেন সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগরের দিনমজুর আলম সরদার। জানতেন না, সেই আনন্দ মিছিলেই নিভে যাবে তার জীবনপ্রদীপ।

স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতাসহ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দোসররা মিছিল লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে আলম সরদারের বুকে পরপর ৯টি গুলি লাগে। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। 

আলম সরদার (৩৬)-কে হারিয়ে তার স্ত্রী আসমা খাতুন তিন শিশু সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সন্তানরা এখনো পথ চেয়ে বসে থাকে—তাদের বাবা আবার কবে ফিরবেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। 

আরো পড়ুন: জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চাকরি, পদ ৫৫

আসমা খাতুন (২৭) জানান, ‘৫ আগস্ট হাসিনা সরকার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর বিকেলে এলাকার শত শত মানুষের সঙ্গে আমার স্বামীও আনন্দ মিছিলে অংশ নেন। মিছিলটি প্রতাপনগরের তালতলা বাজার থেকে নাকনা গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের বাড়ির সামনে গেলে জাকিরসহ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা মুহুর্মুহু গুলি চালায়। এসময় আমার স্বামীর বুকে পরপর ৯টি গুলি লাগে। প্রচুর রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।’ 

তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী ছিলেন একজন দিনমজুর। কাজ না করলে আমাদের সংসার চলত না। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ঘরবাড়ি হারিয়ে আমরা ওয়াপদার রাস্তার পাশে বসবাস শুরু করি। পরে সংসার নিয়ে প্রতাপনগরের আফদারের মোড়ে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠি। 

তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার স্বামী ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাকে হারিয়ে আমি দিশেহারা হয়ে পড়েছি। বড় ছেলে আশরাফুল ইসলাম (১২) স্থানীয় তালতলা হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। মেজো মেয়ে আজমিরা খাতুন (৮) নুরুলিয়া মাদ্রাসায় তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ছেলের নাম আহসান উল্লাহ, বয়স মাত্র আড়াই বছর।

আরো পড়ুন: জুনায়েদের নেতৃত্বে আসছে ‘ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ’ নামে নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম

আসমা খাতুন বলেন, ছেলে-মেয়েরা এখনও অপেক্ষা করে, বাবা আসবে বলে। ছোট ছেলেটা সারাদিন ‘আব্বা’ ‘আব্বা’ বলে ডাকে। আমি কীভাবে বোঝাবো যে তার বাবা আর বেঁচে নেই?’

তিনি আরও বলেন, ‘স্বামী মারা যাওয়ার পর জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে কিছু টাকা পেয়েছিলাম, সেটি দিয়েই এখন চলছি। কিন্তু সরকার বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো সহায়তা পাইনি। আমি সরকারের কাছে আমাদের পুনর্বাসনের দাবি জানাচ্ছি।’

প্রতাপনগর ইউনিয়ন জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা আল আমিন জানান, ‘৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে প্রতাপনগরের ছাত্র-জনতা মিছিল বের করে। মিছিলটি সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের বাড়ির সামনে গেলে তিনি ও তার দলবল অতর্কিতে গুলি চালায়। এতে আলম সরদার, আনাস বিল্লাহ ও আদম আলী শহীদ হন।

তিনি জানান, ‘জামায়াত ইসলামী তিনটি পরিবারকেই কিছু অর্থ ও খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। তবে তা দিয়ে তারা স্বনির্ভর হতে পারেনি। আমি সরকারের কাছে এ শহীদ পরিবারগুলোর জন্য আর্থিক সহায়তা ও পুনর্বাসনের দাবি জানাই।’

নিহত আলম সরদারের বাবা রহিম সরদার (৬০) ও মা রাশিদা খাতুন (৫৫) বলেন, ‘আমরা খুবই গরিব, ভিটেমাটি ছাড়া কিছুই নেই। সেটাও আম্ফানের তাণ্ডবে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নিজেদেরই চলে না। এখন ছেলের স্ত্রী ও তিনটি ছোট ছেলেমেয়ের খরচ কীভাবে চলবে, আমরা জানি না। আমরা সরকারের কাছে আমাদের ছেলের পরিবারের সহায়তার আবেদন জানাই।’

সূত্র: বাসস


সর্বশেষ সংবাদ