শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে
ঢাকা কলেজের সংলাপে ছাত্রসংগঠনের নেতারা
- ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:১২ PM , আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৫০ PM
ইতিবাচক সংস্কারের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতির গুণগত পরিবর্তন করতে হবে। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে আদর্শ ও নৈতিকতার অনুশীলন করা উচিত। এতে শিক্ষার্থীদের দলীয় আদর্শ চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট রক্ষার্থে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকা কলেজ অডিটোরিয়ামে ‘পরিবর্তনের ছাত্র রাজনীতি’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় ক্রিয়াশীল বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা এসব কথা বলেন। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস। অনুষ্ঠানে যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন আবু বকর সায়েম ও কেফায়েত হোসেন। অনুষ্ঠানটি স্টুডেন্ট সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ব্যানারে আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট সাইয়েদ আব্দুল্লাহ বলেন, ছাত্ররাজনীতি হওয়া উচিত শুধুমাত্র ছাত্রদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে। ছাত্ররা স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে পারছে কিনা, ঠিকমতো হলে থাকতে পারছে কিনা, লেখাপড়ার পরিবেশ ঠিক আছে কিনা এসব বিষয় নিয়ে কথা না বললে ছাত্ররাজনীতি মূল্য হবে শূন্য। অতীতে ছাত্ররাজনীতি দূষিত ছিল। ছাত্ররাজনীতিকে সঠিক পথে নিতে হলে এর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে যারা ছাত্ররাজনীতি করতে চায় তাদের। ছাত্রদের নিজের স্বার্থ ব্যবহার করার কালচার দুঃখজনক ভাবে বলতে হয় অনেক শিক্ষক এ বিষয়টিকে পৃষ্ঠপোষকতা করে।
তিনি বলেন, শিক্ষককেরা নিজেদের স্বার্থে ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে ছাত্রদের ব্যবহার করছে। ছাত্র রাজনীতির এমন নেতাকে দেখতে চাই যারা বলবে ভাইয়েরা তোমরা আগে পড়াশোনা করো। আমার কাছে ঐ নেতায় আদর্শ নেতা। উন্নত বিশ্বে ছাত্ররাজনীতি বিভিন্ন ফ্রন্টে এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটি রূপে চলতে থাকে। এ কারণে তাদের সার্টিফিকেটাও হয়।
ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রশিবিরের আইন ও আন্তর্জাতিক সম্পাদক আব্দুর রহমান আফনান বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদ আমলে ক্যাম্পাস কোনো ছাত্ররাজনীতি ছিল না। ক্যাম্পাসগুলো ছিল একটি সংগঠনের দলীয় অফিস। ক্যাম্পাসগুলো তাদের দলীয় অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য ব্যবহার করেছে। আমরা আশা করি শিক্ষার্থীদের বিগত সময়ে ছাত্ররাজনীতির প্রতি যে বিরূপ মনোভাব গড়ে উঠেছে সেটা ছাত্ররাজনীতির সংস্কারের মাধ্যমে দূর হবে ইনশাল্লাহ। শিক্ষার্থীরা দেখেছে ছাত্রসংগঠনের নেতা যারা থাকবে তারা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, হলে সিট দখল, সিট বাণিজ্য, আধিপত্যের রাজনীতি করেছে।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মতাদর্শকে বাধা দেওয়ার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছিল। আমরা চাই প্রত্যেক ছাত্রসংগঠন তার কথা, চিন্তাভাবনা, মতাদর্শ শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরবে, প্রচার করবে, মতাদর্শ গ্রহণ করার দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের। আমরা এমন ছাত্ররাজনীতি চাই না যেন শিক্ষার্থীদের উপর কোন দলীয় আদর্শ চাপিয়ে দেওয়া হয়। এখনো ফ্যাসিবাদী আমলের মতো ক্যাম্পাসগুলোতে ট্যাগিংয়ের রাজনীতি চলে, তা দূর হয়নি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে আর কোনো ট্যাগিংয়ের রাজনীতি চলবে না।
ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব মিল্লাদ হোসেন বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের যেকোনো প্রয়োজনে পাশে থেকে নৈতিক, যৌক্তিক ইতিবাচক যেকোনো বিষয়ে তাদের পাশে থেকে সোচ্চার থাকা হল ছাত্র রাজনীতি। স্বৈরাচার হঠাতে ছাত্র রাজনীতির বিকল্প নেই। ছাত্রলীগের গেস্টরুম, হল দখল, সিট বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির বিপরীতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ছাত্র রাজনীতির গুণগত সংস্কারের যে চাহিদা ছিল এর প্রেক্ষিতে ছাত্রদল সারাদেশে ৩০টি টিম গঠন করেছে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে নিয়ে আসতে চাই তারা কেমন ছাত্র রাজনীতি চাই। শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেমন ছাত্র রাজনীতি পছন্দ করবে আমরা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সেই রূপরেখা নিয়ে ছাত্র রাজনীতি এগিয়ে যেতে চায়।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ঢাকা কলেজ শাখার সভাপতি নাহিয়ান রেহমান রাহাত বলেন, লড়াইয়ের যে চেতনা, মানুষের মধ্যে মূল্যবোধ, নীতি-নৈতিকতার যে চিন্তা তাকে ভিত্তি করেই রাজনীতি তৈরি হয়। ফলে রাজনীতি একটা উচ্চতর হৃদয়ভিত্তির প্রশ্ন। ব্যক্তিস্বার্থের বিপরীতে সামাজিক দায়বদ্ধতায় রাজনীতি করা প্রয়োজন। ক্যাম্পাসের নীতিনির্ধারণী বিষয়ে ছাত্রদের প্রতিনিধিত্বের জন্যে অবিলম্বে গণতান্ত্রিক উপায়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে।
বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান বলেন, চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে বিশেষ করে ঢাকা কলেজে যে অচলাবস্থা আছে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করার যে প্ল্যাটফর্ম রয়েছে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি। একমাত্র ছাত্রসংগঠনই শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট নিয়ে আসবে, শিক্ষার্থীদের সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেদনা নিয়ে কথা বলতে পারবে।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি শেখ মাহবুবুর রহমান নাহিয়ান বলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে ছাত্রসংগঠনগুলোকে ব্যবহার করা হয়। আমরা শুধু নেতা নয়, নীতির পরিবর্তন চাই। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতির সুস্থ চর্চা আমরা দেখতে পাইনি।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি হবে এমন রাজনীতি যা শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করবে ও কলেজে সকল নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলবে।