অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে

জাবিতে মাদক ব্যবসায়ীকে অপহরণ, অর্ধলক্ষ টাকার মুক্তিপণে মুক্তি

  © লোগো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে এক মাদক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে অর্ধলক্ষ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল রবিবার (১৬ জুলাই) রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাঙামাটি এলাকা থেকে ওই মাদক ব্যবসায়ীকে মারধর করে তুলে আনা হয়। পরে অভিযুক্তরা রাত দেড়টার দিকে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করে ভোর ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার কাছে হস্তান্তর করে ওই মাদক ব্যবসায়ীকে।

ওই মাদক ব্যবসায়ীর নাম ফরিদ হোসেন ওরফে পাঞ্চু (৪০)। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হাউজিং সোসাইটিতে (অরুনাপল্লি) নিরাপত্তা রক্ষী হিসেবে কাজ করতেন। এদিকে, তার স্ত্রী শিরিন আক্তারের দাবি, ‍তার স্বামী মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রলীগের নেতা তার স্বামীকে মাদক ব্যবসার জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন।

শিরীন আক্তার বলেন, গত ৮ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র সাব্বির হোসেন ও মেহেদী হাসান জয়সহ ৭ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে আমার স্বামীকে (ফরিদ) মারধর করে। কেন তারা এই কাজ করেছিল জানতে চাইলে আমার স্বামী বলে, তারা আমাকে মাদকের ব্যবসা করতে বলে কিন্তু আমি করতে রাজি না হলে তারা মারধর করে।

তিনি আরও বলেন, গতকাল রবিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমার স্বামী (ফরিদ) ওষুধ কিনতে যায়। সেখান থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থী আমার স্বামীকে মেরে রিক্সায় তুলে নিয়ে যায়। আমি খবর পেয়ে রিক্সার পিছনে দৌড়ে যাই এবং আমার স্বামীকে টেনে নামানোর চেষ্টা করি। কিন্তু তা সম্ভব হয় নি। আমি কারও মুখ চিনতে পারিনি। তবে আমাদের সন্দেহ সাব্বির আর জয় যেহেতু আগে মারধর করেছিল, সুতরাং তারাই এই কাজ করতে পারে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র এসে ফরিদ হোসেনকে ধরে মারধর করে নিয়ে যায়। পরে ফরিদ হোসেনকে মারধর করে রিকশায় ওঠানোর সময় তার স্ত্রী তাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও তাকে নিয়ে যায় ওই ছাত্ররা। তবে ফরিদ নিজে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত বলে জানান এলাকাবাসী। 

এদিকে আজ ভোর সাড়ে চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নিরাপত্তা রক্ষী নূর এ আলম বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলের বিপরীতে সুইজারল্যান্ড এলাকা থেকে ওই মাদক ব্যবসায়ীকে নিয়ে আসে।

নূর এ আলম জানান, ভোর চারটার দিকে নিরাপত্তা শাখা থেকে আমাকে জানানো হলে আমি ওই ব্যক্তিকে (ফরিদ) নিয়ে আসি। তখন সেখানে চার জন ফরিদকে আমার কাছে হস্তান্তর করে যদিও তাদের কাউকে আমি চিনি না। তবে দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রই মনে হয়েছে। ফরিদকে আনার সময় কিছু ইয়াবা এবং এক বোতল ফেন্সিডিলও দিয়ে দেয়।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) জেফরুল হাসান চৌধুরী সজল বলেন, ভোর রাতে এই ঘটনা জানতে পারি। মওলানা ভাসানি হলের ৪৪তম ব্যাচের নাঈম আমাকে ফোন দিয়ে ঘটনা জানায় তখন আমরা একজন নিরাপত্তা রক্ষীকে সেখানে পাঠাই। পরে আমরা পুলিশকে জানালে পুলিশ ওই মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে বাদী হয়ে মামলা করে এবং তাকে নিরাপত্তা শাখা থেকে নিয়ে যায়।

এদিকে মাদক ব্যবসায়ী ফরিদ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গতকাল শহীদ রফিক-জব্বার হলের সাজ্জাদ সোয়াইব চৌধুরী, মওলানা ভাসানি হলের নাঈম, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের তৌহিদুল ইসলাম তাকীদ এবং মীর মশাররফ হোসেন হলের আলরাজি সরকার আমাকে মারধর করে নিয়ে যায়। সেখানে সাব্বির হোসেন নাহিদ ও মেহেদী হাসান জয় ছিল না কিন্তু যারা আমাকে মারধর করে ওঠিয়ে নিয়ে আসে তারা সাব্বির আর জয়ের সাথে পুরো সময় মুঠোফোনে যোগাযোগ করেছিল।

তিনি আরও বলেন, ওই চারজন আমাকে রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‍সুইজারল্যান্ড এলাকায় নিয়ে অনেক মারধর করে এবং আমার পরিবারের কাছে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে আমাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকার চুক্তি হয়। রাত দেড়টার দিকে আমার পূর্ব পরিচিত আপেল মাহমুদ তাদের কাছে পঞ্চাশ হাজার টাকা দেয়। কিন্তু তখনও তারা আমাকে ছাড়েনি। পরে ভোরে তারা কিছু নকল ইয়াবা এবং একটি বোতলে পানি ভরে ফেন্সিডিল নামে চালিয়ে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার কাছে আমাকে দিয়ে দেয়।” 

এ বিষয়ে আপেল মাহমুদ বলেন, ছাত্রলীগ নেতারা ফোন দিয়ে ফরিদের পরিবারের কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করেন। তখন ফরিদের পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি আমাকে জানালে, আমি ৫০ হাজার টাকা নিয়ে দুইজন ছাত্রলীগ নেতার কাছে দিয়ে আসি। রাতের অন্ধকারে আমি তাদের চিনতে পারিনি। তবে এহসান ইমাম নাঈম, সাব্বির হোসেন নাহিদ, মেহেদী হাসান জয়, সাজ্জাদ সোয়াইব চৌধুরী, মো. তৌহিদুল ইসলাম তাকীদ ও আলরাজী সরকার জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করছি। কারণ তারা এর আগেও কয়েকবার এসে টাকা দাবি করেছিলো।

ফরিদ হোসেনকে মারধর করে তুলে আনার ক্ষেত্রে ফরিদ হোসেন যাদের নাম বলেছেন তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। তারা হলেন- শহীদ রফিক-জব্বার হলের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাজ্জাদ সোয়াইব চৌধুরী, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের অর্থ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম তাকীদ, মওলানা ভাসানী হলের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এহসান ইমাম নাঈম ও মীর মশাররফ হোসেন হলের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের উপ-ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক আল রাজি সরকার।

তাদের নেতৃত্বে ছিলেন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাব্বির হোসেন নাহিদ ও ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান জয়।  

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাব্বির হোসেন নাহিদ ও এহসান ইমাম নাঈম, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান জয় এবং উপ-ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক আলরাজী সরকার বলেন, এ ধরনের কোন কাজের সাথে তারা জড়িত না।

অভিযুক্ত তৌহিদুল ইসলাম তাকীদ বলেন, আমি পাঞ্চুকে ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে জানি। তার সাথে আমার কোন খাতির নেই। কারণ ইয়াবা আমি অপছন্দ করি। আর গতকাল মারধরের প্রশ্নই আসেনা। গতকাল বিকেল ৫টাতেই আমি ঢাকায় চলে আসি। এখনো ঢাকাতেই আছি।

অন্যদিকে সাজ্জাদ সোয়াইব চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান লিটনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক নুর আলম বলেন, প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে সবগুলো ইয়াবা মনে হয়নি, নকলও রয়েছে। তবে আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমাদের এটা পরীক্ষা করতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ