মিরপুর স্টেডিয়ামে থমথমে অবস্থা, মাঠে কি গড়াবে দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট

মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ-দ. আফ্রিকা
মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ-দ. আফ্রিকা  © সংগৃহীত

গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ সরকারের বড় ধরনের পটপরিবর্তন প্রভাব ফেলেছে দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে। এ তালিকা থেকে বাদ যায়নি বাংলাদেশের ক্রিকেটও। বাংলাদেশের ক্রিকেটের বোর্ডের সভাপতি থেকে কোচ পরিবর্তন হয়েছে একাধিক ব্যক্তিবর্গ। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ভেন্যু পরিবর্তন হয়ে চলে গিয়েছে আরব আমিরাতে। দীর্ঘদিন বিরতির পর মিরপুর হোম অব ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে সিরিজের প্রথম টেস্ট গড়াবে তো ম্যাচটি মাঠে? এই নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বির্তকের সূত্রপাত ঘটে গত ভারত সিরিজে কানপুরে বাংলাদেশের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের সংবাদ সম্মেলনের পরে থেকে। সেদিনের সংবাদ সম্মেলনে তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, দীর্ঘ ১৭ বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারের ইতি টানতে চলেছেন তিনি। তার ইচ্ছে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে সিরিজটি খেলে ঘরের মাঠে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বলা। 

সংবাদ সম্মেলনের পর থেকে দিন যত এগিয়েছে তৈরি হয়েছে নানা জল্পনা কল্পনা। বাংলাদেশের ক্রীড়াপ্রেমীরা ভাগ হয়ে গেছেন দুইটি গোষ্ঠীতে। একদল বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিবের পক্ষে আরেকদল আওয়ামী লীগের মাগুরা-২ আসনে সংসদ সদস্য সাকিবের বিপক্ষে।

সবকিছুকে ছাপিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে প্রথম টেস্টে সাকিবকে নিয়ে দল ঘোষণা করে বিসিবি। এরপরেই শুরু হয় মিরপুর স্টেডিয়ামে দুইপক্ষের সমর্থকদের পাল্টাপাল্টি অবস্থান। সর্বশেষ নিরাপত্তা জনিত কারণে দেশে আসতে বারণ করা হয় সাকিবকে। তার জায়গায় প্রথম টেস্টে দলে ডাক পান মুরাদ।

এরপরেও যেন কিছুতেই স্বস্তি ফিরছে না মিরপুরে। রবিবার দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে সিরিজের প্রথম টেস্টের আগেরদিন দুপুরে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের উদ্দেশ্যে লং মার্চ করার কথা সাকিব ভক্তরা আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেদিন দুপুর দুইটার দিকে লং মার্চ নিয়ে স্টেডিয়ামের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন তারা।

সংখ্যায় তারা খুব বেশি ছিলেন না। শখানেক লোক মিরপুর স্টেডিয়ামের সামনে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন। তারা দীর্ঘক্ষণ ধরে মিছিল করতে থাকেন ও দুই নম্বর গেটের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। যদিও পুলিশ তাদের যেতে দেয়নি। দুই নম্বর গেট থেকে প্রশিকার মোড় পর্যন্ত ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছিলেন আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা।

লং মার্চের এক পর্যায়ে সাকিব ভক্তদের দুই পক্ষের হাতাহাতি শেষ পর্যন্ত মারামারিতে রূপ নেয়। যার প্রেক্ষিতে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয়।

এদিকে কানপুরের সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও জানিয়েছিলেন, টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে বিদায় নিলেও আগামী বছর পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য চ্যাম্পিয়ন ট্রফি খেলে সব ধরনের ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে চান সাকিব আল হাসান। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে সিরিজের প্রথম টেস্টে আজ সকাল ১০ টায় মুখোমুখি হবে স্বাগতিক বাংলাদেশ।

এখন পর্যন্ত ১৪টি টেস্টে একে অপরের মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা। সেখানে ১২টিতে জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দুই টেস্ট ড্র হয়েছে। ফলে টেস্ট ক্রিকেটে তাদের বিরুদ্ধে এখনও জয় পায়নি বাংলাদেশ। দুই দলের টেস্ট সিরিজে সর্বোচ্চ রান দক্ষিণ আফ্রিকার। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম টেস্টে ৭ উইকেটে ৫৮৩ রান করেছিলো প্রোটিয়ারা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান ৩২৬।

রোববার (২০ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত জানিয়েছেন একাদশে তিন কিংবা চার জন স্পিনার থাকার কথা। সেক্ষেত্রে মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে থাকছেন তাইজুল ইসলাম। তৃতীয় স্পিনার হিসেবে দেখা যেতে পারে নাঈম হাসানকে। 

বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ: সাদমান ইসলাম, জাকির হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, মেহেদী হাসান মিরাজ, লিটন দাস, নাঈম হাসান, তাইজুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ এবং নাহিদ রানা।

দক্ষিণ আফ্রিকার সম্ভাব্য একাদশ: এইডেন মারক্রাম (অধিনায়ক), টনি ডি জর্জি, ট্রিস্টান স্টাবস, ডেওয়াল্ড ব্রেভিস, ডেভিড বেডিংহাম, কাইল ভেরিয়েন্নে, উইয়ান মুল্ডার, সেনুরান মুথুসামি, কেশব মহারাজ, ডেন পিয়েট এবং কাগিসো রাবাদা।

আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ হওয়ায় এই সিরিজটি দুই দলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। সবশেষ ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সফরে এসেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ৯ বছর পর আবারও লাল-সবুজের গালিচায় পা রেখেছে প্রোটিয়ারা।


সর্বশেষ সংবাদ