১৭ বছর আগে ছিলেন মেসির কোলে, এই শিশুটিই আজকের ইয়ামাল

মেসির কোলের এই শিশুটিই আজকের ইয়ামাল
মেসির কোলের এই শিশুটিই আজকের ইয়ামাল  © সংগৃহীত

সম্প্রতি মেসির সঙ্গে এক শিশুর ছবি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একটি শিশুকে বাথটবে বসিয়ে গোসল করাচ্ছেন ২০ বছরের মেসি। মেসির কোলের ওই শিশুটিই আজকের ইয়ামাল। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই মেসি-ইয়ামালের এই ছবিটি নিয়েই চর্চা চলছে। ইউরোর ময়দানে ফুল ফোটাচ্ছেন ইয়ামাল। আর মেসি কোপা আমেরিকায়। দুই জনই চলে গেছেন ফাইনালে। 

‘চুপচাপ এগিয়ে চলো। শুধু চেকমেট হওয়ার সময় কথা বলো’-ইউরো কাপে ফ্রান্সের বিপক্ষে সেমিফাইনালে মাঠে নামার আগে ইনস্টাগ্রামে কথাটা লিখেছিলেন লামিন ইয়ামাল। ম্যাচের আগে ফ্রান্স মিডফিল্ডার আদ্রিয়েন রাবিওত বলেছিলেন, ফ্রান্সকে হারাতে হলে ইয়ামালকে আরও ‘বেশি কিছু’ করতে হবে। সে কথার জবাবেই হয়ত ইনস্টাগ্রামে উপরের কথাটা পোস্ট করেছিলেন ১৬ বছর বয়সি স্প্যানিশ তারকা।

তবে শুধু ইনস্টাগ্রামে লেখা দুই বাক্যেই নয়, খেলার মাঠেও জবাবটা নিজের মতো করে দিয়েছেন ইয়ামাল। সেই রাবিওতকে নাচিয়েই ২৫ গজ দূর থেকে ফ্রান্সের জাল বল পাঠিয়েছেন। তার গোলেই ঘুরে গেছে ম্যাচ। এরপর জুলস কুন্দের আত্মঘাতী গোলে ফরাসিদের টপকে ফাইনালের টিকিট কাটে স্পেন।

বর্তমানে লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে কোপা আমেরিকায় ব্যস্ত। আর সেই বাচ্চাটি খেলছে এবারের ইউরো কাপে। একসময়ে বার্সেলোনার জার্সিতে মেসি বিশ্বফুটবলকে সম্মোহীত করেছেন। বার্সার হয়ে আলো ছড়ানোর পরে ইউরোয় এখন ইয়ামাল রীতিমতো আলো ছড়াচ্ছেন। যে ক্লাব একসময়ে ছিল মেসির যৌবনের উপবন, সেই ক্লাবের হয়ে এখন স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ইয়ামাল।

যে বাচ্চার ছবি ভাইরাল হয়েছে, সেটি লামিনে ইয়ামালের। সেই সময় মেসির লম্বা চুল ছিল। ছবিটি ১৭ বছর আগের। মেসি এখনও লাজুক। কিন্তু তখন মেসি আরও লাজুক ছিলেন। জোয়ান মনফোর্ট ওই ছবি তুলেছিলেন। মেসি প্রথমে ওই ফটোশুটের জন্য অত্যন্ত ইতস্তত করেছিলেন। কারণ তিনি জানিয়েছিলেন, এত ছোট বাচ্চা কী ভাবে সামলাতে হয় তা তিনি জানেন না। কে জানত ২০০৭ সালের ওই ছবি নিয়ে এখন এত আলোচনা হবে!

একসময়ে ছিলেন মেসির কোলে! কোপায় এলএম ম্যাজিকের পাশেই ইউরোয় রূপকথা লিখছেন ইয়ামাল

ইয়ামালের বাবা মৌনির নাসরাউই গত সপ্তাহে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছিলেন মেসি ও ইয়ামালের ছবি। ক্যাপশনে লেখা ছিল, 'দ্য বিগিনিং অফ টু লিজেন্ডস।'  আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, কয়েকমাস বয়সের ইয়ামাল প্লাস্টিকের বাথটবে রয়েছে। হাসিমুখে থাকা মেসি শিশু ইয়ামালের হাত ধরে রয়েছেন। পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন ইয়ামালের মা। ফটোগ্রাফার জোয়ান মনফোর্ট সেই ছবি তোলেন। ভিতরের গল্প বলেন তিনি।

মনফোর্ট বলেন, বার্সেলোনার ফুটবলাররা স্থানীয় সংবাদপত্র দিয়ারিও স্পোর্ট এবং ইউনিসেফের বার্ষিক চ্যারিটি অনুষ্ঠানের অংশ হিসাবে শিশু ইয়ামাল এবং তার পরিবারের সঙ্গে ছবি তুলেছিল। শুটিংয়ের দায়িত্বে ছিলেন মনফোর্ট। তিনি বলেন, শিশু ইয়ামালকে কীভাবে ধরতে হবে, সেটা প্রথমে জানতই না মেসি। ও খুব অন্তর্মুখী স্বভাবের। লাজুক প্রকৃতির। এক লকার রুম থেকে বেরিয়ে আরেক লকার রুমে ঢুকতে হয়েছিল মেসিকে। সেই লকার রুমে একটা বাথটবের মধ্যে ছিল শিশু ইয়ামাল। 

মেসির জন্য ব্যাপারটা খুবই কঠিন ছিল।'' মেসি তখন সদ্য কৈশোরে। ফুটবল দুনিয়া জয় করার দৌড় শুরু করেছেন। ঠিক আজকের ইয়ামালের মতোই। তখন কে আর জানতেন মেসি আর শিশু ইয়ামালের এই ছবিটাই ফুটবলবিশ্বে চর্চার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

সেই ইয়ামালই এখন বল পায়ে কারিকুরিতে মেসিকে মনে করাচ্ছেন। ইউরোর ইতিহাসে সবচেয়ে কমবয়সে মাঠে নামা, গোল আর অ্যাসিস্টের কীর্তি গড়েছেন ইয়ামাল। মেসির মতো রেকর্ডের ফুলঝুরি সাজাচ্ছেন কিশোর বয়সেই। এরই মধ্যে বার্সেলোনার মূল দলের হয়ে নজর কেড়েছেন ১৬ বছরের উইঙ্গার ইয়ামাল। স্পেনের অনূর্ধ্ব ১৫, ১৬, ১৭, ১৯ সব দলের হয়ে খেলেছেন। জাতীয় দলের হয়েও খেলে ফেললেন ১৩টি ম্যাচ।

স্পেনের মাটারা প্রদেশে এক উদ্বাস্তু পরিবারে জন্ম ইয়ামালের। তার বাবা মরক্কোর মানুষ। মা আফ্রিকার ছোট্ট দেশ নিরক্ষীয় গিনির। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছেন ইয়ামাল। ২০১৪ সাল থেকে বার্সেলোনায় স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করে ইয়ামালের পরিবার। তখন তাকে ৭ বছর বয়সে ভর্তি করানো হয় বার্সেলোনার ফুটবল অ্যাকাডেমিতে। স্পেনের প্রতিটি বয়সভিত্তিক দলের হয়ে প্রতিভার পরিচয় দেওয়া ইয়ামালকে ছোট বয়সেই জাতীয় দলের হয়ে খেলার প্রস্তাব দিয়েছিল মরক্কোর ফুটবল সংস্থা। তবে ইয়ামাল বেছে নিয়েছেন নিজের জন্মভূমিকে। 

 

সর্বশেষ সংবাদ