ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে মেসি-হালান্ড-এমবাপ্পে কে কোথায় দাঁড়িয়ে

হালান্ড- মেসি-এমবাপ্পে
হালান্ড- মেসি-এমবাপ্পে  © সংগৃহীত

ফুটবলারদের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ মর্যাদাকর পুরস্কার ব্যালন ডি’অর। কে হচ্ছেন সেরা, জানতে যেনো তর সইছে না কারও। এরইমধ্যে পাওয়ার র‌্যাঙ্কিং প্রকাশ করতে শুরু করেছে ইউরোপীয় গণমাধ্যম। চলতি বছরের ব্যালন ডি’অর প্রদানের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৩০ অক্টোবর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে এক জমকালো আয়োজনে ২০২২-২৩ মৌসুমের ব্যালন ডি’অর বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে। মূলত লড়াইটা হবে লিওনেল মেসি, নরওয়েজিয়ান স্ট্রাইকার গোলমেশিন আর্লিং হালান্ড ও এমবাপ্পের মধ্যে। 

১৯৫৬ সাল থেকে ব্যালন ডি’অর দিয়ে আসছে ফ্রেঞ্চ ফুটবল ম্যাগাজিন। প্রতিবছর গণমাধ্যম প্রতিনিধি, জাতীয় দলের অধিনায়ক ও কোচদের ভোটের ভিত্তিতে নির্বাচিত হয় বর্ষসেরা খেলোয়াড়। এই পুরস্কারের জন্য ৩০ জনকে মনোনীত করবে কর্তৃপক্ষ। 

ফ্রান্স ম্যাগাজিন এখন পর্যন্ত তাদের বর্ষসেরাদের তালিকা প্রকাশ না করলেও পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে ২০ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে ফুটবল বিষয়ক জনপ্রিয় গণমাধ্যম গোলডটকম। যেখানে প্রথম তিনজনের তালিকাতে রয়েছেন লিওনেল মেসি, আর্লিং হালান্ড ও কিলিয়ান এমবাপ্পে। এছাড়াও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী ম্যানচেস্টার সিটি থেকে সুযোগ পেয়েছেন ৮জন খেলোয়াড়।

গোলডটকম তাদের তালিকার শীর্ষে এখনো রেখেছে বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক লিওনেল মেসিকে। তারপরেই রয়েছে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগজয়ী ম্যানচেস্টার সিটির নরওয়েজিয়ান স্ট্রাইকার আর্লিং হালান্ড। তৃতীয় স্থানে রয়েছেন পিএসজির ফরাসি স্ট্রাইকার কিলিয়ান এমবাপ্পে। 

লিওনেল মেসি (আর্জেন্টিনা/ইন্টার মিয়ামি)
কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে দীর্ঘ ৩৬ বছর পর শিরোপা জিতিয়েছেন। পিএসজিকে লিগ ওয়ানের শিরোপা জয়ে ভূমিকা রাখলেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে নিজ ক্লাবের ছিটকে পড়াটা ছিল তার জন্য হতাশার। এবারো হয়তো ব্যালন ডি’অর জয় করতে পারেন তিনি। বিশ্বকাপ জয়ের পাশাপাশি ৩৮টি গোল এবং ২৫টি অ্যাসিস্ট রয়েছে মেসির। বিশ্বকাপ ছাড়াও লিগ ওয়ান এবং ট্রফি দেস চ্যাম্পিয়ন শিরোপাও রয়েছে তার। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তার দল দাপট দেখাতে ব্যর্থ হয়ে শেষ ষোলো থেকে ছিটকে যায়।

পিএসজি

আর্লিং হালান্ড (নরওয়ে/ম্যানচেস্টার সিটি)
মেসির ব্যালন ডি’অর জয়ের ক্ষেত্রে বড় বাধা ম্যানচেস্টার সিটির ফরোয়ার্ড হালান্ড। চলতি মৌসুমে নরওয়েজীয় এই স্ট্রাইকার রীতিমতো অতিমানবীয় পারফরম্যান্স করেছেন। ২০২২-২৩ মৌসুমে ফর্মের তুঙ্গে আছেন অর্লিং হালান্ড। চলতি মৌসুমে সবমিলিয়ে তিনি ৫৩ গোল করেন। পাশাপাশি তিনি ৯টি অ্যাসিস্টও করেন। সিটির জার্সিতে প্রিমিয়ার লিগের পাশাপাশি জিতেছেন এফএ কাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা। হালান্ড চলতি মৌসুমে অগণিত রেকর্ড ভাঙলেও তার শেষ আটটি খেলায় মাত্র একটি গোল করতে সক্ষম হন। তাই ধারণা করা হচ্ছে ব্যালন জয়ের ক্ষেত্রে তিনি কিছুটা পিছিয়ে পড়েছেন। 

রোবট' হলান্ডকে ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ করতে পিটিশন!

কিলিয়ান এমবাপ্পে (ফ্রান্স/পিএসজি)
কাতার বিশ্বকাপে ফাইনালে অতুলনীয় ছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। সর্বোচ্চ গোলস্কোরারও ছিলেন তিনি। তবে দুর্ভাগ্যবশত সোনালি ট্রফিতে চুমু আঁকা হয়নি তার। কিন্তু ২৪ বছর বয়সী ফরোয়ার্ডের ঈর্ষণীয় পারফরম্যান্সেই শিরোপা লড়াইয়ের মঞ্চে নাম লেখায় ফ্রান্স। ফলে ব্যালন ডি’অর জিততে পারেন তিনিও। তৃতীয়স্থানে আসতে তাকে লড়তে হয়েছে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের সঙ্গে। চলতি মৌসুমে এমবাপ্পে ৫৩টি গোল, ১৪টি অ্যাসিস্ট করেছেন। রয়েছে একটি মাত্র শিরোপা। তিনি ক্লাব এবং দেশের হয়ে ৫০টিরও বেশি গোল করেছেন। কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে হ্যাটট্রিক করেছেন। পুরো বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৮ গোল করে জিতেছে গোল্ডেন বুটের শিরোপা।

ফুটবলের নতুন রাজা এমবাপ্পে ফুটবলের নতুন রাজা এমবাপ্পে

ভিনিসিয়ুস জুনিয়র (রিয়াল মাদ্রিদ) ব্যালন ডি’অর জয়ের দৌড়ে রয়েছেন ব্রাজিলিয়ান ভিনিসিয়ুসও। চলতি মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫১ ম্যাচে ২৩ গোলের পাশাপাশি ২১টি অ্যাসিস্ট করেছেন এই রিয়াল মাদ্রিদ উইঙ্গার। পরিসংখ্যান দিয়ে তাকে মূল্যায়ন করা কিছুটা কঠিনও। ম্যাচে যেভাবে প্রভাব বিস্তার করে খেলেন এই তরুণ ফুটবলার সেটি অনেক সময়ই ম্যাচের মূল পার্থক্য গড়ে দেয়।

কেভিন ডি ব্রুইনা (ম্যানচেস্টার সিটি) 
সাম্প্রতিক মৌসুমগুলোতে ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে অসাধারণ খেলছেন কেভিন ডি ব্রুইনা। ২০২২-২৩ মৌসুমটি এর ব্যতিক্রম ছিল না। সিটির অনন্য এক আবিষ্কার তিনি। অসাধারণ পাস দেয়ার দক্ষতা এবং দলীয় লক্ষ্য অর্জনে ধারাবাহিক ভূমিকার মাধ্যমে সমর্থক-পন্ডিতদের বিস্মিত করে চলেছেন এ বেলজিয়ান। ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে এ মৌসুমে সব প্রতিযোগিতায় ৪৮ ম্যাচে ১০ গোল করেছেন ব্রুইনা। পাশাপাশি ৩১ গোলে সহায়তা করেছেন তিনি। প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপ জয়ী এ তারকা ২০২৩ ব্যালন ডি’অর জয়ের অন্যতম দাবিদার।

এ তিনজন ছাড়া বাকিরা হলেন-
ইল্কায় গুন্দোয়ান (ম্যানচেস্টার সিটি), ভিক্টর ওসিমেন (নাপোলি), রড্রি (ম্যানচেস্টার সিটি), রবার্ট লেভানদোভস্কি (বার্সেলোনা), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), বার্নার্ডো সিলভা (ম্যানচেস্টার সিটি), করিম বেনজেমা (আল-ইত্তিহাদ), খভিচা কোয়ারাটশেলিয়া (নাপোলি), মার্কাস রাশফোর্ড (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), জুড বেলিংহাম (বরুশিয়া ডর্টমুন্ড), লাউতারো মার্টিনেজ (ইন্টার), বুকায়ো সাকা (আর্সেনাল), জন স্টোনস (ম্যানচেস্টার সিটি), জ্যাক গ্রিলিশ (ম্যানচেস্টার সিটি) ও ক্যাসেমিরো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড)।

উল্লেখ্য, ব্যালন ডি’অরে কেন মেসি এখন আর কেন শতভাগ ফেবারিট নন, তা লরিয়াস পুরস্কার অনুষ্ঠানে এসে স্পষ্ট করেছেন লুইস ফিগো। মূলত, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বাজে পারফরম্যান্সের কারণেই এই দৌড়ে কিছুটা হলেও পিছিয়ে রয়েছেন আর্জেন্টিনার এই ফুটবলার। চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল পার্থক্য গড়ে দিতে পারে বলেও মন্তব্য করেন ফিগো। 

ব্যালন ডি’অর জয়ে কাকে ফেবারিট মানছেন জানতে চাইলে পর্তুগিজ কিংবদন্তি বলেছেন, ‘আমি মেসিকে বাছাই করব না; কারণ, সে আর চ্যাম্পিয়নস লিগে নেই। আমি মনে করি, যারা ভোট দেয় তাদের ওপর এই প্রতিযোগিতার দারুণ প্রভাব আছে।


সর্বশেষ সংবাদ