হলিক্রসে ছাত্রী আত্মহত্যা

তাৎক্ষণিকভাবে শিক্ষকেরও সেই প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব কিনা—প্রশ্ন তদন্ত কমিটির

হলিক্রস
হলিক্রস   © ফাইল ফটো

হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী পারপিতা ফাইহার আত্মহত্যার ঘটনায় গঠিত পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদনে গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে। প্রথম ও দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় উচ্চতর গণিতের প্রশ্ন অনেক কঠিন করা হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষকের পক্ষেও প্রশ্নের তাৎক্ষণিক সমাধান প্রায় অসম্ভব ছিল। প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় নবম শ্রেণির দুই শাখার মোট ১০৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫২ জন ফেল করে। দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় ফেল করে ৪০ জন। প্রথম সাময়িক পরীক্ষার হতাশাজনক ফলের পরও কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের মান উন্নয়নে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার ফলেও আশানুরূপ উন্নতি হয়নি।

কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদন সংস্থাটির পরিচালক অধ্যাপক অলিউলাহ মো. আজমগীরের কাছে জমা হয়। দু-একদিনের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদনও জমা দেওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আজমগীর বলেন, কমিটি একাধিক দিন সরেজমিন তদন্ত করে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে। নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের একটি দুঃখজনক ঘটনা তদন্ত করা হলেও পর্যবেক্ষণ সামনে রেখে সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে প্রতিবেদন ও সুপারিশ তৈরি করা হয়েছে। যাতে এই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে অন্যান্য স্কুলের ক্ষেত্রেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়। দু-একদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। প্রতিবেদনটি হাতে পেলেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

আরও পড়ুনঃ ফার্স্ট নয়, আত্মহত্যা করা হলিক্রস ছাত্রী ৩২তম ছিলেন

২৩ আগস্ট ছাত্রী ফাইহা আত্মহত্যা করে। ডিআইএর তদন্ত কমিটি সূত্র জানায়, ছাত্রীটিকে মারধরের কোনো প্রমাণ তারা পাননি। তারা যে খাতা জব্দ করেছেন, সেখানেও ফেল করিয়ে দেওয়ার কোনো নিদর্শন পাননি। বরং খাতা যথাযথভাবেই সংশ্লিষ্ট শিক্ষক মূল্যায়ন করেছেন। তবে বেশকিছু বিষয় পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে কমিটির। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-সংশ্লিষ্ট শিক্ষক কোচিং নীতিমালা উপেক্ষা করে নিজের সেকশনের ১০-১১ জন ছাত্রীকে কোচিং করান। নবম ও দশম শ্রেণিতে একই বিষয়ে পাঠদান করান। এখানে ধারাবাহিকতা রক্ষার মতো ইতিবাচক দিক থাকলেও নেতিবাচক দিক হচ্ছে, ছাত্রীদের জিম্মি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় ৫২ শিক্ষার্থী ফেল করেছে। কিন্তু তাদের মান উন্নয়নে ‘মেকআপ’ ক্লাসের কোনো ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষ নেয়নি। আবার উচ্চতর গণিত বিষয়ের প্রশ্ন প্রথম ও দ্বিতীয় সাময়িক উভয় পরীক্ষায়ই খুবই কঠিন হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে কোনো শিক্ষকেরও সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব কিনা-সেই প্রশ্ন তদন্ত কমিটির।

কেননা প্রশ্নপত্র প্রণয়নে শিক্ষা বোর্ডগুলোর নিয়ম আছে। তাতে কিছু প্রশ্ন সবধরনের শিক্ষার্থীর উত্তর করার মতো থাকে। আর কিছু প্রশ্ন থাকে মধ্যম ও অতি ভালোমানের ছাত্রছাত্রীর উপযোগী। কিন্তু প্রশ্ন যত কঠিন ছিল, তত কঠিন করার যৌক্তিকতা দেখছে না তদন্ত কমিটি। প্রতিষ্ঠানটিতে ফেল ও পাশ করা শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের আলাদা দিনে তলব করার ব্যবস্থা আছে। এর পরিবর্তে একইদিন অভিভাবক মিটিং করা হলে ছাত্রীদের মনস্তাত্তি¡ক চাপ কম পড়ার সুযোগ থাকে বলে মনে করে কমিটি।

জানা গেছে, কমিটি প্রতিবেদনে বেশকিছু সুপারিশ করছে। এগুলোর মধ্যে আছে-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০১২ সালের কোচিং নীতিমালা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা। স্কুল-কলেজে অভ্যন্তরীণ প্রশ্ন প্রণয়নে মডারেশন কমিটি গঠন করা, যাতে বোর্ডের নিয়ম সামনে রেখে প্রশ্নপত্র তৈরি হয়। যারা ফেল করবে তাদের কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করা। আত্মমর্যাদায় আঘাত লাগে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমন আচরণ না করা। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে দুজন করে শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিয়ে মনো-সামাজিক পরামর্শ দেওয়ার উপযোগী করা এবং দীর্ঘমেয়াদে প্রতিষ্ঠানে একজন করে পূর্ণকালীন মনস্তত্ত¡বিদ নিয়োগ করা।


সর্বশেষ সংবাদ