নীতিমালা লঙ্ঘন করে কেন্দ্র সচিব হওয়ার অভিযোগ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে, সাংবাদিককে হুমকি 

অভিযুক্ত মাহেদুল আলম
অভিযুক্ত মাহেদুল আলম  © টিডিসি ফটো

সংবাদ প্রকাশের জেরে রংপুরের মিঠাপুকুরে সাংবাদিককে হাঁটু ভেঙ্গে পঙ্গু করে দেয়ার হুমকিদাতা অধ্যক্ষ মাহেদুল আলমের বিরুদ্ধে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা পরিচালনা সংক্রান্ত নীতিমালা লঙ্ঘন করে কেন্দ্র সচিব হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট এসএসসি পরীক্ষার (২০২৫) পরিচালনা সংক্রান্ত নীতিমালা অনুযায়ী কোন শিক্ষক অথবা কোন কর্মকর্তার ছেলে/মেয়ে/পোষ্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের কোন কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলে তিনি কেন্দ্র সচিব হতে পারবেন না। 

এদিকে চলমান এসএসসি পরীক্ষায় নকল সরবরাহের সংবাদ প্রকাশের জেরে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের রংপুর প্রতিনিধিকে হাঁটু ভেঙ্গে পঙ্গু করে দেওয়ার হুমকিদাতা পায়রাবন্দ গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাহেদুল আলমের মেয়ে চলমান এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও তিনি তথ্য গোপন করে নীতিমালা লঙ্ঘন করে কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন।

জানা যায়, মাহেদুল আলমের মেয়ে মোছা. মিসরাত জাহান রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে দিনাজপুর বোর্ডের আওতাধীন বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। যার রোল নং- ১৯০১৭১। সেই তথ্য গোপন করে এসএসসি পরীক্ষা পরিচালনা সংক্রান্ত নীতিমালা লঙ্ঘন করে চলতি এসএসসি পরীক্ষায় কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যক্ষ মাহেদুল আলম।

বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের  অধ্যক্ষ মো. জাহাঙ্গীর আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মাহেদুল আলমের কন্যা মিসরাত জাহান নামের শিক্ষার্থী ক্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে আমার প্রতিষ্ঠানের ২০৯ নম্বর রুমে পরীক্ষা দিচ্ছে।

এ বিষয়ে মিঠাপুকুর উপজেলার শঠিবাড়ি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হরেন্দ্রনাথ সাহা জানান, আমার মেয়ে মিঠাপুকুর কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা দেয়ায় আমি এবার কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব পালন করছি না। এর আগে শুকুরেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম ও রাণীপুকুর উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহেল কাফির সন্তান পরীক্ষার্থী থাকায় তারা কেন্দ্রসচিবের দায়িত্ব পালন করেনি।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড দিনাজপুর এর উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. কামরুজ্জামান পাইকাড় জানান, সংশ্লিষ্ট বোর্ডের আওতাধীন কোন কেন্দ্রে সন্তান পরীক্ষার্থী থাকলে সেই ব্যক্তির ওই বোর্ডের আওতাধীন কোথাও কেন্দ্র সচিব  হওয়ার কোন সুযোগ নেই। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে থেকে চিঠি পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কেন্দ্রসচিব পদ হতে অব্যাহতি দেয়া হবে। একই সাথে পরীক্ষা পরিচালনা বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউএনও/ডিসি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।

মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিকাশ চন্দ্র বর্মণ জানান, মাহেদুল আলম তথ্য গোপন করে কেন্দ্র সচিব হওয়ার বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, এর আগে গত সোমবার (২১ এপ্রিল) বিকেলে “চুক্তিতে নকল সরবরাহের প্রতিযোগিতা এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে” শিরোনামে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রচারিত হয়। সংবাদটিতে চলমান এসএসসি পরীক্ষায় ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, গণিত, রসায়ন, পদার্থ ও জীব বিজ্ঞানসহ ছয়টি বিষয়ের প্রতিপত্রে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার চুক্তিতে পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতি গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাহেদুল আলমের যোগসাজশে ওই প্রতিষ্ঠানের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হায়দার, অলি, রায়হান, সোহাগীকে দিয়ে প্রতি রুমে উত্তরপত্র সরবরাহ করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে সংবাদ প্রচারের পরেই ওইদিন সন্ধ্যায় কেন্দ্রসচিব অধ্যক্ষ মাহেদুল আলম মুঠোফোনে সাংবাদিক খন্দকার রাকিবুল ইসলামকে হাঁটু ভেঙ্গে পঙ্গু করে দেওয়ার হুমকিসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এছাড়াও ওই রিপোর্টের জন্য সাংবাদিকদের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেওয়ার হুমকি প্রদান করে। এ ঘটনায় হুমকির কল রেকর্ড বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে তীব্র সমালোচনা সৃষ্টি হয় ও সারাদেশের গণমাধ্যমকর্মী এবং সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ অভিযুক্ত অধ্যক্ষকে অপসারণের দাবি জানান।


সর্বশেষ সংবাদ