উচ্চশিক্ষায় আইসল্যান্ড হতে পারে আপনার পছন্দের দেশ

আইসল্যান্ড
আইসল্যান্ড   © সংগৃহীত

ইউরোপের একটি অন্যতম উন্নত দেশ আইসল্যান্ড। এটি স্কেন্ডেনিভিয়াম দেশগুলোর অন্তর্ভুক্ত। আইসল্যান্ডের সমৃদ্ধ সামাজিক অবকাঠামো ও শক্তিশালী অর্থনীতির পাশাপাশি আইসল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থাও বেশ উন্নত। তাদের রয়েছে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়। আইসল্যান্ডে মূলত সরকারি এবং বেসরকারি দুই ধরনেরই বিশ্ববিদ্যালয় আছে। শিক্ষার্থীরা চাইলেই যেকোনোটাই অ্যাডমিশন নিতে পারে। অন্যান্য দেশের তুলনায় আইসল্যান্ড এর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তুলনামূলক কম খরচে পড়াশুনা করা যায়।

বর্তমানে আইসল্যান্ডে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রধান কারণ আইসল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিনা বেতনে বা স্বল্প বেতনে  উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। পড়াশুনার পাশাপাশি পার্টটাইম কাজের সুযোগ। আর যেহেতু আইসল্যান্ডের অর্থনীতি অনেক শক্তিশালী তাই সহজেই শিক্ষার্থীরা পার্টটাইম কাজ পেয়ে যায়। তাছাড়া আইসল্যান্ডে আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যাচেলর, মাস্টার ও পিএইচডি ডিগ্রি নিতে পারবেন। পাবেন বিভিন্ন শর্ট কোর্স ও ডিপ্লোমা করার সুযোগ। তুলনামূলক কম খরচেই আইসল্যান্ড থেকে পড়াশুনা শেষ করে আসতে পারবেন। আবার পড়াশুনা শেষে আপনি আইসল্যান্ডে ৬ মাসের জব সিকিং ভিসা পাবেন। যা দিয়ে আপনি সহজেই চাকরি খুঁজে নিতে পারবেন। পাশাপাশি পাবেন স্থায়ী ভাবে বসবাসের সুযোগ। সবদিক বিবেচনায় আপনার উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আইসল্যান্ড হতে পারে পছন্দের একটি দেশ।

আইসল্যান্ড সাধারণত বছরে ২টি সেশনে আবেদন করা যায়। বছরে সাধারণত দু’টি সেমিস্টার হয়ে থাকে। ফল সেমিস্টার: আগস্ট থেকে ডিসেম্বর, স্প্রিং সেমিস্টার: জানুয়ারি থেকে মে। কিছু কিছু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বছরে দুইবারও ভর্তির সুযোগ দেয়। ব্যাচেলর ডিগ্রির মেয়াদ সাধারণত তিন থেকে চার বছর, মাস্টার ডিগ্রির মেয়াদ এক থেকে দুই বছর এবং ডক্টরাল ডিগ্রি তিন বছর মেয়াদি হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন : বৃত্তি নিয়ে মিসরে পড়ার সুযোগ

আইনতভাবে স্বীকৃত আইসল্যান্ডে সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৩টি প্রাইভেট এবং বাকি ৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৮০০০ এর মধ্যে ৫% শিক্ষার্থী বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো---

  1. অ্যাগ্রিকালচার ইউনিভার্সিটি অব আইসল্যান্ড (Agricultural University of Iceland)
  2. বিফরোস্ট ইউনিভার্সিটি (Bifröst University)
  3. হোলার ইউনিভার্সিটি কলেজ (Holar University College)
  4. আইসল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব দ্যা আর্ট (Iceland University of the Arts)
  5. রায়েকজাভিক ইউনিভার্সিটি (Reykjavik University)
  6. ইউনিভার্সিটি অব অ্যাকুরেরি (University of Akureyri)
  7. ইউনিভার্সিটি অব আইসল্যান্ড (University of Iceland)

আবেদনের যোগ্যতা:

১. স্নাতকে আবেদনকারীকে একটি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সমমান শেষ হতে হবে। অবশ্যই ভালো একাডেমিক ফল থাকতে হবে ।

২. স্নাতকোত্তরে আবেদনকারীর ব্যাচেলর ডিগ্রি থাকতে হবে।

৩. স্নাতক এর ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষার দক্ষতার মানদণ্ড থাকতে হবে, IELTS- এ সাধারণত  ৫.৫ থেকে ৬.০ পয়েন্ট পেতে হবে অথবা TOEFL’র CBT-তে ২১৩ বা IBT-তে ৭৯ থেকে ৮০ পয়েন্ট হতে হবে।

৪. স্নাতকোত্তর এর জন্য ইংরেজি ভাষার দক্ষতার মানদণ্ড থাকতে হবে,   IELTS-এ সাধারণত ৬.০ থেকে ৬.৫ পয়েন্ট পেতে হবে অথবা TOEFL’র CBT তে ২১৩ থেকে ২৩৭ বা IBT তে ৭৯ থেকে ৯৩ পয়েন্ট হতে হবে।

৫. আইসল্যান্ডে কোনও কেন্দ্রীয় ভর্তির ব্যবস্থা নেই এবং আবেদনকারীদের অবশ্যই সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে হবে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য আবেদনের সময়সীমা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে পৃথক হলেও সাধারণত Spring পড়ে।

৬. কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় নির্দিষ্ট আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আবেদন ফিও প্রয়োজন হয়।

প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্রসমূহ:

  1.  শিক্ষাগত কাগজপত্র: সনদপত্র, নম্বরপত্র, প্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রশংসাপত্রের সত্যায়িত ফটোকপিসহ মূল-কপি।
  2. পাসপোর্ট: পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ১ বছর থাকতে হবে এবং পেশা, জন্ম তারিখ ও অন্যান্য সকল তথ্যের সাথে
  3. শিক্ষাগত কাগজ পত্রের মিল থাকতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রমাণপত্র বা অফার লেটার।
  4. আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণপত্র।
  5. টিউশন ফি’র ব্যাংক ড্রাফট: বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে টিউশন ফি ভিন্ন হয়ে থাকে।
  6. ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণপত্র ।
  7. পুলিশ ছাড়পত্র বা ক্লিয়ারেন্স ।

টিউশন ফি: ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় আইসল্যান্ডে টিউশন ফি অনেক কম।  আইসল্যান্ডের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়তে কোনো ধরনের টিউশন ফি দিতে হয় না। শুধুমাত্র বছরে একবার রেজিস্ট্রেশন ফি দিতে হয়। তবে  বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কিছু কোর্সের ক্ষেত্রে টিউশন ফি দিতে হয়, তবে তা ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম।

আপনি চাইলে স্কলারশিপ নিয়েও পড়তে যেতে পারেন আইসল্যান্ডে। সাধারণত আইসল্যান্ড শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতিবছর বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপ অফার করে থাকে। স্কলারশিপগুলো শিক্ষার্থীদের যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রদান করা হয়। ভর্তি ও স্কলারশিপ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যের জন্য সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে হবে আপনাকে।

আইসল্যান্ডে যে সব বিষয় পড়ানো হয়:

অ্যাকাউন্টিং, অডিটিং, বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ফিন্যান্স, এইচআরএম, মার্কেটিং, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস, প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট, স্ট্রেটেজিক ম্যানেজমেন্ট, ল, পাবলিক হেলথ, পাবলিক ইন্টারন্যাশনাল ল, ইঞ্জিনিয়ারিং, ফার্মেসি, ফিজিক্স, নিউট্রিশন এন্ড ফুড সায়েন্স, ম্যাথম্যাটিকস, বায়োলজি, ইকোনমিক্স, জিওগ্রাফি পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ন্যাচারাল হিস্ট্রোরি, পলিটিক্স, প্রোপার্টি ম্যানেজমেন্ট, ওয়েব ডিজাইন, নার্সিং, মেডিসিন সায়েন্স, ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালটি, স্পোর্টস সায়েন্স, মাল্টিমিডিয়া ফ্যাশন, ফিল্ম, ফাইন আর্ট, অডিও ইঞ্জিনিয়ারিংসহ আরও বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ